শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস প্রযুক্তিগত ত্রুটি, যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল বন্ধ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ২০২৪ সালে হতাহত ৪ লাখ ৩০ হাজার রুশ সেনা, দাবি ইউক্রেনের নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 29 April, 2020 21:51

পার্বত্য অঞ্চলে নিষিদ্ধ ‘‘আরাকান আর্মির’’ তৎপরতায় আতঙ্ক

পার্বত্য অঞ্চলে নিষিদ্ধ ‘‘আরাকান আর্মির’’ তৎপরতায় আতঙ্ক
মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন আরাকান আর্মি। ছবি: সংগৃহিত

বিশেষ প্রতিনিধি: 

মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ‘‘আরাকান আর্মির’’ তৎপরতায় নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলে। চিঠি দিয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ আর দুর্গম পাহাড়ে গোপন প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় নতুন ঘাঁটি গড়েছে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপটি। এসব এলাকায় ভারী অস্ত্রের মজুদও করেছে তারা। ভয়ে অনেক উপজাতি তরুণ ও যুবক যোগ দিয়েছে এই গ্রুপটির সাথে। ইতিমধ্যে সেনাবহিনী ও সীমান্তরক্ষী বিজিবির টহল দলের উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা। করছে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা।

গত সোমবার বান্দরবানের থানচি বাজারে ২শ’ দোকান ও কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিষিদ্ধ ঘোষিত আরাকান আর্মির পরিকল্পিত নাশকতা বলে মনে করছে স্থানীয়রা। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও এ ধরনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় আরাকান আর্মি জড়িত বলে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অনলাইন পোর্টাল দি ইষ্টার্নলিংক।

স্থানীয়রা জানায়, ভোরে হঠাৎ ক‌রে বাজারে আগুন জ্বলে উঠে। আগুন দ্রুত ছ‌ড়িয়ে পড়ে পুরো বাজারে। এতে থান‌চি বাজারের মু‌দি দোকান, ক‌ম্পিউটা‌রের দোকানসহ দুই শতা‌ধিক দোকান এবং আশপা‌শের কয়েক‌টি বসতবা‌ড়ি পুড়ে ছাই যায়। তবে স্থানীয়দের তথ্যমতে, এই অঞ্চলে আরাকান আর্মির ঘাঁটি রয়েছে।  

ইস্টার্নলিংক গত সপ্তাহে আরাকান আর্মি একটি বিশাল অস্ত্রের চালান এনেছে বলেও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরপর থানচির আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পর্যাপ্ত টহল শুরু করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, থানচির কাছে সান্দাকের (এমআরও) এ-এর একটি ছোট ঘাঁটি রয়েছে যা উইকুং সৈকত থেকে আনা অস্ত্রগুলোকে মজুত করতে ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে গত ২১ ফেব্রুয়ারী একটি জাহাজ থেকে এই অস্ত্র ফেলে দেয়া হয়। দি ইস্টার্নলিঙ্কের সূত্রটি জানায়, ‘আরাকান আর্মির দুই স্থানীয় সদস্য ভোর ৫ টার দিকে একটি কাপড়ের দোকান এবং একটি মুদি দোকানে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

সূত্রটি বলছে, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল এলাকার সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়া, যারা সান্দাকের এ ঘাঁটিটি বন্ধ করতে চাইছিল। যাতে তারা ঘাঁটিটি ভেঙে ফেলতে এবং অবশিষ্ট অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য সময় পায়। তাদের ঘাঁটির আশপাশ থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে সরানোই এই নাশকতার লক্ষ্য। 

মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের জন্য ২০০৯ সালে গঠিত হয় আরাকান আর্মি। এই সংগঠনটি মূলত ‘‘ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান’’ এর সশস্ত্র শাখা। 

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রত্যয়ে এই সংগঠনটির জন্ম হলেও আস্তে আস্তে তারা বাংলাদেশে ঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করে। ২০১৪ সালে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সদস্য সংগ্রহ করার জন্য মিয়ানমারের ভাষায় প্রকাশ্যে চিঠি দেয়। হাতে লেখা সেসব চিঠি অনেক পাহাড়ি যুবকের বাড়িতেও পাঠানো হয়। পার্বত্য অঞ্চলের একটি উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে তারা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ঘাঁটি করে গোপনে প্রশিক্ষণ দিতে থাকে নতুন রিক্রুট যোদ্ধাদের।  

২০১৫ সালে আরাকান আর্মির সশস্ত্র সদস্যদের হামলায় একজন বিজিবি সদস্য নিহত হয় হয়। ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর হামলা চালায় এই বাহিনী। ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট একই দিনে রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীর উপর দু’দফা হামলা চালায়। এ বছর জুন মাসে নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ পরদিন গুলি করে আরও পাঁচজনকে হত্যাকাণ্ডের সাথে আরাকান আর্মি জড়িত বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এধরনের অনেক হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তারা।

২০১৭ সালে আরাকান আর্মির শীর্ষ নেতা রেনিন সোয়ে-সহ কয়েকজন নেতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়। গোপনে তাদের মিয়ানমার সরকারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এমন ধারণার কারণে তারা সেনাবাহিনীর উপর আক্রমন শুরু করে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় সশস্ত্র এই সংগঠনটি শক্ত ঘাঁটি তৈরি করেছে। বিদেশ থেকে জাহাজে করে আসছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। আর এসব অস্ত্র সেনাবাহিনীর উপর হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অস্ত্র আমদানির নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই অঞ্চলকে। যা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি হুমকি।

উপরে