সমালোচনার তুঙ্গে সিলেট ছাত্রলীগ
অমিতা সিনহা, সিলেট: শ্রীহট্টের ঐতিহ্যের বাহক খ্যাতনামা সিলেট মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে সিলেট ছাত্রলীগ।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এই ঘটনার পর সরব হয়ে উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। শুধু এই ঘটনায় নয়। ২০১২ সালে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের শিবির তাড়াতে গিয়ে পুরাতন আমলের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটিকে আগুনে জ্বালিয়ে পুরোটায় অঙ্গার করে দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। তখনো কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ। পরে কেন্দ্রিয় নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পুরান আদলে আবার নতুন করে ছাত্রাবাসটি গড়ে তোলা হয়। কিন্তু যারা এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদের এখনো উপযুক্ত শাস্তি হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব কারণে দুষ্কৃত ছাত্রলীগের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে বারংবার অনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে সিলেটের তরুণ নেতাকর্মীরা। এছাড়া রাজনৈতিক কোন্দল কিংবা অভ্যন্তরীণ রোষানলে বহু মায়ের কূল খালি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা ও কর্মকান্ডের মূলে সর্বোচ্চ হাত রয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতা আজাদুর রহমান আজাদ ও রনজিত সরকার গ্রুপ। তাদের আধিপত্যের ছত্র-ছায়াতে পুরো সিলেট জুড়ে ভয়ঙ্কর সব কর্মকান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শুক্রবারের ছাত্রাবাসের গৃহবধূর গণধর্ষণকারীদের মধ্যে ৬জন ছিলো রনজিত গ্রুপের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ছাত্রলীগ নেতা রনজিত সরকারের সাথে এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রায় সকলেরই অসংখ্য ছবি ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে মহামারি করোনাকালে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও সিলেট মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসের হলে কিছু ছাত্র অবস্থান করে যাচ্ছে। সেখানে তারা মদ, জুয়া খেলা ও অস্ত্রের আস্তানা গড়ে তুলেছে। আর এখানেও রয়েছে রাজনৈতিক জবরদখল। এমনি রাজনৈতিক আধিপত্য ও ভয়ভীতির কারণে এমসি কলেজের দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষও নিরুপায়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একের পর এক অন্যায় মূলক কর্মকান্ডের আওয়াজ জোড় গলায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারিনি বলে জানা গেছে।
এদিকে এসব ভয়ানক অমানিক কর্মকান্ডে সিলেটের সচেতন মহল ও বিভিন্ন ছোট বড় অঙ্গসংগঠন প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। প্রতিবাদের ভাষায় রাজপথে ছাত্রসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নগর পিতা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হাতে গৃহবধূর গণধর্ষন মূলক কর্মকান্ডে প্রতিবাদ জানিয়ে পুরো সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক বসেন সিলেট পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে। এর সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এসময় মেয়র আরিফুল বলেন, এখন থেকে নিয়মিত সিসিক ও পুলিশ যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সিটি করপোরেশন এলাকার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে বখাটেপনা, ইভটিজিং ও ধর্ষণসহ সকল প্রকার অপরাধ কর্মকান্ডকে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন সিসিকের নির্ধারিত ম্যাজিস্ট্রেট।
এদিকে সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট আজ একেবারে অভিভাবক শূণ্য হয়ে পড়েছে। সিলেটের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একের পর এক নান ধরণের বর্বরোচিত ঘটনা হচ্ছে। কিন্তু এর সুস্থ্য বিচার কোনটির হচ্ছে না। এতে করে দৃষ্কৃতরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে । তারা কোন অন্যায় কাজকে অপরাধ বলে মনে করছে না। সিলেটের কিছু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উসকানি পেয়ে ভয়ানক তরুণ সমাজ গড়ে তুলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে যাচ্ছে তারা। ফলে নতুন প্রজন্মের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনবরত বিষাক্ত আকার ধারণ করছে এই যুগে। এটি প্রতিহত করতে দেশনেত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীতা ছাড়া কোন উপায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের প্রশ্রয় দাতাদের চিহ্নিত করতে হবে। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রবাসে লোমহর্ষক ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানানোর আমার ভাষা নেই। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক পাশবিক ঘটনা। এই এম সি কলেজের পবিত্র ক্যাম্পাসে আমি শিক্ষার্থী ছিলাম । সেই কলেজে এমন নির্মম জঘন্যতম অপরাধ সংগঠিত হলো। যে ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমরা সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতাম সেই ছাত্রলীগের নাম এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। এমন নিষ্ঠুর, নৃশংসতা কোনো শুভবোধ সম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এমসি কলেজ বারবার কেন অপরাধের জন্য শিরোনাম হচ্ছে। কারা এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গনের আলোকিত ধারাকে কালিমা লেপন করছে তাও খোঁজা জরুরি।
তিনি বলেন, এর আগেও ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে যারা উৎসব করেছিল তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে একই ছাত্রাবাসে এমন অপরাধ করার সাহস পেতো না এই দুর্বৃত্তরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যারা নিজের সহকর্মীদের যারা বিভিন্ন সময় খুন করেছে। তাদের শাস্তি হলে এই অপরাধীরা এমন বিকৃত চিন্তাও আসতো না। অপরাধীদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। করোনাকালে গুটিকয়েক জনের জন্য ছাত্রাবাস খোলা থাকে কি করে? কলেজ প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারেন না।