ঢাকায় হিজড়াদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য প্রথম একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে। গত ৬ নভেম্বর সকালে তৃতীয় লিঙ্গের প্রায় একশ’ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে পবিত্র কুরআন তিলওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে “দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা” নামের েই ইসলামী শিক্ষাপ্রতষ্ঠানটি।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রহমান আজাদ এ প্রসংগে রেডিও তেহরানকে জানান, হিজড়ারা স্কুলে যেতে পারে না, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তো অনেক দূরের কথা। তাদের কেউ কোনো কাজও দেয় না। অনন্যোপায় হয়ে তারা বিশৃঙ্খল জীবনযাপন করছে। সমাজে তাদেরকে একরকম উৎপাত বলে মনে হয়। এর দায় আমার নিজের, আমাদের সমাজের, রাষ্ট্রের। মূলত এই চিন্তা থেকেই হিজড়াদের জন্য তিনি মাদ্রাসা চালুর উদ্যোগ নেন।
তিনি জানান, গতকাল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও ছ’মাস আগে থেকেই তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হিজড়াদের কার্যালয়ে গিয়ে কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। হিজড়াদের আগ্রহ এবং প্রশাসন ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রেরণায় এ কাজটি প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে উৎসাহী হয়েছেন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে প্রতি জেলায় এরকম মাদ্রাসা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
মাদ্রাসার অর্থায়ন প্রসংগে মুফতি আবদুর রহমান আজাদ জানান, মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা তাঁদের অর্থায়ন করেছে। এ উদ্যোগ থেকে তাঁরা কোনো লাভ চান না। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরা কাজটা করতে চান। কেউ সহায়তা করতে চাইলে সে দান গ্রহণ করা হবে। মাদ্রাসায় এই মুহূর্তে দশজন শিক্ষক আছেন।
হিজড়াদের জন্য এরকম কল্যাণধর্মী একটি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় তফসির পরিষদ, বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইউম। তিনি আশা করেন, সরকারও হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও রোজগারমূলক কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে আসবেন।
মাদ্রাসায় আগত “সোনালী” নামের একজন জানালেন, পবিত্র কোরআন পড়তে শেখাটাকে তাঁরা মনে করেন আর সব মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার একটা সুযোগ। সেই সঙ্গে কেউ যদি আয়-রোজগারের কোনো প্রশিক্ষণ দিত, তাহলে বাকি জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকত না।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা ১০ হাজার। যদিও হিজড়াদের সংগঠনগুলো বলছে, তাঁদের সংখ্যা লাখ দেড়েক।