শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বোমা হামলায় নিহত ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ভূমিকম্পে ভানুয়াতুতে নিহত বেড়ে ১৪ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 5 August, 2024 02:47

লাশের সারি রক্তাক্ত দেশ

♦ জেলায় জেলায় সংঘর্ষ গুলি হামলা ♦ নিহত ১০৪
লাশের সারি রক্তাক্ত দেশ
ঢাকা অফিস :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের প্রথম দিনেই গতকাল সারি সারি লাশে রক্তাক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশসহ ১০৪ জন। তাদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং বাকিরা আন্দোলনকারী ছাত্র, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক কর্মী।

আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে বিক্ষোভের আগুন পৌঁছেছে শহর নগর গ্রামে। সবমিলিয়ে দেশব্যাপী তৈরি হয়েছে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত অন্তত ২২২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।

নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ২৬, ঢাকায় ১১, ফেনী ৮, লক্ষ্মীপুর ৮,  নরসিংদী ৬, সিলেট ৫, বগুড়া ৫, রংপুর ৫, কিশোরগঞ্জ ৫, মাগুরা ৪, কুমিল্লা ৩, পাবনা ৩, মুন্সীগঞ্জ ৩, শেরপুর ৩, জয়পুরহাট ২, বরিশাল ১, ভোলা ১, হবিগঞ্জ ১, সাভার ১,  সুনামগঞ্জ ১, কেরানীগঞ্জ ১ ও কক্সবাজারে একজন।

সবচেয়ে বেশি ২৬ জন নিহত হয়েছে সিরাজগঞ্জে। এর মধ্যে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে সহিংসতা ও আগুনে ১৩ জন মারা গেছেন। সদর আসনের এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে বেলা ৩টার দিকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর এমপির স্বজনরা বাসায় ঢুকে দুজনের পুড়ে যাওয়া লাশ পায়। তাদের মধ্যে একজনের নাম শাহিন। তার বাড়ি শহরের জানপুর গ্রামে। তিনি ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে। অন্যজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, নয়াবাজার, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১০, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, পথচারী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।  ফার্মগেটে গুলিতে আহত এক তরুণকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। পরে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামে ওই তরুণের মৃত্যু হয়। তিনি কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায়।  এর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামে আরেক শিক্ষার্থীকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। তাকে কারওয়ান বাজার থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে জহির উদ্দিন (২৫) নামে আরেক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাকে গুলিস্তান থেকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জিগাতলায় গুলিতে আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএর শিক্ষার্থী। তার বাসা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে। উত্তরায় সংঘর্ষে ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা গুলিতে মারা যান। মিরপুরে গুলিতে মিরাজ হোসেন (২২) নামে এক পরিবহন শ্রমিক নিহত হন। এ ছাড়া ঢামেকে অজ্ঞাত আরও দুজনের লাশ পাওয়া তথ্য পাওয়া গেছে। এদের একজনের বয়স আনুমানিক ২৫। গত রাত ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ি থেকে জুয়েল (২৮) নামের এক যুবককে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই এলাকা থেকে রিয়াজুল (৩৫) নামের অপর এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সন্ধ্যার পর ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সায়েন্স ল্যাবে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৪১ : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে গতকাল বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাব থেকে জিগাতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ৪১ জন। এর মধ্যে তিনজন তাজা গুলি ও বাকিরা ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন। সায়েন্সল্যাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান চলাকালে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস থেকে আগত নেতা-কর্মীরা তাদের উদ্দেশে ইট পাটকেল ছোড়ে। এতে মুহূর্তেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয় পুরো ধানমন্ডি, সিটি কলেজ, বিজিবি সদর দপ্তর এলাকা ও জিগাতলা। এ সময় জিগাতলায় গুলিতে আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএর শিক্ষার্থী। তার বাসা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে।

ধানমন্ডিতে ‘ইয়েলো’র শোরুমে আগুন : রাজধানীর ধানমন্ডি-২ নম্বরে পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘ইয়েলো’র একটি শাখায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ভবনটি। গতকাল বিকাল ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে দুপুর থেকেই ধানমন্ডির বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এর মধ্যেই কে বা কারা ধানমন্ডি-২ নম্বর রোডে পপুলার ডায়াগনস্টিকের পাশে ও স্টার কাবাবের বিপরীত দিকে অবস্থিত ‘ইয়েলোর’ শোরুমে আগুন দেয়।

