শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বোমা হামলায় নিহত ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ভূমিকম্পে ভানুয়াতুতে নিহত বেড়ে ১৪ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 8 May, 2018 16:11

আফ্রিকার এক অসমাপ্ত যুদ্ধের কথা

আফ্রিকার এক অসমাপ্ত যুদ্ধের কথা
মেইল ডেস্ক :

দুই দশক আগে আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দুই দেশ ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার সীমান্তে শুরু হয়েছে ভয়াবহ এক যুদ্ধ।

মাত্র দুই বছর ধরে চলা সেই যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারান।
২০০০ সালে দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হলেও সীমান্তে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা রয়েই গেছে।

কিন্তু একসময় দুই পাশের মানুষ বেশ আনন্দ নিয়ে মেলামেশা করত। এখন বন্ধ সীমান্ত খোলার অপেক্ষায় তারা। ইথিওপিয়ার সীমান্তবর্তী শহর আদিগ্রাত।

বছর কুড়ি আগে শহরটি ছিল ইথিওপিয়ার সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল আর প্রাণবন্ত একটি শহর। -খবর বিবিসি বাংলার।

ইরিত্রিয়ার গাঘেঁষা এই শহরটিকে এখন একেবারে ভিন্ন একটি এলাকা মনে হয়। শহরের বাসিন্দা মালাকো ডেস্টাম।

তিনি বলেন, আমার মনে আছে বড় বড় বাসে করে অনেক মানুষ ইরিত্রিয়ার আসমারা থেকে এখানে আসত। এখানে হোটেল আর রেস্তোরাঁ ব্যবসা দারুণ জমজমাট ছিল। তরুণ প্রজন্ম ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। ভালোই রোজগার ছিল তাদের। আমি তখন ছোট ছিলাম। আমার সেই শহরটি এখন মৃতপ্রায়।

১৯৯৮ সালের ৬ মে শুরু হওয়া যুদ্ধই তার কারণ।

তেল নেই অথবা হীরের খনিও নেই এমন একটি শহর বাদমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুরু হয়েছিল সেই যুদ্ধ। কিন্তু যুদ্ধের আগে দিনকাল একেবারে অন্যরকম ছিল দুই ধারের মানুষের জন্য।

মালাকো মৃতপ্রায় আদিগ্রাত শহরে তার ছোট মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকানে বসে যে গান শুনছিলেন তা ইরিত্রিয়ার এক শিল্পীর।

সীমান্তের এপারে ইথিওপিয়ায় এখনও ইরিত্রিয়ার গান বেশ জনপ্রিয়। তার মনে আছে, কীভাবে ইরিত্রিয়ার রুটি দিয়ে সকালের নাস্তা করত তার পরিবার।

ছুটিতে তারা ইরিত্রিয়া বেড়াতে যেতেন। সে এখন ইতিহাস। শহরের অল্প বয়সী ছেলেরা এখন ভালো চাকরির আশায় অন্যত্র চলে গেছে। মালাকো তবুও রয়ে গেছেন।

তিনি বলছিলেন, আমি এখন বড় হয়েছি। নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। আমার কাছের সবচেয়ে বড় শহর ইরিত্রিয়ার আসমারা। কিন্তু তবু আমাকে মালপত্র আনতে আদ্দিস আবাবা পর্যন্ত যেতে হয়।

আদিগ্রাত থেকে আসমারা যাওয়ার একটিই রাস্তা। সেটি এখনও রয়ে গেছে। রাস্তাটির দুই পাশের মানুষজনের মধ্যে একসময় বিয়ে হতো। আত্মীয়রা এপাশ থেকে ওপাশে দাওয়াতে যেতেন।

কিন্তু সেই রাস্তাটি ধরে আসমারা যাওয়ার সীমান্ত দুই দশক ধরে বন্ধ রয়েছে। ৭০ বছর বয়সী আব্রাহাত বাহারাম সেই দিনগুলো স্মরণ করছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা সকালের দিকে কফি খেতাম। তার পর আসমারা চলে যেতাম। সেখানে দুপুরের খাবার খেতাম তার পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম। সে এক দারুণ সময় ছিল। আমাদের মধ্যে ভালোবাসা আর ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল।

আব্রাহাত এখানে একটা বড় হোটেলের মালিক ছিলেন।

বহু জায়গা থেকে সেখানে অতিথিরা আসতেন। এখন আর তারা আসেন না। এখন সেখানে রয়েছে শুধু একটা সস্তা পানশালা।

ইরিত্রিয়ায় আব্রাহাতের অনেক আত্মীয় রয়েছে। যাদের সঙ্গে তার বহুদিন দেখা নেই। ইরিত্রিয়ান প্রতিবেশীদের সঙ্গে জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় তার খুব শান্তিতে কেটেছে।

দুই পাশের ভাষা ও সংস্কৃতিও একই। আদিগ্রাতের মানুষ আসমারা সীমান্ত খুলে দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আদিগ্রাতের বাসিন্দা ইথিওপিয়ার জনপ্রিয় শিল্পী কাসাউন উল্ডোগিওরগিস তাদের একজন।

তিনি মনে করেন, আমার চারপাশে এমন কেউ নেই যারা আশাবাদী নয়। এখানে যত মানুষ আছে, তারা সবাই ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে শান্তি এবং ভালো সম্পর্ক আশা করে। আমি হলফ করে বলছি- দুই দেশের মধ্যে শান্তি ফিরে আসবে।

ইথিওপিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদও এমন কথাই বলেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে শিগগিরই দুই দেশের সম্পর্ক শান্তির পথে মোড় নেবে।

ইথিওপিয়ার আদিগ্রাত আর ইরিত্রিয়ার আসমারার মানুষজন অপেক্ষায় আছেন কবে সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রাখবেন।

উপরে