করোনা আতঙ্কেও পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ ডেঙ্গু প্রতিরোধের
একদিন পরেই শুরু হচ্ছে এপ্রিল মাস। সাধারনত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহই ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশার প্রজননের মোক্ষম সময়। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশগুলো যখন করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাবু তখন দেশজুড়ে আবার দৌড়াত্ম্য বেড়েছে মশা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই মশাগুলোর অধিকাংশই এডিস মশা। ছুটিকালীন সময়ে নেই মশা মারার তেমন কেনো বিশেষ পদক্ষেপও। ফলে করোনা না হলেও ডেঙ্গু দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। মশা নিধনে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
আজ মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সারাদেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের দিকে বেশি নজর দিতে গিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যেনো মশা নিধনের কথা ভুলে না যায়।
তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) রাতে ঘুমাতে গিয়ে দেখলাম মশারা সঙ্গীত চর্চা করছে। মশার গুনগুন শুনলাম। অর্থাৎ মশা গুনগুন করে কানে কাছে গান গাচ্ছিলো। আস্তে আস্তে মশা বাড়বে। এরপর আসবে ডেঙ্গু। এর জন্য তিনি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সিটির মেয়রদের মশা নিধনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই মশারি টানিয়ে ঘুমান না। মশার ওষুধ দেন কয়েল জ্বালান কিন্তু মশারি টানান না। করোনার সঙ্গে যদি ডেঙ্গু আসে তাহলে আরও বিপদ হবে। এজন্য প্রত্যেককে সুরক্ষিত হয়ে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু যে যেখানে থাকেন সেখানেই নয় আশেপাশের পরিবেশও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ডেঙ্গুবাহী মশা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটও। এক সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এখন জ্বর হলেই আমরা সবাই তাকে কোভিড-১৯ ভাবছি। কিন্তু একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, এখন ডেঙ্গুর (এডিস মশার) প্রজননের জন্য উর্বর সময়। আমরা যারা বাড়িতে আছি বাড়ির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে তাকাই। বাড়ির চারপাশে যেনো পানি জমে না থাকে। বৃষ্টিপাত শুরু হলেই কিন্তু আমাদের ডেঙ্গুর আশংকা তৈরি হবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য আমরা এখন থেকেই সক্রিয় হই। যে সব জায়গায এডিস মশার ডিম থাকতে পারে এগুলো পরিষ্কার করতে হবে। শুধু কোভিড-১৯ নিয়ে চিন্তিত না হয়ে অন্য রোগ যেগুলো বাংলাদেশের সারা বছরই থাকে সিজনে বাড়ে সেগুলোতে নজর দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারী থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ২৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬৯ জন। এমতাবস্থায় এখনই পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, এডিস মশা 'ভদ্র মশা' হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে। এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রসাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে। এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। কোথাও যাতে পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে। এ পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। এখন যেহেতু করোনার আতংক চলছে দেশজুড়ে সেহেতু ডেঙ্গু প্রতিরোধেও জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে গত বছরের মতো এ বছরও ডেঙ্গু মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।