বাংলাদেশে অঘোষিত লকডাউনের এক মাস
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউনের এক মাস শেষ হয়েছে। সরকার ঘোষিত এ সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে অর্থনৈতিক স্থবিরতা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে করোনার সংক্রমণও। ফলে শারীরিক দুরত্ব নিশ্চিতের এই পদ্ধতি আপাত: অকার্যকর ছিলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার সাধারণ ছুটির এক মাস শেষ হলেও করোনা ভাইরাসের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ ছুটি কয়েকদফায় বাড়িয়ে ৫ মে করা হয়েছে। কিন্তু যেভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এতে করে এই সময়ের মধ্যে এটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ একেবারে অসম্ভব বলে দাবি করছেন চিকিৎসকরা। তাই এ ছুটি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ভাষণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করেন তিনি। তবে এসময় কাঁচা বাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে দিন দিন করোনার সংক্রমণ বাড়ায় সরকার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় পাঁচ দফা ছুটি বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এতে করে দিনমজুর থেকে শুরু করে নিন্মবিত্ত মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। রাস্তায় রাস্তায় তারা ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ এ সময়ে দেশে করোনা আক্রান্ত ও এতে মৃত্যুর সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।
শনিবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৪০ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৯৮ জনে। এখন পর্যন্ত দেশের ৬০টি জেলায় এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দিন-রাত কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রশাসনের সদস্যরা।
এদিকে করোনায় দেশ কার্যত লকডাউন থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বড়, ক্ষুদ্র, মাঝারি সব স্তরের ব্যবসাই ক্ষতির মুখে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওযা মানুষ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের পোশাক শিল্প। করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের তৈরি পোশাকখাতের এক হাজার ১৪৬টি কারখানায় ৩.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা। এসব কারখানা ২২ লাখ ৭০ হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। উদ্ভুত অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
করোনা পরিস্থিতি ও সরকারের প্রণোদনা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যেই বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানি, ট্রান্সপোর্ট খাত ও ট্যুরিজম খাতে প্রভাব পড়েছে। করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে সময় নিয়ে হলেও দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশাবাদ তাদের।
তবে লকডাউনের মধ্যে বেকার হয়ে পড়া অসহায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ত্রাণের আশায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিড় করছেন। লকডাউনের শুরুর দিকে বেশ কিছু সংগঠন অসহায় মানুষকে ত্রাণ দিতে দেখা গেলেও, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব তৎপরতা কমে এসেছে। সব মিলিয়ে সংকটের মধ্য দিন কাটছে অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর।