ডা. ফেরদৌস খন্দকার মোসতাকের ভাগিনা: তবে এই মোসতাক বঙ্গবন্ধুর খুনী মোশতাক নয়!
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউ ইয়র্ক:
বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ও গুজব নিয়ে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন নিউ ইয়র্কের আলোচিত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার। বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোশতাকের ভাগিনা-এমন মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি পত্রিকার রিপোর্ট স্যোসাল মিডিয়ায় এ ধরনের মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।
জানা গেছে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের মামার নাম মোসতাক আহমেদ এটা ঠিক। তবে এই মোসতাক বঙ্গবন্ধু খুনী মোশতাক নয়। ফেরদৌস খন্দকারের মামা এখনও বেঁচে আছেন এবং পরিবার নিয়ে আমেরিকার বোস্টন শহরের বসবাস করছেন। এই মোসতাকের পাসপোর্টের কপিও নিউ ইয়র্ক মেইলের কাছে আছে।
টেলিফোনে ডা. ফেরদৌসের মামা মোসতাক আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টা শুনে হেসে উঠেন। তিনি নিউ ইয়র্ক মেইলকে বলেন, ডা. ফেরদৌস খন্দকারের মা আনোয়ারা বেগম তাদের ছয় ভাইয়ের একমাত্র বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তার বাবার নাম আব্দুল আলী (ফেরদৌসের নানা)। ১৯৮৪ সাল থেকে মোসতাক আহমেদ স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করছেন এবং বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের বোস্টন শহরে ব্যবসা করেন। তিনি জানান, তার এক ভাই মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোসতাক বা অন্য কোনো খুনীদের সাথে পারিবারিক বা আত্মীয়তার সূত্রেও কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই এবং অতীয়তেও ছিল না। যারা এসব গুজব রটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবি জানান তিনি।
ডা. ফেরদৌস খন্দকার পুরো ব্যাপারটাকে গুজব হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী মোসতাক বা খুনীদের কেউই আমার কোনো ধরনের আত্মীয় না বা তাদের কারো সাথে আমার বা আমার পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই, কখনও যোগাযোগ ছিলও না। দীর্ঘ দিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। তাই বঙ্গবন্ধু খুনীদের মনেপ্রাণে ঘৃনা করি।
তিনি বলেন, ফেসবুক ও কিছু অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, আমি নাকি খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা কিংবা খুনি কর্ণেল রশিদের খালাতো ভাই। অথচ পুরো বিষয়টি কাল্পনিক। আমার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। কুমিল্লায় বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের বাড়ি। কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি সনামধন্য জেলা।
কুমিল্লায় বাড়ি হলেই কেউ খুনি মোশতাকের ভাতিজা কিংবা কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই হয়ে যায় না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই দুই খুনির সাথে আমার পারিবারিক কিংবা আদর্শিক কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, আমার শিক্ষা এবং মেধা মানুষের কাজে লাগাতে দেশে এসেছি। সেটা যদি অপরাধ হয় আমাকে আপনারা সবাই আামাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে অপমান করবেন না। এটা আমার প্রাপ্য না।
টেলিফোনে আলাপকালে তিনি তিনি নিউ ইয়র্ক মেইলকে বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করেছেন আমিও চাই তদন্ত হোক এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন হোক। যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে সে বিষয়েও তদন্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত মাউন সাইনাই হাসপাতালের এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ছাত্রজীবনে আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আমার আদর্শ বঙ্গবন্ধু। আমাকে কারা আওয়ামীলীগ বিরোধী বানানোর চেষ্টা করছে সে বিষয়ে তদন্ত করে জাতির সামনে সবকিছু স্পষ্ট করা দরকার। আমার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা কথা লেখা হচ্ছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি। সেই সাথে প্রমাণের জন্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি।
