বঙ্গবন্ধুর খুনী মোসলেহউদ্দীনের ডিএনএ টেস্ট হচ্ছে ঢাকায়
তুহিন সানজিদ, নিউ ইয়র্ক:
গোয়েন্দা হেফাজতে থাকা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যাকারী নৃশংস খুনী রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দীনের ডিএনএ টেস্ট হচ্ছে ঢাকায়। শতভাগ পরিচয় নিশ্চিত হতে তার সন্তানদেরও ডিএনএ টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছে দু’দেশের গোয়েন্দা সূত্র।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে মোসলেহউদ্দীন। তবে বেশিরভাগ সময়ই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করে ভিন্ন তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছে। দু’এক দিনের মধ্যে তার সন্তানদেরও ডিএনএ টেস্ট করা হবে। স্ত্রী সন্তানদের সাথে মোসলেহউদ্দীনের মুখোমুখী জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার ভারতের কাউন্টার টেররিজম এজেন্সির হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর খুনী মোসলেহউদ্দীনকে টানা ৪৮ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পরিচয় অনেকটা নিশ্চিত হবার পর রোববার গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে ৩০ কিলোমিটার দুরে বিথারী থানার বেরি গোপালপুর এবং বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার কাকডাঙ্গা এলাকার একটি অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে গোয়েন্দাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসময় অতি গোপনীতার সাথে দু’দেশের গোয়েন্দারা আটক মোসলেহউদ্দীনকে যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে। এরপর সেখান থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে সে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করে। এরপর তার পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ভারতে আটক থাকা অবস্থায় পরিচয় নিশ্চিত হতে ’সফস্টিকেটেড ফেস ডিটেকটিভ’ প্রযুক্তিরও সহায়তা নেয়া হয়।
তবে আটক ব্যাক্তি যদি মোসলেহউদ্দীন না হয় এবং তার পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারলে ওই ব্যাক্তির আবার ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে একইভাবে গোপনীয়তার সাথে ফেরৎ দিতে হবে বলে দু’দেশের গোয়েন্দাদের মধ্যে এক অলিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বাড়ির সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজহাতে গুলি করে হত্যা করে এই মোসলেহউদ্দীন। ফাঁসির দ- মাথায় নিয়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে ছিলেন এই ঘাতক।
বঙ্গবন্ধুর আরেক আত্মস্বীকৃত খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ ৬ এপ্রিল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হবার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেহউদ্দীন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। এসময় গোয়েন্দারা মোসলেমউদ্দীনের স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে তার স্ত্রী সন্তানরা মোসলেহউদ্দীনের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করে।
তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহায়তা চায়। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের কাউন্টার টেররিজম পুলিশের একটি বিশেষ টিম অতি গোপনীয়তার সাথে মোসলেহউদ্দীনকে আটক করে।
গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায় রিসালদার মোসলেহউদ্দীন ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে আটকের সংবাদটি সর্বপ্রথম নিউ ইয়র্ক মেইল প্রকাশ করে। ”বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যাকারী রিসালদার মোসলেমউদ্দীন ভারতে আটক” শিরনামে এক্সক্লুসিভ রিপোর্টটি প্রকাশের পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।