উত্তরায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহত দুই, আহত অর্ধশত : রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকে আজমপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুজন নিহতসহ অর্ধশত আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিব হাসানের আপন চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল। তাকে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। নিহত আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর আগে, সকালে ‘এক দফা এক দাবি’ স্লোগান দিয়ে সড়কে মিছিল নিয়ে বের হন উত্তরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা হাউস বিল্ডিং, আজমপুর থেকে বিএনএস সেন্টার পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকাল থেকেই মাঠে ছিল আন্দোলনকারীরা। আজমপুর থেকে জসীমউদ্দিন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আজমপুর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। এর পর শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটে। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি অস্ত্র, ইট-পাটকেট ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের মুখোমুখি হয়। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। চলতে থাকে গুলিও। ঘটে হতাহতের ঘটনা। বেলা ১১টার দিকে উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়ে অবস্থান নেয়। রাজলক্ষ্মী, আজমপুর রেলগেটের গলির মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালীন আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের গলির মধ্যে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আমির কমপ্লেক্স এবং রাজউক মার্কেটের মাঝে প্যান্ডেল তৈরি করে সকাল থেকে অবস্থান করে সাবেক এমপি হাবিব হাসানের অনুসারী আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। সংঘর্ষ শুরু হলে প্যান্ডেল ও চেয়ার পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষে দুজন নিহতসহ অর্ধশত আহত হন। ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল গুলিতে মারা যান। উত্তরা পূর্ব থানায় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ও দুটি ট্রাক ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ইট-পাটকেলের হামলায় থানার তিন তলার জানালার কাচ ভেঙে গেছে। জসিমউদ্দীন, রাজলক্ষ্মী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং ও আবদুল্লাহপুর শিক্ষার্থীদের দখলে ছিল।

কারওয়ান বাজারে ত্রিমুখী সংঘর্ষ : কারওয়ান বাজারে বিকালে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা বাংলামোটরের দিকে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের দিকে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ অংশে পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এদিকে আন্দোলনে বাংলামোটর মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়।

সংঘর্ষে রণক্ষেত্র মোহাম্মদপুর : রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডেও ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ, আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। আহতদের সবাই আন্দোলনকারী বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকাল পৌনে ৪টায় আল্লাহ করিম জামে মসজিদের সামনে থেকে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ছররা গুলি চালায় পুলিশ। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। সকাল থেকেই আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল মোহাম্মদপুর এলাকা। এ ছাড়া বসিলা ব্রিজ থেকে তিন রাস্তার মোড়, পরে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে দখল নেয় আন্দোলনকারীরা।

আফতাবনগর : গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় আফতাবনগরের ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইস্ট ওয়েস্ট ছাড়াও আশপাশের আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন।

মিরপুর-১০ এ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ : গতকাল বিকাল ৫টায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর নিয়ন্ত্রণে নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় গুলিতে একজন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে তিন শতাধিক। মিরপুর ১৪ ও ১২ থেকে ১০ নম্বরের দিকে যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কিছু সময় পর পর ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। গুলিতে নিহত মিরাজ হোসেন (২২) আলিফ পরিবহনের বাস চালাতেন। আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। থাকতেন মিরপুর ৬ নম্বরে। এর আগে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিয়ে থাকে মিরপুর গোলচত্বরে। দুপুর ১২টায় সেখানে তাদের সমাবেশ করতে দেখা যায়। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। বিক্ষোভকারীদের একটি দল কাজীপাড়ার দিক থেকে, অন্য আরেকটি দল মিরপুর-১১ নম্বরের দিকে থেকে গোলচত্বরের দিকে আসার চেষ্টা করলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশ বক্সে আগুন : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলন কর্মসূচির সমর্থনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মানববন্ধন ঘিরে তৈরি হয় এই পরিস্থিতি। পুলিশ রাবার বুলেট-টিয়ার শেল ছোড়ে, পরে একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল বেলা সোয়া ১২টায় শুরু হয় এই উত্তেজনা। এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর বক্তৃতা শুরু হলে হঠাৎ করে কদম ফোয়ারার দিক থেকে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় প্রেস ক্লাবের সামনে রণক্ষেত্র পরিণত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সেগুনবাগিচার বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী স্লেøাগান দিতে থাকে।

