শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 21 January, 2021 10:40
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা:

সরকারি বাড়ি বরাদ্দ পেতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি

সরকারি বাড়ি বরাদ্দ পেতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধুর দেয়া বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে উচ্ছেদের পর গত ২৫ বছরেও সরকারি বাড়ি বরাদ্দ পায়নি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। বছরের পর বছর এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ঘুরছে তারা। শহীদের সন্তান হিসেবে প্রাপ্য বাড়ির জন্য ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা। এ অভিযোগ করেছেন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বরিশালের প্রথম শহীদ কাজী আজিজুল ইসলামের দুই কন্যা। ২০১৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া শহীদের সন্তানরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

১৯৭০ সালের ৬ মে কাজী আজিজুল ইসলাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে বরিশালে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে ‘স্বাধীন বাংলা সরকারের দক্ষিনাঞ্চলীয় সচিবালয়’ এর অধীনে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। ২৮ মার্চ তিনি নিজের উইলি জিপ গাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেন। ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশালে প্রবেশ করার পর ৫ মে আজিজুল ইসলাম পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন। ওইদিনই ত্রিশ গোডাউনের পূর্বদিকের রাস্তায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনিই বরিশালের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার স্ত্রী আয়েশা ইসলাম সেখানে গিয়ে কঙ্কালের পাশে ঘড়ি, বাঁধানো দাঁত ও পোশাক দেখে শনাক্ত করেন। সেখানেই ওই কঙ্কাল দাফন করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অনন্য অবদান রাখায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার ২০১৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন।  
শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে নয়, ভাষা আন্দোলনেও অনন্য অবদান আছে দেশপ্রেমিক কাজী আজিজুল ইসলামের। ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ যখন প্রকম্পিত তিনি ছিলেন এই আন্দোলনের বলিষ্ঠ এক কন্ঠস্বর।  নারায়নগঞ্জের তুলারাম কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি আন্দোলন সংগ্রামে তার নিয়মিত অংশগ্রহন ছিল। নানা-নানির কাছ থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকার পুরোটাই ভাষা আন্দোলনকারীদের খরচের জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন। বেতনের টাকার বেশিরভাগই তিনি খরচ করতেন ভাষা আন্দোলনের জন্য।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলামের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। পিতার নাম কাজী আমিনুল ইসলাম, মা আফিয়া বেগম। তার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার চিওড়া কাজী বাড়ী।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রী আয়েশা ইসলাম তিন সন্তান নিয়ে ঢাকার লালমাটিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে আসেন। হানাদার বাহিনী সেখানেও তাদের খুঁজতে যায়। এরপর এলিফ্যান্ট রোড, বনানীসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে থাকেন তিনি। ৬ মাসের শিশু কন্যা আর অপর দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। তিনমাস পর পর মাত্র ১২শ’ টাকা সরকারি সাহায্য দিয়ে তিন সন্তানের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দেয়াও সম্ভব হতো না। এক পোশাকেই কেটেছে বছরের পর বছর। 
১৯৭৩ সালে জোহরা তাজউদ্দীনের সাথে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেন শহীদ পত্নী আয়েশা ইসলাম। বঙ্গবন্ধু মোহাম্মদপুর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের জি ব্লকের ২/৩ বাড়িটির ২য় তলা বরাদ্দ করে দেন এই শহীদ পরিবারের জন্য। আয়ের কোনো উৎস না থাকায় তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন আয়সা ইসলাম। কখনও কখনও দিনে একবারের বেশি খাবার তুলে দিতে পারেননি সন্তানদের মুখে। নিজের অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা করাতে পারেননি। যোগাড় করতে পারেননি ওষুধ কেনার টাকা। ১৯৮৯ সালে এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যান শহীদ পত্নী আয়েশা ইসলাম। 
বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৫ সালে শীর্ষ সন্ত্রাসী নিরু ও তার বাহিনী অস্ত্রের মুখে এই শহীদের সন্তানদের বাসা থেকে বের করে দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর শহীদ সন্তানদের প্রাপ্য বাড়ির জন্য আবেদন করে কাজী আজিজুল হকের বড় মেয়ে রওশন জাহান বেগম। কিন্তু আজও পায়নি। বছরের পর বছর ধরে মন্ত্রণালয়ের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। 
রওশন জাহান টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ৬০ লাখ টাকা দাবি করেছেন বাড়ি বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার জন্য। ২০১৬ সালে ওই কর্মকর্তাকে ঘুষের টাকা দিতে না পারায় ফাইলটা পড়ে আছে। পরে আরো এক কর্মকর্তাও ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি জানান, টাকা না দিলে বাড়ি বরাদ্দ হবে না। রওশন জাহান বলেন, ৬০ লাখ তো দূরের কথা ৬০ হাজার টাকাও দেয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের। 
শহীদ কাজী আজিজুল ইসলামের ছোট মেয়ে ফাহমিদা খান জানান, আমার বাবা দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। শহীদের সন্তান হিসেবে দেশের আইন অনুযায়ী সরকারি বাড়ি বরাদ্দ পেতে যদি ঘুষ দিতে হয় তাহলে এর চেয়ে চরম দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, এটা আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য। সব শহীদের সন্তানরা সরকারি এই সহায়তা পেয়েছেন। শুধুমাত্র আমরা পাচ্ছি না। 

উপরে