করোনা আতংকের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান'
দেশজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের দৌরাত্ম্যে জনজীবন বিপর্যস্ত তখনি দুঃসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
বুধবার (২০ মে) দুপুরের পর থেকে বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ যেকোনও সময় বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে সুপার সাইক্লোন আম্পান।
সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে এটি। এর প্রভাবে বুধবার মোংলা ও পায়রা বন্দরে দেওয়া হবে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। যদিও আগে বলা হয়েছিল মঙ্গলবার (১৯ মে) দিবাগত রাত থেকে এই ঝড় উপকূলের দিকে আসতে শুরু করবে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আম্পানের বেশি প্রভাব পড়বে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রায়। এসব এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।দেশে 'আম্পান'র বর্তমান অবস্থা জানিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের মহাপরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আম্পানের আগের পূর্বাভাস পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা বলছি বুধবার দুপুরের পর বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ আম্পান বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, এরইমধ্যে দেশের আবহাওয়ায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ঢাকাসহ উপকূলের জেলাগুলোতে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। আম্পান যত এগিয়ে আসবে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টির পরিমাণ তত বাড়বে। তিনি জানান, আম্পান এখনও সাগরেই আছে, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে আছে। খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, মোংলা ও পায়রা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, ওই জেলাগুলোর ওপর দিয়ে আম্পান বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। এজন্য মোংলা ও পায়রায় এখন ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ঝুঁকি কম। সেখানে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আগামীকাল মোংলা ও পায়রায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত উঠে যাবে। কারণ, এটি এখনও সুপার সাইক্লোনই আছে। একটুও গতি কমেনি।
এটি মঙ্গলবার রাত ৯টায় (১৯ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে আগের মতোই ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। জেলেদের জন্য সতর্কতায় বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।