সিএমএম ও সিজিএম আদালতের কার্যক্রম বন্ধ : গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রধান ফটক ভেঙে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ভাঙচুর চালায় এবং চারদিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর কিছুক্ষণ পরেই সাময়িকভাবে এই দুই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতের নাজির রেজোয়ান খন্দকার বলেন, সিএমএম আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, আদালতে হামলার পর বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এদিকে দুপুর ১২টায় এক দফার সমর্থনে অর্ধশতাধিক বিএনপিপন্থি আইনজীবী ঝটিকা মিছিল করেন। আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে সিএমএম আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে তারা মিছিল নিয়ে দ্রুত আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।

পুরান ঢাকায় পুলিশের গাড়িতে আগুন : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট, রায় সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দফায় দফায় এই এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। এর আগে বেলা ১১টায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সদরঘাট, বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার ও এর আশপাশের গলি এবং প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদেরও অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এ সময় বাংলাবাজার, ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী, সদরঘাট এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সোয়া ১১টায় আন্দোলনকারীরা ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনের রাস্তায় পার্ক করা পুলিশের গাড়ি উল্টে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থানে টায়ার দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। বেলা পৌনে ১২টায় আন্দোলনকারীরা রায়সাহেব বাজার পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কয়েকবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় আদালতের সামনে পার্ক করা পুলিশের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। এদিকে গতকাল বেলা ১১টায় সদরঘাটে ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল রহমান মিয়াজীর অফিসে হামলা হয়। এতে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।

যাত্রাবাড়ী থানা ঘিরে রাখে আন্দোলনকারীরা : যাত্রাবাড়ী মোড় দখল নিয়ে থানা ঘেরাও করে রাখে আন্দোলনকারীরা। তারা মোড়ের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। গতকাল বিকাল পৌনে তিনটায় দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী মোড়ের আশপাশ দখল নিয়ে পিকেটিং করে আন্দোলনকারীরা। তাদের হাতে হাতে ছিল লাঠিসোঁটা। এ সময় মোড়ের পুলিশ বক্সে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অবস্থান নিয়ে ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করে। এদিকে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়ক অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। মূলত কাজলা ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়। সেখানে দুপুর দুইটায় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী সাইনবোর্ড সড়কটিও অবরোধ করে রাখে অবরোধকারীরা।

প্রগতি সরণিতে আন্দোলনকারীরা : গতকাল দুপুরের পর থেকে প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় রাস্তায় জমায়েত হয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সেখানে জমায়েত হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সৈয়দ টিটুর বাসায় দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুজন। এক যুবলীগ নেতাকে হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারী একজন স্ট্রোক করে এবং বাজিতপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের পুরানথানা মোড় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ মিছিল বের করে। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের পাশেই সৈয়দ টিটুর ছয় তলা বাসভবনের নিচ তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সৈয়দ টিটুসহ তার বাসার ভাড়াটিয়ারা বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। রাস্তায় ব্যারিকেড থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কিছুটা দেরিতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তারা বাসার গেট ভেঙে আগুনে পোড়া একজন নারীসহ দুজনের লাশ এবং আহতদের উদ্ধার করেন।

