সৌদি ফিরতে প্রবাসীদের ভোগান্তি পদে পদে
অন্তহীন সমস্যায় পড়ে আছেন সৌদি প্রবাসীরা। ভিসা বাড়াতে গেলে পাসপোর্টের সঙ্গে কফিলের (নিয়োগদাতা) এজেন্সির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, বিএমইটির নিবন্ধনপত্র, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, পুলিশের ছাড়পত্রসহ নানা কাগজপত্র লাগছে। যা সময়স্বাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে চড়া দামে মাসখানেকের জন্য ভিসা-ইকামার মেয়াদ বাড়ানো যাচ্ছে। তাও খুব কম কফিলই সাড়া দিচ্ছেন। হাজার হাজার প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ আছে আর মাত্র ২০-৩০ দিন। কিন্তু এখনও টিকিটের কোনো সুরাহা করতে পারছেন না তারা। রিটার্ন টিকিট যারা কেটে এসেছেন তারা কিছু টিকিট পাচ্ছেন। না কেটে আসলে এক একটি টিকিটের জন্য নানা জায়গায় ধর্ণা দিতে হচ্ছে। গুণতে হচ্ছে প্রায় লাখ টাকা। সব মিলিয়ে পদে পদে সমস্যায় পড়েছেন সৌদি প্রবাসীরা।
শনিবার সৌদি এয়ারলাইন্সের সামনের রাস্তায় কাঁদো কাঁদো হয়ে হবিগঞ্জের মোবারক আলী বলছিলেন, ২৮ তারিখের মধ্যে যদি যেতে না পারি তাহলে কফিল আমার ভিসা রিনিউ (পুনঃনবায়ন) করবে না। চাকরি চলে যাবে। তখন আমি কী করব। আমার পরিবার পথে বসবে।
এমনই হাহাকার নিয়ে অনেক প্রবাসী জড়ো হয়েছিলেন সেখানে যারা এখনও টিকিটের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। এদিন সৌদি এয়ারলাইন্সের সামনে কয়েক’শ প্রবাসী অবস্থান নেন। এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকেও ডাকা হয় অনেককে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হবে, তাদের শনিবার টিকিট দেয়া হয়। এদিন সকাল সোয়া ১০টায় টিকিট রি-ইস্যু শুরু করে সৌদি এয়ারলাইন্স। গত কয়েকদিনের তুলনায় শনিবার টিকিট প্রত্যাশীদের ভীড় ছিল বেশি। প্রবাসীদের চাপ সামলাতে বেশ হিমশিমও খেতে হয় এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের।
শনিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে লাইন ধরেন প্রবাসীরা। একদল প্রবাসী এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। অপরদিকে, আরেক দল প্রবাসীকে হোটেল সোনারগাঁওয়ের মূল সীমানার ভেতরে লাইন ধরায় পুলিশ।
প্রবাসী জয়নুল হক বলেন, আমি রিটার্ন টিকিট নিয়েই এসেছি। ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ১৯ অক্টোবর। একবার কথা বলে এসেছি ভেতরে। বাইরে অপেক্ষা করতে বলেছে। আশা করছি, টিকিট পেয়ে যাব।
আরেক প্রবাসী রমজান আলী বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ভিসা নবায়ন করার জন্য দূতাবাস থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয় তাতে অনেক খরচ ও সময়ও লাগবে। দরকার নানা ধরনের সনদ। এই প্রক্রিয়ায় গেলে কবে ফিরতে পারব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কফিলের সঙ্গে কথা বলে অনেক রিয়াল খরচ করে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছি এক মাস। এখানে এসে দেখি যাদের ভিসার মেয়াদ ৩০ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে শুধু তাদেরকেই টিকিট দেয়া হচ্ছে। তাহলে আমরা যারা এত কাঠখড় পোড়ালাম তাদের কী লাভ হল! আমাদের কথা হল, ভিসার মেয়াদ যাদের একেবারেই কম তাদের পাশাপাশি আমরা যারা কষ্ট করে ভিসার মেয়াদ একটু বাড়িয়েছি তাদের জন্যেও কিছু টিকিট ইস্যু করা হোক।
এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত শুধু সৌদি আরবের ৭৭ হাজার ৪০০ নতুন ভিসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল। এসব ভিসার মেয়াদ তিন মাস হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে সব ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের পরিসংখ্যান বলছে, ১ এপ্রিল থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ৪৩ হাজার ৪৬১ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের যে কয়টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে তাতে সহজেই বুঝা যায়, করোনার এই দুঃসময়ে খুব বেশি প্রবাসী সৌদিতে এখনও ফিরে যেতে পারেননি। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদের ফেরানোর চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের এখন সুস্পষ্ট বক্তব্য, টিকিট ইস্যুর পাশাপাশি সহজ নিয়মে ভিসা-ইকামার মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সরকারিভাবে।