নির্বাচনের আগে-পরে ছয়দিন মাঠে থাকতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে ছয়দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হলে মোট দিনের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ন আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও কোস্ট গার্ডকে বোঝায়। আর সশস্ত্র বাহিনী বলতে নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে বোঝায়।
গতবারের মতো এবারো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হতে পারে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের লোকবল ও চাহিদার কথা জানিয়েছে ইসিকে। আর সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হলে তখন তারা ছক ও চাহিদা জানাবে।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে ইসির সোমবারের (২০ নভেম্বর) বৈঠকে কোন বাহিনীর কত সংখ্যক সদস্য কতদিনের জন্য মোতায়েন করা হবে সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আনসার মোতায়েন থাকবে ভোটের আগের পরে মোট ছয়দিন। আর পুলিশ মোতায়েন থাকবে পাঁচদিন। অন্যান্য বাহিনীও একই সময়ের জন্য নিয়োজিত হতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এবার সাড়ে সাত লাখ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে আনসারের পাঁচ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের দুই হাজার ৩৫০ জন, বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন, পুলিশের (র্যাবসহ) এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন থাকবেন। অর্থাৎ সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
জনপ্রতি আনসার ৬৩৭ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, কোস্টগার্ড ৬৩৭ টাকা থেকে এক হাজার ৮২০ টাকা, বিজিবি ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ২২৫ টাকা ও পুলিশ ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৬০৬ টাকা পাবেন। সঙ্গে যোগ হবে খাবার ও জ্বালানির মতো খরচ।
ইতোমধ্যে বাহিনীগুলো মোট এক হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা চেয়েছে পুলিশ। বাহিনীটি চাহিদা দিয়েছে ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আনসার বাহিনী চেয়েছে ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। বিজিবি ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ, র্যাব ৫০ কোটি ৬৩ লাখ, কোস্টগার্ড ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা চেয়েছে। সংসদ নির্বাচনে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর এক লাখ ২০ হাজারের সদস্যকে ১০ দিনের জন্য এবং অন্যান্য বাহিনীর সাত লাখের মতো সদস্যদের ছয় থেকে ১১ দিনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকা। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় এবার সেই ব্যয় বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
তিনি জানান, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে সম্ভাব্য বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা একটি বরাদ্দ অ্যাডভান্সড চেয়েছে। সবকিছু পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, এবারের সংসদ নির্বাচনেও তিন হাজারের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি তিন ইউপির জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে।
এর বাইরে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হলে তাদের প্রতি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকতে পারে। এ ছাড়া নিয়োজিত করা হতে পারে এক হাজারের মতো বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।
এবার নির্বাচনের ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। আর ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ৪২ হাজার ১০৩টি। এ ক্ষেত্রে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে, যাদের নিয়োগ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।