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. একরাম উল্লাহ জানান, এ হাসপাতালে আগুনে পোড়া অঞ্জনা (৩০) নামে এক নারীসহ দুজনের লাশ আনা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ২০ জনকে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মবিনকে (৩০) হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করেছে আন্দোলনকারীরা। তার লাশ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। কিশোরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন ফরহাদুল ইসলাম রুবেল (৩২) নামে এক আন্দোলনকারী। তিনি তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে। চর শোলাকিয়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে দেড়শর মতো আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাজিতপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুদ্দুস (৩২) নামে একজন স্থানীয় একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বাড়ি বাজিতপুরের দিঘিরপাড় এলাকায়। ভৈরবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫০, পাকুন্দিয়ায় অর্ধশত এবং কটিয়াদীতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বেলা ২টার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া তিন গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে হতাহতদের ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বলেন, এ মুহূর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঁচজনের লাশ রয়েছে। তারা সবাই মহিপালে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা গেছেন। মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরায় বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। মাগুরা শহরে দুজন ও মহম্মদপুর উপজেলায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশসহ দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। গতকাল সকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে শহরের পারনান্দুয়ালী-ঢাকা রোড এলাকায় বিক্ষোভকারীরা অতর্কিতে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি (৩০) নিহত হয়। দুপুরে আবারও বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে সেখানে ফরহাদ হোসেন (২৯) নামে এক যুবদলকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ছাড়া মহম্মদপুর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সুমন শেখ (২০) ও আহাদ বিশ্বাস (২২) নিহত হয়েছেন। পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল ১২টার দিকে পাবনার ট্রাফিক মোড় এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে ৩৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল হাসান বলেন, ৩৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে এসেছে। এ ছাড়া অনেকেই আহত রয়েছে, তাদের চিকিৎসা চলছে। নিহতরা হলেন, চর বলরামপুরের বাসিন্দা পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২১), হাজিরহাট ব্রজনাথপুরের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান (২২) ও এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৭)। নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, বগুড়া শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থান অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত পাঁচজনের মধ্যে একজন মুনিরুল ইসলাম মনির (২২) বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকার বাসিন্দা। অপরজন জিল্লুর রহমান (৪৫) বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া দিনাজপুরের হিলির সেলিম (৪৫) নামের একজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তিনি বগুড়ার হরিগাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন।  অজ্ঞাত আরও দুজন মারা গেছেন। সংঘর্ষে আহত একজনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (শজিমেক) নিয়ে আসার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, অসহযোগ কর্মসূচি পালনের প্রথম দিনে তা-ব চালিয়েছে দুই পক্ষ। আওয়ামী লীগের নেতা মো. টুটুল চৌধুরীকে (৬০) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত টুটুল চৌধুরী নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। এ ছাড়া আহত হয়ে শিশু ও কিশোরসহ অর্ধশতাধিক লোক বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরতরা জানিয়েছে, আহত হয়ে এক শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সি ভর্তি হয়েছে। কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় তিনজন মারা গেছে। দেবিদ্বারে গুলিতে আবদুর রাজ্জাক রুবেল (২৬) নামের এক বাসচালক নিহত হয়েছেন। গতকাল দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জে এরশাদ আলী নামের হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বলেন, রুবেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনা হলে পরীক্ষা করে দেখি তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় কোপ ও পিঠে গুলি লেগেছে। ভোলা প্রতিনিধি জানান, কর্মসূচি ঘিরে ভোলা জেলা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে জসিম নামে এক পথচারী নিহত এবং এসপিসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক পুলিশ সদস্যসহ ২০ জন ভোলা সদর  হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিএনপি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনায় রিপন শীল (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক। নিহত রিপন শীল হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের পুত্র। এ ছাড়া অন্যান্য আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপিও। সংঘর্ষ হয় টানা কয়েক ঘণ্টা। এতে গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয় (বল্লম) অন্তত শতাধিক লোক। সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভারের আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আহমেদুল হক তিতাস বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আশুলিয়ার-বাইপাইল থেকে আনুমানিক ২৫ বছরের একজনকে নিয়ে আসেন চারজন যুবক। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে ৪০ জন গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের অন্তত শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের তিনজনের মরদেহ লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। অপর নিহতদের একজন ঢাকায় নেওয়ার পথে এবং অন্যদের একজন নুরুল ইসলাম চত্বরে ও আরও তিনজনের মরদেহ শাঁখারীপাড়া এলাকায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। আহতদের একই হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহতরা হলেন কাউছার, সাব্বির, ওসমান গনি, আহসান, হারুন মেম্বারসহ আটজন। তবে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরুপ পাল চারজন নিহত ও আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।  