সেনাবাহিনী ও নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে
তুহিন সানজিদ, নিউ ইয়র্ক:
নির্বাচনকে অবৈধ, সেনাপ্রধান, সেনাবাহিনী ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে। ডিজিটাল আইনেও তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে একাধিক সূত্রে। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার বিতর্কিত মন্তব্যে সরকার ও সেনাবাহিনীতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানিয়েছেন, সরকার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। তার বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে দু’একদিনের মধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত আসছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন তথ্যও জানা গেছে। তিনি তার কাছের মানুষদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে তার বাসার আশেপাশে সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কড়া নজরদারি করছেন। দেশী-বিদেশী কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থাকেও তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক কণক সরোয়ার এর ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ম পদাতিক ডিভিশনের সাবেক জিওসি অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল হাসান সারওয়ার্দী।
আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, সেনাপ্রধানকে ভারতের গোয়েন্দারা ওই পদে বসিয়েছেন। তাদের অনুমোদনেই তিনি সেনাপ্রধান হয়েছেন। দেশের বড় ধরনের কোনো নিয়োগ, গোয়েন্দা সংস্থায় নিয়োগ, সেনাপ্রধান নিয়োগ সচিবের বদলি এগুলোকে তারা (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) মেনিপুলেট করে থাকে এবং ফিটলিস্ট দেয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “ বর্তমানে দেশের খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অবৈধ নির্বাচনের কারণে।” তিনি জোর দিয়ে বরেন, “আমি নিশ্চিত করে বলছি-বাংলাদেশে নির্বাচন মানে একটি প্রহসন। নির্বাচনের মাধ্যমে আর কোনোদিন সরকার পরিবর্তন হবে এটা অসম্ভব। বাংলাদেশের মানুষ আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবে না। এমন সব পদ্ধতি তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন- লোভ এবং লালসা এমন পর্যায়ে গেছে যে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ধ্বংশের পর্যায়ে। একটা লোক বেতন যা পায় তার চেয়ে কয়েকশ গুন বেশি টাকা উন্নয়নের নামে তাকে যদি পারসেন্টেজ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন, ১৪৭টি আইটেম নিয়ে ব্যবসা করে সেনাবহিনী। এজন্য কেন কি তার প্রফেসন, ফেলোফিলিংস অন্যের বন্ধুর জন্য মমতা দেখাবে। এখন আর সেই সেনাবাহিনী নেই। আনুগত্য কিনে নেয়া হয়েছে। ভোটের আগেই সৈন্যদেরকে টাকা পৌঁছে দেয়া, যে তোমার বাইরে যেতে হবে না। ডিউটি না করলেও এটা তোমার টাকা। “
এক-এগারোর সময় সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ ধরে টাকা অর্জন করেছে বলেও মন্তব্য করেন হঠাৎ আলোচনায় আসা সাবেক এই জেনারেল।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এসএমএস যখন কেউ পর্যবেক্ষণ করতে পারে তাহলে তো প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল নিরাপদ না। মোবাইলগুলো এই সশস্ত্র বাহিনী এবং সেনাবাহিনী রেকর্ড করে এবং টেপ করে অভিযোগ করে তিনি বলেন-”প্রধানমন্ত্রীকে আমি এসএমএস লিখে জানিয়েছি-গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার নিরাপত্তা নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি। আমি চাই আপনি আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।”
জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সাবেক এসএসএফ প্রধান বলেন-আমি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে শংকিত। যে কারা আসলে এগুলো চালায়? এটা কি ভারত? নাকি বাংলাদেশের কোনো বিশেষ একটি সিন্ডিকেট?
সেনাবাহিনীর সাবেক এই সর্বোচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার এসব বিতর্কিত মন্তব্যে সরকারের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেনাবাহিনীর মধ্যেও। তবে সরকার বা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্যোসাল মিডিয়ায় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা এবং সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলগের সিনিয়র এক নেতা টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানিয়েছেনে, সেনাপ্রধান না হতে পারা এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে থাকতে না পারার হতাশা থেকে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা এসব মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন মন্তব্য করছেন। একটি সুশৃংখল বাহিনীর সর্বোচ্চ পদস্থ সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে সেই বাহিনী এবং সরকার সম্পর্কে কতটুকু এবং কি ধরনের মন্তব্য করতে পারবেন সেটা নিশ্চয় তার জানা আছে। তাহলে জেনে-শুনে এ ধরনের কথা বলার পিছনে নিশ্চয় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। নাকি তাকে দিয়ে কোনো বিশেষ মহল এসব বলাচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল টেলিফোনে দি নিউ ইয়র্ক মেইলকে জানিয়েছেন, বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে দু’একদিনের মধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত আসছে। তিনি বলেন, “আমিও বিষয়টি শুনেছি। কোনো বিষয় নিয়ে তিনি হয়তো ক্ষুব্ধ ছিলেন সেকারণেই এসব কথা বলেছেন সেটা তার বক্তব্য থেকেই সেটা বোঝা যায়।”