শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 13 July, 2021 13:36

অন্যান্য জটিলতায় পূর্ণ ডিজিটালাইজড ‘সিলেট সরকারি কলেজ’ পাচ্ছে না সুফল

অন্যান্য জটিলতায় পূর্ণ ডিজিটালাইজড ‘সিলেট সরকারি কলেজ’ পাচ্ছে না সুফল
অমিতা সিনহা :

শ্রীভূমির সুপ্রাচীন ‘সিলেট সরকারি কলেজ’ ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে শতভাগ সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়। কিন্তু  শিক্ষক শূন্যতাসহ অসংখ্য জটিলতায় কাঙ্খিত সুফল মিলছে না। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষা কার্যক্রমে।

অথচ মহামারি করোনাকালে শ্রেনি কক্ষের নিয়মিত পাঠদান কর্মসূচি ও বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষাসহ পড়–য়াদের সব ধরনের সুবিধা পেতে সম্প্রতি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে শিক্ষকরা। এতে করে সিলেটের অন্যান্য কলেজের তুলনায় এই প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার শতভাগ সফল বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া করোনাকালে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রায় ১৭ একর জায়গার উপর ৩২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তবুও কোভিড-১৯এর স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব-শরীরে পাঠদান প্রক্রিয়াতে শিক্ষকদের বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।

১৯৬৪সালে ছেলেমেদের জন্য শ্রীহট্টের টিলাগড়ে ‘মুরারি চাঁদ উচ্চ মাধ্যমিক মহাবিদ্যালয়’ নামে নামকরণ করে স্থাপিত করা হয়েছিল বিদ্যাপীঠটির। যেখানে ১৯৬৬ সালে  মানবিক ও বাণিজ্যিক বিভাগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। পরবর্তিতে বিজ্ঞান বিভাগ যোগ করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশক্রমে সুপ্রাচীন বিদ্যাপীঠ ‘মুরারি চাঁদ উচ্চ মাধ্যমিক মহাবিদ্যালয়টির’ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘সিলেট সরকারি কলেজ’। যা নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত পায় ‘সিলেট সরকারি কলেজ’ নামে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কলেজটি মূলত মুরারি চাঁদ(এমসি) কলেজের বিশেষ একটি অংশ। পরে চাহিদা ব্যাপক থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের  আদেশ ক্রমে বিভক্ত করে ‘সিলেট সরকারি কলেজে’ রূপান্তরিত করা হয়েছিল। প্রায় ১৭ একর জায়গার উপর ছোট ছোট উচুঁ-নিচু টিলায় ঘেরা সবুজ অরণ্যে গড়ে উঠা সুপ্রাচীন বিদ্যাপীঠে রয়েছে বহুমাত্রিক এক সুদর্শন পরিবেশ। বিদ্যাপীঠে রয়েছে সুবিশাল খেলার মাঠ, বিশাল বড় ক্যাম্পাস, পুকুর, ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথকভাবে রয়েছে ছাত্র নিবাস, মসজিদ, শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে আছে সীমানা প্রাচীর। যেখানে পাঠদান দেওয়া হয় মাধ্যমিক,  ডিগ্রি(সম্মান) পর্যায়ে বিএ, বিএসএস, বিবিএস কোর্স ও অনার্স।

কিন্তু বর্তমানে সচলকৃত ৫টি বিষয়ের অনার্স কোর্স বন্ধ রয়েছে। অথচ খ্যাতি ছড়ানো বিদ্যাপীঠতে প্রতিবছর একটি আসনের জন্য মেধা তালিকার ভর্তিতে লড়াই করে ৫/৬জন মেধাবী শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকবৃন্দরা অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১৭সালে ১০আগস্ট একটি বহুতল ভবনের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন। একই দিন বিদ্যাপীঠের সংলগ্ন মুরারি চাঁদ(এমসি) কলেজেরও ১০তলা বিশিষ্ট ভবনের ভিত্তি প্রস্তরও উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। অথচ এমসি কলেজের বহুতল ভবনের কর্মযজ্ঞ পুরোদমে চললেও এখনো সিলেট সরকারি কলেজের বহুতল ভবন এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।

