হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করলেন আহমদ শফী
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা আহমদ শফী।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে মাদ্রাসার শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা নোমান ফয়জী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাওলানা নোমান ফয়জী জানান, এখন থেকে মাদ্রাসা পরিচালনা করবে শূরা কমিটি। আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব নুর ইসলামকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। সূরা কমিটি পরবর্তী সভায় নতুন মুহতামিম নির্ধারণ করবে।
যে কারণে বন্ধ হলো হাটহাজারী মাদ্রাসা: চট্টগ্রামের বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা আল্লামা শফী নিয়ন্ত্রিত হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আল্লামা শফীপুত্রের আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ, নানা অনিয়ম দুর্নীতিসহ হাটহাজারী মাদ্রাসাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তর করার অপেচেষ্টাসহ নানা অভিযোগের জের ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে।
গতকাল বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা থেকে আল্লামা শফীর ছেলে ও মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন বন্ধ না হওয়ায় পুরো মাদ্রাসাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
মাদ্রাসার আন্দোলনরত ছাত্র এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে আল্লামা শফীপুত্রের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছিলো। আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী পিতার পাশে থেকে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করে পুরো মাদ্রাসা নিজের আয়ত্বে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
বিশেষ করে আল্লামা শফীর পর আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীর অবস্থান থাকলেও বাবুনগরীকে কোনঠাসা করে সমস্ত ক্ষমতা নিজের করায়ত্ব করতেই আনাস মাদানী দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ ছাত্র-শিক্ষকদের বিতাড়িত করা হয়। বেশ কয়েকজনকে চাকরি থেকে ছাঁটাইও করা হয়। এতে মাদ্রাসায় বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঢাকার শাপলা চত্বর এবং বিভিন্ন আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও তাদের খোঁজ-খবর রাখা হয়নি হেফাজত আমিরের পক্ষ থেকে। এসব কিছুর জন্য এককভাবে দায়ী করা হয় আনাস মাদানীকেই।
সর্বশেষ আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিতব্য হাইয়াতুল উলিয়া এর অধীনে কওমি মাদ্রাসাগুলোর মাস্টার্স সমমানের পরীক্ষা নিয়ে মাদ্রাসায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন আনাস মাদানী।
এই পরীক্ষায় বাবু নগরীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ছাত্রদের পরিচয়পত্র না দেওয়া, ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন-হয়রানি এবং শিক্ষা সচিব মাওলানা আনাস মাদানীর হস্তক্ষেপে বিভিন্ন সময় ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এনে বুধবার বাদ জোহর থেকে শত শত ছাত্র মাদ্রাসা ঘিরে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
মূলত আনাস মাদানীর বলয় ভাঙতেই আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনরত ছাত্ররা। এসময় মাদ্রাসায় আটকে থাকেন আল্লামা আহমদ শফীসহ সব শিক্ষক।
এর আগে গতকাল বুধবার রাতেই মাদ্রাসার সুরা কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে আনাস মাদানীকে তার দায়িত্ব থেকে বহিস্কার করেন। তবে ছাত্রদের আরও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন অব্যাহত রাখা হয়।
হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সদস্য ও মেখল মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা নোমান ফয়জী বলেন, ‘ছাত্রদের পাঁচটি দাবির মধ্যে তিনটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শফীর সম্মতিতে তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রদের কোনো হয়রানি-নির্যাতন করা হবে না মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আনাস মাদানীর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা ফোন দেওয়া হয়। তবে প্রতিবার তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীর মোবাইলে ফোন দিলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। সে কারণে তাদের দুজনের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।