জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা
বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন তাদের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য যুক্ত করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। ওই বিবৃতিতে দেয়া বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা বলে মনে করে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সরকারকে হেয় করার উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৪ নভেম্বর ওএইচসিএইচআর এক বিবিৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিবিৃতিতে মানবাধিকার কাউন্সিলের পর্যালোচনাকে দেশের অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি মোকাবিলার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা অনুরোধ করেছেন। এতে স্পষ্ট যে, তারা মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য ছিল মূলত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনৈতিক সহিংসতা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান এবং সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের তিনজন স্পেশাল র্যাপোটিয়ার (এসআর) আইরিন খান, ক্লেমেন্ট নিলেতসোসিভোল ও মেরি লওর বাংলাদেশ সরকারের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য ও প্রশ্ন তোলার বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। স্পেশাল র্যাপোটিয়ার বা তাদের ভাষায় ‘বিশেষজ্ঞ’রা এমন সময়ে এই মন্তব্য করেছেন, যখন বাংলাদেশ সর্বজনীন মানবাধিকারের পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনায় (ইউপিআর) অংশ নিয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মহলের এই পর্যালোচনায় সিংহভাগ দেশ বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সরকারকে হেয় করার ইচ্ছা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল মনে হচ্ছে। তাদের একতরফা পর্যবেক্ষণগুলো, বিশেষ করে তাদের সঙ্গে সরকারের সক্রিয় সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপটে, অসৎ উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ, যেখানে আইনের শাসন বিরাজ করছে। তাদের বিবৃতিতে উল্লিখিত তিনটি মামলা স্বাধীন বিচার বিভাগের অধীন আইন-আদালত দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলাটি তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানির শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার বিষয়ে বিচারাধীন আছে। সরকার যখন প্রকৃতভাবেই শ্রম ও মানবাধিকার রক্ষা করছে তখন বিশেষ র্যাপোটিয়াররা সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলছে, সরকার এ ধরনের আচার-আচরণকে তাদের নিজ নিজ লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করে। বাংলাদেশ সরকার আশা করে, স্পেশাল র্যাপোটিয়াররা আচরণবিধি অনুযায়ী তাদের ম্যান্ডেট পালনে নিরপেক্ষ থাকবেন। র্যাপোটিয়াররা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরাপদ এবং অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানোর ক্ষেত্রে যে জোর আরোপ করেছেন, সেটি তাদের দায়িত্ব নয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন থেকে বস্তুনিষ্ঠ আচরণ প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।