ফলে আদৌ কি বিদ্যাপীঠের শিক্ষাকার্যক্রম বিস্তর ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। এদিকে প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের  শূন্যতায় শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষকবৃন্দরা। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাবরে শিক্ষক সংকটের জন্য আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু তারও কোনো ছাড়া পাননি। ২০০৩সালে দিকে পৃথকভাবে  সিলেট সরকারি কলেজের চার তলা বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস স্থাপিত করা হয়েছিল। বহুবার ছাত্রী নিবাসটি সচল করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু অছাত্রদের আধিপত্যের জেরে ছাত্রী নিবাসটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তিতে ২০১৯সালে দিকে বিদ্যাপীঠের সংশ্লিষ্টরা ফের ছাত্রী নিবাস চালু করার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, ফার্নিচার ও বাবুর্চিও ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কিন্তু মহামারি করোনার জন্য পুনরায় পিছিয়ে পড়ে যায়। শ্রীহট্টের সুপ্রাচীন সিলেট সরকারি কলেজ স্থাপিতের সময় মূলক ফটক আর ছাত্র নিবাসের আরও একটি ফটক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই  ফটক দুটি দীর্ঘ ৫৭ বছরেও নবরূপে নির্মাণ করা হয়নি। সম্প্রতি বিদ্যাপীঠটির পুরো সীমানা জুড়ে ইট সিমেন্টের প্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে।

তবে প্রতিষ্টানের মূলকটি যদি সু-উচুঁ করে নব রূপে পাকাকরণ করা হয়, তবেই শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার কিছুটা হলেও স্বস্থি ফিরে পাবে বলে জানান বিদ্যাপীঠটির অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক অরবিন্দ কুমার দত্ত। তিনি বলেন, মহামারি করোনাকালে বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষের উদ্যোগে শিক্ষকদের সমন্বয়ে সম্প্রতি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সিলেট সরকারি কলেজের পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। যার দরুণ ঘরে বসেই নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা অংশগ্রহন করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই ওয়েবসাইটে সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যাতে পড়ুয়ারা সহজেই নিজেদের প্রয়োজনীয় জটিলতা নিরসন করতে পারছে।

ওয়েবসাইট চালুর পর থেকে  শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ক্রমানয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। কিন্তু কোভিডের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব- শরীরে বিদ্যাপীঠে ক্লাস শুরু হলে, তখন বড় একটি বাধাঁর মুখে পড়তে হবে শিক্ষকদেরকে। কেননা সুপ্রাচীন প্রতিষ্টানটির চাহিদা ব্যাপক থাকায় পড়ুয়ারা সব বিভাগের ক্লাস করতে চাই। অথচ শ্রেণি কক্ষে ক্লাস নেওয়া মতো পর্যাপ্ত পরিমাণের শিক্ষকের শূন্যতা রয়েছে। রয়েছে শ্রেনি ক্েক্ষর সংকট। তাই এই ধাক্কা সামাল দিতে রীতিমত শিক্ষকদের হিমশিম পোহাতে হচ্ছে।

এব্যাপারে সিলেট সরকারি কলেজের প্রফেসর মাজহারুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, করোনাকালে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে গ্রুপে শুরু হয়েছিল। তখন উপস্থিতি ছিলো প্রায় ৫০/৬০ শতাংশ। তখন স্ব-উদ্যোগে শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি ডায়নামিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করি। যেখানে পাঠদান থেকে শুরু করে নিয়মিত পরীক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ের ক্যাটাগরি করে সাজেসন দেওয়া আছে। পাশাপাশি যে ক্লাসগুলো নেওয়া হয়, সেগুলো পুনরায় দেখার সুযোগও রয়েছে। এর ফলে কলেজে প্রায় ৯০ভাগের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যদিও প্রাণঘাতি করোনা সামাল দিয়ে কলেজে পাঠদান দেওয়া হয়, তখন শিক্ষকদের শ্রেণি কক্ষে ক্লাস নিতে বড় একটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। কলেজের চাহিদা অপ্রতুল্য থাকা স্বত্ত্বেও সব বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ৫টি বিষয়ে যে অনার্স কোর্স চালু ছিলো তা এখন আপাতত বন্ধ আছে। আর অন্যান্য অসুবিধা তো আছেই।

এ প্রসঙ্গে  শিক্ষা প্রকৌশল এর কর্মকর্তা নজরুল হাকিম প্রতিবেদককে বলেন, সিলেট সরকারি কলেজের ২০১৭সালে যে ১০তলা ভিত্তি প্রস্তর করা হয়েছিল, তা খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে আসছে আগস্ট মাস থেকে। আর এতে ব্যয় করা হবে প্রায় ১২ কোটি টাকা। মহামারি করোনার জন্য এই ভিত্তি প্রস্তরের কাজ পিছিয়ে ছিল।

উপরে