ডা. ফেরদৌস দু:খ প্রকাশ করে বলেছেন, দেশ ও দেশের মানুষের টানে করোনার দু:সময়ে এসেছিলাম মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তিনি বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতেই আমি মানুষের পাশে থাকবো।
তিনি আরো বলেন, যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে আর কোনো বাংলাদেশি ডাক্তার দেশে এসে মানুষের চিকৎসা সেবা দেবার জন্য দেশে আসবে না। এ ঘটনায় সবাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী ড. আবু সিদ্দিকী বলেছেন, চিকিৎসকদের কোনো জাত হয় না। ডা. ফেরদৌস খন্দকার একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক সেজন্যই এই দুঃসময়ে নিজের পরিবার রেখে ঝুঁকি নিয়ে দেশে গেছেন মানুষের সেবা করার জন্য। নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনি যে সেবা দিয়েছেন সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি মানুষের জন্য যা করেছেন তাতে তাকে সব নোংরা রাজনীতির উর্ধ্বে রাখা উচিৎ। নিজের দেশে এমন একজন দেশপ্রেমিক অভিজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিকমানের চিকিৎসককে এভাবে অপমানিত হতে হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। বিশ্ববিখ্যাত জনসন এন্ড জনসন কোম্পানীর সাবেক এই চিফ সাইন্টিস্ট আরো বলেন-বাংলাদেশ যদি তাকে কাজে লাগাতে পারে তাহলে দেশ উপকৃত হবে। তিনি আরো বলেন, ফেরদৌস খন্দকারের মতো আন্তর্জাতিকমানের আরো কয়েকজন চিকিৎসক যদি বাংলাদেশে গিয়ে এই দুঃসময়ে চিকিৎসাসেবা দিতে পারে তাহলে দেশের চিকিৎসা সেবার চিত্র পার্টে যাবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বিখ্যাত ব্লগার অমি রহমান পিয়াল তার ফেসবুক স্টাটাসে লিখেছেন-” সত্য প্রকাশ পাবেই, তাই ভয়ের কিছু নাই। চমেক ছাত্রলীগের আমরা যারা তোরে পাইছি তারা পাশে আছি।”
পিয়াল আরো লিখেছেন-”ভাই আমরা কেউই কারো বাবা নানার পরিচয় জাইনা রাজনীতি করার সময় পাই নাই। আমার ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট যিনি ছিলেন তার বাবার নাম জানার সুযোগ হয় নাই, কারণ প্রয়োজন হয় নাই, তেমনি তিনিও আমার মামার নাম জানেন না, কারণ দরকার হয় নাই। তখন দরকার ছিলো মিছিলের তখন দরকার ছিলো মাঠে পাশে থাকা। আজকে দুম কইরা যদি শুনি আমার প্রেসিডেন্ট গোলাম আজমের নাতি, আমি বড়জোর অবাক হইতে পারি কারণ আমি জানতাম না। এখন আমি কি করতে পারি? ক্ষমা চাইতে পারি ভাই আমারে মাফ কইরা দেন আমি তার নানার নাম জানতাম না। কিংবা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সময় তার পাশে দাড়ায়া তারে ডিফেন্ড করতে পারি যেহেতু উনি ছাত্রলীগে আমার সহযোদ্ধা। ফেরদৌসের ক্ষেত্রে আমি তাই করতেছি। যতক্ষণ না প্রমাণ হয় সে মোশতাকের ভাইগ্না কিংবা রশীদের খালাতো ভাই, ততক্ষণ আমি তারে ডিফেন্ড করবো। এরপর যদি সেইটা প্রমাণ হয়, আমি স্যরি বইলা তার পাশ থেকে সরে যাবো কারণ আমি এই পরিচয় জানতাম না। এইখানে আমার আর কোনো ভূমিকা নাই।”
অমি রহমান পিয়াল লিখেছেন- ডাক্তার ফেরদৌস মোশতাকের ভাগিনা, কথাটা সত্য। মোশতাক আহমেদ তার আপন মামা। তবে সে বঙ্গবন্ধুর খুনী মোশতাক না। সে বোস্টনে থাকে, এখনও জীবিত। তবে যেহেতু ফেরদৌসের নামেও খন্দকার আছে, নামে নামে যমে টানে...
চট্টগ্রাম মেডিকেলের তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও চমেকসুর ভিপি ডা. নাসিম কাজী টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানিয়েছেন, ডা. ফেরদৌস খন্দকার মেডিকেলে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো। সৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আর শিবিরের বিরুদ্ধে আমরা মাত্র যে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা জীবন বাজি রেখে রাজনীতি ও আন্দোলন করেছি তার মধ্যে অন্যতম একজন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। তার বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করেন।