অর্থনৈতিক বিপর্যস্তের প্রভাবে বেড়েছে নারী নির্যাতন
অমিতা সিনহা: ঘরে কিংবা বাইরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নারীরা।স্বজনদের কাছেও যেন নিরাপদ নয় তারা। এর মধ্যে নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততা।
জীবনযাপনের জন্য অর্থনৈতিক চাপ ক্রমশমান বৃদ্ধি পাওয়ায় মানসিকভাবে অসুস্থ, অশান্তি আর হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় নানা ধরণের অনৈতিক পথ অবলম্বন করে যাচ্ছে। এতে করে করোনাকালে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, গণধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও শিশু ধর্ষণমূলক কর্মকান্ড ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব জঘণ্য পাশবিক নির্যাতন ও অনৈতিক কার্মকান্ড থেকে বের হয়ে আসতে হলে অপরাধীদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে এসে যথাযথ উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সরকারি-বেসরকারিভাবে দারিদ্রতা দূরীকরণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাম্প্রতিক নারী ও শিশুদের নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার কারণ মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনৈতিক দৈন্যতায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে সাধারণ মানুষ। হতাশাগ্রস্ত মানুষ অর্থনৈতিক চাপে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।
মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস আসার পর থেকে আট মাসে সিলেটে ধর্ষন, গণধর্ষন, নারী নির্যাতন ও শিশু নির্যাতনের মতো মামলা হয়েছে ২৯১টি। তার মধ্যে নারী ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১১৫টি। গণধর্ষণের মামলা হয়েছে ১৩টি। শিশু ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৯৫টি এবং পারিবারিক সংক্রান্ত শিশু ও নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে ৬৮টি। যাদের মধ্যে কোন কোন মামলার আইনের আওতায় নিয়ে আসা হলেও বেশকিছু মামলা এখনো ঝুলিয়ে আছে বলে জানা গেছে।
মহামারি করোনাভাইরাস আসার পর থেকে অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে বলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবীর বিভাগীয় প্রধান এডভোকেট সৈয়দা শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, করোনা আসার পর থেকে মানুষ কাজ হারিয়ে, ব্যবসায় ধস পড়ায় বেকার হয়ে কঠিন জীবনযাপনের পথে মানুষের মন এখন অস্থির হয়ে উঠেছে। এর ফলে মানসিক হতাশা আর অশান্তি থেকেই স্বজনদের সাথে বাকবিত-া বেড়ে গিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাই তারা ঘরে কিংবা বাইরে নারী ও শিশুদের অন্যায়ভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে যারা এসব অন্যায়, অপকর্ম কাজের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দ্রুত উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। যদিও বর্তমানে সরকার সাম্প্রতিক ধর্ষক কর্মকান্ডের সাজা বাড়িয়েছে। কিন্তু এই সাজা এখনো সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তাই অপরাধীরা মনে ভয় জিনিসটা নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মিডিয়া এন্ড ক্রাইম এনালাইসিস রেঞ্জ ডিআইজি মো. জেদান আল মুসা প্রতিবেদককে বলেন, নারী নির্যাতনের যে মামলাগুলো হয় খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। ভিকটিম যাতে ন্যায় বিচার পায়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়। যারা এই মামলাগুলোর আইও আছেন তাদেরকেও নির্দেশনা দেওয়া আছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেখার জন্য। খুব কম সময়ের মধ্যে যেন নিষ্পত্তি হয় মামলাগুলো তার জন্যও একটি মনিটরিং সেল গঠন করা আছে। যারা প্রশাসনে নারী আছে তাদেরকেও নির্দেশনা দেওয়া আছ্।ে ইতিমধ্যে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী নির্যাতন প্রতিরোধে সিলেট বিভাগে ৩৯টি থানায় আলাদাভাবে ডেস্ক গঠন করা হয়েছে।