বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা
কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক বাণিজ্য প্রতিনিধি পল জে. থপপিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগে আগ্রহী। এর মাধ্যমে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হবে ও উভয়পক্ষ লাভবান হবে।
রোববার (১৯ মে) শিল্প মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সময় প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়েছেন মন্ত্রী। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
কানাডার বাণিজ্য প্রতিনিধি পল জে. থপপিল বলেন, আমরা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগে আগ্রহী। এর মাধ্যমে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হবে ও উভয়পক্ষ লাভবান হবে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে যথা- শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও শ্রমনীতি প্রতিপালন এবং ট্যারিফ নির্ধারণ এর মতো ইস্যুগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। কানাডা বহুসংস্কৃতিবাদ ও বৈচিত্র্যে বিশ্বাসী। বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ সেখানে দীর্ঘকাল ধরে সহাবস্থান করে আসছে। কানাডাতে দক্ষ ও বিশ্বমানের সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম রয়েছে উল্লেখ করে কানাডার বাণিজ্য প্রতিনিধি বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা সেক্টরে দেশটির কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ যা কানাডাসহ বৃহৎ ও উন্নত দেশগুলোকে আকর্ষণ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতসহ অনেক দেশ বৃহৎ আকারে বিনিয়োগ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ, কম মজুরিতে দক্ষ শ্রমিক এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বর্তমান সরকার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। ইতোমধ্যে আমরা পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরও বেশ কয়েকটি বৃহদাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য বলে পরিগণিত।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর নেতৃত্বে আইসিটি বিভাগ এক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমরা কানাডা থেকে ভালো মানের বড় বিনিয়োগ চাই। আমরা কানাডার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আমাদের শিল্পখাতের সার্বিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্প ছাড়াও বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া ও জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে শিল্পায়ন ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিটাক শিল্পখাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিএসটিআই গুণগত মানের পণ্য উৎপাদনে নিবিড় মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। তিনি এ সময় কানাডাকে বাংলাদেশের শিল্পখাতে দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিলুফার নাজনীন, এস এম আলম ও কামরুন নাহার সিদ্দীকা প্রমুখ।