শিরোনাম
পাকিস্তানের কাছে ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার ন্যায্য হিস্যা চাইলো বাংলাদেশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অধিকার হারাতে পারে হার্ভার্ড গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত ট্রান্সজেন্ডাররা নয়, শুধু জন্মগত নারীরাই নারী: ব্রিটিশ আদালতের রায় ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে উত্তাল কলকাতা দক্ষিণী নির্মাতার হাত ধরে খলনায়ক হয়ে ফিরছেন শাহরুখ ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ডোমিনিকায় নাইটক্লাবের ছাদ ধসে নিহত বেড়ে ৯৮ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 18 April, 2025 02:08

ট্রান্সজেন্ডাররা নয়, শুধু জন্মগত নারীরাই নারী: ব্রিটিশ আদালতের রায়

ট্রান্সজেন্ডাররা নয়, শুধু জন্মগত নারীরাই নারী: ব্রিটিশ আদালতের রায়
মেইল রিপোর্ট :

সমতা আইনের আওতায় শুধু জৈবিক লিঙ্গের মাধ্যমেই কাউকে নারী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে। অর্থাৎ যারা জন্মগতভাবে নারী, তাদেরই শুধু নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। ট্রান্স বা রূপান্তরিতদের নারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।  

বুধবার (১৬ এপ্রিল) ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আদালত এই রায় দেন। 

এমন রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্রান্স সমর্থকরা। এদিকে ব্রিটিশ সরকার এ রায়কে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে।

রায়টি এই নিয়ে ছিল যে, একজন ট্রান্স নারী যার কাছে জেন্ডার রিকগনিশন সার্টিফিকেট (জিআরসি) আছে, যা তাকে আইনিভাবে নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়; তিনি কি ব্রিটেনের ‘ইকুয়ালিটি অ্যাক্ট’ আইন অনুযায়ী নারী হিসেবে বৈষম্য থেকে সুরক্ষা পাবেন কি না।

এই রায় নিশ্চিত করে যে, নারীদের জন্য একক-লিঙ্গের পরিষেবা যেমন শরণার্থী কেন্দ্র, হাসপাতালের ওয়ার্ড এবং খেলাধুলায় ট্রান্স নারীরা সেবা পাবে না। ট্রান্সজেন্ডার প্রচারকরা বলেছেন, এতে বৈষম্য বাড়তে পারে, বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে।

ব্রিটেনের লেবার সরকার বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত হাসপাতাল, আশ্রয়স্থল এবং স্পোর্টস ক্লাবগুলোর জন্য স্পষ্টতা আনবে। একক লিঙ্গের স্থানগুলো আইনত সুরক্ষিত এবং এই সরকার সর্বদা সুরক্ষিত রাখবে বলে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন।

রায়টি আইনি অস্পষ্টতা দূর করে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক হজ বলেন, আদালতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো সমতা আইন ২০১০-এ ‘নারী’ এবং ‘যৌন’ শব্দ দুটো দিয়ে যথাক্রমে জৈবিক নারী এবং জৈবিক লিঙ্গকে বোঝায়। কিন্তু এই রায়কে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অপর পক্ষের জয় হিসেবে না দেখার পরামর্শ দেন প্যাট্রিক হজ।

এই বিচারক আরও বলেন, আইনটি ট্রান্সজেন্ডারদের ‘লৈঙ্গিক পরিচয় পুনর্নির্ধারণের’ বৈশিষ্ট্যকেই কেবল সুরক্ষা দেয় না, বরং সব ধরনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বৈষম্য এবং তাদের রূপান্তরিত লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে যেকোনো ধরনের হয়রানির বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়।

ব্রিটেন এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার একটি গুরুতর রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। কিছু সমালোচক বলেন, রক্ষণশীল ডানপন্থিরা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে আক্রমণ করার জন্য পরিচয়ের রাজনীতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। আবার অন্যরা যুক্তি দেন, ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি উদার সমর্থন জৈবিক নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।

যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার একটি গুরুতর রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। কিছু সমালোচক বলছেন, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে রক্ষণশীল ডানপন্থিরা পরিচয়ের রাজনীতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। অন্যরা যুক্তি দেন যে, ট্রান্সজেন্ডারদের সমর্থন জৈবিক নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রান্সজেন্ডারদের সামরিক চাকরিতে যোগদান আটকানোর নির্বাহী আদেশ জারির পর দেশটিতে আইনি চ্যালেঞ্জ চলছে।

ব্রিটেনে আলোচিত ওই রায়টি এসেছে ফর উইমেন স্কটল্যান্ড (FWS) নামে একটি স্কটিশ গ্রুপের আইনি পদক্ষেপের পর। গ্রুপটি স্কটিশ সরকারের জারি করা নির্দেশিকার বিরুদ্ধে ছিল। ২০১৮ সালে পাবলিক সেক্টর বোর্ডে নারীদের অনুপাত বৃদ্ধির জন্য তৈরি একটি আইনের সাথে নির্দেশিকাটি যুক্ত ছিল।

নির্দেশিকাটিতে বলা হয়, লিঙ্গ স্বীকৃতি সনদপত্রধারী একজন ট্রান্স নারী আইনত একজন নারী। নারী সমকামী অধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন পাওয়া এফডব্লিউএস স্কটিশ আদালতে মামলায় হারে। সুপ্রিম কোর্ট গ্রুপটির পক্ষে রায় দেয়।

আদালতের রুলের পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে উল্লসিত সমর্থকদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে ফর উইমেন স্কটল্যান্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ বলেন, ‘আজ বিচারকেরা যা বলেছেন, তা আমরা সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি যে নারীরা তাদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে সুরক্ষিত থাকবেন। ’

সংগঠনটির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। তারা মনে করে, এর মধ্যে দিয়ে জন্মগত নারীরা এখন নিরাপদ বোধ করতে পারেন যে নারীদের জন্য নির্ধারিত পরিষেবা ও স্থান নারীদের জন্যই সুরক্ষিত থাকবে।

হ্যারি পটার গল্পের লেখক জে. কে. রাউলিং আদালতের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনিও লিঙ্গ সমালোচনার ক্ষেত্রে সরব ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লেখেন, মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে শুনানি করাতে তিনজন অসাধারণ, দৃঢ়চেতা স্কটিশ নারীকে তাদের সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। জয়লাভ করে তারা সমগ্র যুক্তরাজ্যজুড়ে নারীদের অধিকার রক্ষা করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ট্রান্স নারী বা পুরুষ কেউই আদালতের সিদ্ধান্তের কারণে বঞ্চিত হবে না। কারণ, সমতা আইন বৈষম্য বা হয়রানির বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা দিয়েছে।

তবে ট্রান্সজেন্ডার সমর্থকদের শঙ্কা, কর্মসংস্থানের মতো বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত বৈষম্য ডেকে আনতে পারে। স্টোনওয়াল গ্রুপসহ সমকামী, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার এবং অন্যান্য পরিচয়ধারীদের সংগঠনগুলোর একটি কনসোর্টিয়াম এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আজ একটি চ্যালেঞ্জিং দিন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ের ব্যাপক, ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের এই রায়ের সম্পূর্ণ তাৎপর্য বুঝতে এবং আইনি ও ব্যবহারিক উভয় স্তরেই এর অর্থ কী হবে তা বোঝার জন্য সময় বের করতে হবে। এটা মনে করিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, সুপ্রিম কোর্ট আবারও নিশ্চিত করেছে যে, সমতা আইন বৈষম্যের বিরুদ্ধে ট্রান্স মানুষদেরকে রক্ষা করে। ‘ 

ট্রান্স নারী এবং প্রচারক এলি গোমারসাল বলেন, এটি ট্রান্স মানুষদের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকারের ওপর আরেকটি আক্রমণ।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই রায়ে দেখা গেছে, ট্রান্স ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সমতা আইন জরুরিভাবে হালনাগাদ করা দরকার হতে পারে।

উপরে