জানা যায়, সাবেক মেয়র আবু তাহেরের বাসার দুই দিক থেকে তাদের ঘেরাও করে আন্দোলনকারীরা। উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় যুবলীগের কয়েকজনকে ধরে মারধর করা হয়। এতে যুবলীগের হারুন মেম্বারসহ আরও চারজন নিহত হন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটে দুজন মারা গেছেন। সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে এক আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুদুসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন ২০ জন। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহে আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে থানায় ও পোস্ট অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পৌরসভায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ, শিশু ও শিক্ষার্থীসহ ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে করে গুলিবিদ্ধ ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে প্রথম দিনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের ছোরা গুলিতে একজন অভিভাবকসহ দুই ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল জেলার প্রাণকেন্দ্র মিশনমোড়ে এলে এ ঘটনা ঘটে। চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, অসহযোগ আন্দোলনে চাঁদপুরে ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আশেকে রাসুল যাওয়াদ ও সদস্য আরাফাত সানি। কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কেরানীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সৈয়দপুর  প্রতিনিধি, জানান, সৈয়দপুরে উভয় পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাট সদর ও রামপালের ফয়লাহাটে দুই দফা সংঘর্ষে দুুই পুলিশ কর্মকর্তা, পাঁচ সাংবাদিক, ছাত্র-অভিভাবক ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। আহত সংবাদিককে উদ্ধার করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে সংহতি জানানো জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের  দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রানা মিয়া পুরকায়স্থ (৭০) নামের এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত পক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন। নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চার আন্দোলনকারীসহ ২০ জন আহত হয়েছে। ওই সময় আন্দোলনকারীরা পিটিয়ে নরসিংদী-১ সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতিক)-এর নাতি ও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাইসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার মাধবদী বড় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নরসিংদী-১ সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতিক)-এর নাতি ও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া (৪৩), চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), তার বডিগার্ড কামাল হোসেন  (৩৮), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন (৩৮), মহিসাসুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জলিল, চরদিগলদীর ইউনিয়নের সজীব ও অজ্ঞাতনামা আরও একজন। আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট জানান, সিলেটে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে জেলার গোলাপগঞ্জে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে তিন সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা নির্বাচন কমিশনে আগুন দিয়েছেন। হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন পুলিশ ফাঁড়ি, কর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন এবং সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের কার্যালয়। নিহতরা হলেন- জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৪৩), শিলঘাট গ্রামের সানি আহমদ (২২), দত্তরাই গ্রামের মিনহাজ আহমদ (২৬), নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (২৭) ও গৌছ উদ্দিন। তিন সাংবাদিক আহত : সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষকালে স্পি­ন্টারবিদ্ধ হয়ে আহত হন দৈনিক যুগান্তরের আলোকচিত্রি সাংবাদিক মামুন হাসান। জিন্দাবাজার পয়েন্টে আন্দোলনকারীরা মারধর করে আহত করেন একাত্তর টেলিভিশনের সিলেট অফিসের স্টাফ রিপোর্টার হোসাইন আহমদ সুজাদ ও ক্যামেরাপারসন তারেক আহমদ। তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও এক বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন নারীসহ কমপক্ষে ২০। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নড়াইল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আল নাহিয়ান প্রিন্স (৩৫)। গুলিবিদ্ধ গোলাম রসুল খান (৭০) সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের নাকশী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি কৃষক। নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী জানান, আন্দোলনকারীদের ইটের আঘাতে আমাদের ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম  জানান, চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ এবং সংঘর্ষে আহত হয়ে ১২ বছরের এক শিশুসহ মোট ১৩৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাপসাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে আইসিইউতে এবং বাকিদের ক্যাজুয়ালিটি ও নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ বলে জানা যায়। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষ। সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরহাজী (৩৮)। তিনি শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরহাজীর ছেলে। একই এলাকার মো. সজল (৩০) এবং ডিপজল সর্দার। এদের মধ্যে রিয়াজুল এবং মেহেদী ঘটনাস্থলে এবং সজলকে হাসপাতাল নেওয়ার পথে মারা যায় বলে জানান তার স্বজনরা। কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন।  জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশিকুর রহমান একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। চ্যানেল-২৪-এর সাংবাদিক আজিম নিহাদ, নয়া দিগন্তের চকরিয়া উপকূল প্রতিনিধি হামলার শিকার হয়ে আহত হয়।

উপরে