বার্সেলোনায় স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস না থাকায় প্রবাসীদের ভোগান্তি
স্পেনের পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় বাংলাদেশের স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের দাবি প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের। তবে দেরিতে হলেও তাদের অনেকটা বাস্তবায়নে পথে।
এ বিষয়ে ৭ জুলাই মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান হারুন আল রশিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ভ্যেনু পাওয়া সাপেক্ষে শিঘ্রই প্রতি মাসে একটি করে কনস্যুলার সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দূতাবাস।
সুত্র মতে, বার্সেলোনায় স্থায়ী কনস্যুলেট সেবা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে সেখানে বসবাসরত সাধারণ বাংলাদেশিরা।অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নবায়ন করার সুবিধা না পাওয়ায় এবং নতুন করে পাসপোর্ট করতে না পারায় ভুগান্তিতে পড়তে হয়।
সম্প্রতি গত ২ জুলাই স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফাজ জনির একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব কথা উঠে এসেছে।
তার এই স্ট্যাটাসের বিভিন্ন কমেন্টে জানা যায়, বার্সেলোনায় প্রায় তিন শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছে যারা পাসপোর্ট সমস্যায় ভুগছেন। স্পেনে বাংলাদেশীদের আগমন মূলত নব্বই দশক থেকে। সময়ের ব্যবধানে দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা চল্লিশ হাজারের অধিক। এর মধ্যে অর্ধেক প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি বসবাস বার্সেলোনায়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাবিধ কাজ করে রেমিটেন্স পাঠানোর পাশাপাশি মূলধারায় প্রশংসা কুড়িয়ে চলছেন সেখানে বাংলাদেশিরা। অথচ তাদের অনেকেরই পাসপোর্টের নবায়ন করার জন্য বিড়ম্বনায় পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বার্সেলোনা থেকে কেউ বাংলাদেশে যেতে চাইলে ভিসাসংক্রান্ত অনেক জটিলতার মুখে পড়তে হয় তাদের।
বার্সেলোনার ছারাগছায় দুটি নাম সর্বস্ব অস্থায়ী কনস্যুলেট অফিস আছে, এগুলোতে অবৈতনিক কনস্যুলার হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন দু’জন স্প্যানিশ নাগরিক এবং কন্সুলেট অফিসের একটিতেও বাংলাদেশী বা বাংলা ভাষাভাষী কেউ কর্মরত নয়।বার্সেলোনায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বছরে ৫/৬ বার ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সার্ভিস সেবা দিতে মাদ্রিদ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কর্মকর্তারা আসেন। এ সেবা বার্সেলোনায় বসবাসরত প্রায় ২৫ হাজার প্রবাসীর জন্য নেহায়েত অপ্রতুল। ফলে এখানকার বাসিন্দাদের পাসপোর্ট, ভিসাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য মাদ্রিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যেতে হয় অথবা মেইলের মাধ্যমে সেবা নিতে হয়। প্রায় ৬৫০কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে মাদ্রীদ যেতে হয় পাসপোর্ট, ভিসাসহ অন্যান্য কাজে। এ পরিস্থিতিতে বার্সেলোনা প্রবাসী বাংলাদেশিরা দীর্ঘ দিন ধরে বার্সেলোনায় স্থায়ী একটি কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফাজ জনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি যখন প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ, এমনকি যখন প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এই রেমিট্যান্সের গুণগান গাইছেন, তখন একটা কনস্যুলেট অফিসের জন্য কেন আমাদের এত যুগ অপেক্ষা করতে হবে? এ প্রশ্ন শুধু আমার নয়। এখানকার প্রতিটি বাংলাদেশির।’
বার্সেলোনায় বসবাসরত বাংলাদেশী মানবাধিকার কর্মী মোহামেদ কামরুল বলেন, “অস্থায়ী কন্স্যুলার সেবা নিতে গেলে অনেক সময় সেবা গ্রহীতারা রাস্থায় দীর্ঘ্য লাইনে অপেক্ষা করেন যা স্থানীয় প্রশাসন কর্তিক নিষিদ্ধ এবং দৃষ্টিকটু, এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নহয়।“ তিনিও দাবীগুলোকে সময়ের অন্যতম চাওয়া উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এবং মাদ্রীদ দূতাবাসের প্রতি আহবান জানান বিষোয়গুলো নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শুরু করার।
স্থানীয় প্রবাসীরা মনে করেন বার্সেলোনায় একটি স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপন হলে তাদের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে। প্রবাসীবান্ধব সরকারের কাছে তারা এ দাবি জানান।