শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বোমা হামলায় নিহত ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ভূমিকম্পে ভানুয়াতুতে নিহত বেড়ে ১৪ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 3 December, 2019 02:31

ক্যানসার চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপি দিতে পারে নিরাময়

ক্যানসার চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপি দিতে পারে নিরাময়
ঢাকা অফিস :

মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য ২০১৮ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান দুই বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের জেমস পি অ্যালিসন ও জাপানের  তাসুকু হোনজো। তাদের দেখানো পথ ধরেই ক্যানসার নিরাময় গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. এ. এন. এম. নাজমুল হাসান খান। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রোজওয়েল পার্ক ক্যানসার ইনস্টিটিউট এই গবেষক ইমিউনোথেরাপি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন ক্যানসার চিকিৎসায় অদূর ভবিষ্যতে  সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি চেয়ে  কার্যকারী চিকিৎসা হিসাবে  জায়গা দখল করে নেবে ইমিউনোথেরাপি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং জাত ভ্যাক্সিন।

ডা. এ. এন. এম. নাজমুল হাসান খান ১৯৮৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দেশের ও আফ্রিকার দেশ বোতসওয়ানার  বিভিন্ন হাসপাতালে ক্লিনিকাল চিকিৎসত হিসাবে কাজ করেছেন। 

২০০৫ সালে নিউ ইয়র্কের বাফেলোর স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইমিউনোলজিতে পিএইচডি অর্জন করেন। ২০১০ সালে  ডা. নাজমুল খান রোজওয়েল পার্ক ক্যানসার সেন্টারের  মেডিসিন বিভাগের সংক্রামক রোগ বিভাগে বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে রোজওয়েল পার্কের ইমিউনোলজি এবং মলিকুলার মেডিসিন বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

দেশে ক্যানসার আক্রান্ত মানুষদের ডা. এ. এন. এম. নাজমুল হাসান খান চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপিকে সুপরিচিত ও সহজলভ্য করে তুলতে চান। ক্যানসার নিয়ে বহুমুখি গবেষণায় সম্পৃক্ত আছেন বলেই তিনি তার গবেষণাকে নিজ দেশের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। এদেশের ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের নতুন আলোর সন্ধান দিতে কিছুদিনের জন্য তিনি দেশে এসেছেন।

ক্যানসার চিকিৎসায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ইমিউনোথেরাপি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা.নাজমুল হাসান খান বলেন, আগে জানা দরকার ক্যানসার কি?  মানুষের শরীরের কোষ বা সেল এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই ক্যানসার। 

এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে একটি সেল থেকে অনেকগুলো সেল বৃহদাকারে জন্ম নিয়ে হতে পারে ক্যানসার। এটা নিয়ে অনেকের নানারকম ভয়ভীতি থাকলে আসলে বেশিরভাগ ক্যানসারই চিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব।

তিনি বলেন, ক্যানসারের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি। তবে ক্যানসারের সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি ইমিউনোথেরাপি ও পার্সনালাইজড মেডিসিন। ইমিউনোথেরাপি হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সার সেল প্রতিরোধ বা হত্যা করা। 

এছাড়াও ইমিউনোথেরাপি’র সহায়তায় পার্সনালাইজড মেডিসিন নামক উদ্ভাবন এর মাধ্যমে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, রোগির শরীরে কোন ধরনের জেনেটিক ত্রুটির ফলে এটি হচ্ছে। এমনকি কোন চিকিৎসা ওই ব্যক্তির জন্য কার্যকর হবে।

ডা. খান বলেন, রোজওয়েল পার্ক ক্যানসার সেন্টারের গবেষণায় পার্সোনালাইজ মেডিসিন প্রয়োগে ইমিউনোথেরাপি খুবই কার্যকর ফল দিয়েছে। এই পদ্ধতিতে রোগীর নিজস্ব টি-সেলকে ব্যবহার প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেহের ভেতরে অচেনা কোনো কিছু ঢুকলেই তাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে টি-সেল। ক্যানসার সেলও দেহের স্বাভাবিক কোষ নয়, তাই তাকেও আক্রমণ করে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে টি-সেল সাহায্য করে। ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে ক্যানসার সেলকে ধ্বংস করার জন্য এই টি-সেলকে কাজে লাগানো হয়।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় ক্যানসার চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপি কতোটা ব্যয়বহুল? প্রশ্নের জবাব এই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেন,  জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রক্রিয়াজাতের বিষয়টা নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল। তবে তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে নয়।  

দেশের বাইরে অনেকে ক্যানসার চিকিৎসায় এরচেয়ে বেশি ব্যয় করে। তাছাড়া যে কোনো জিনিস শুরুতে দাম থাকে বেশি। পরে ধাপে ধাপে এটি কমে আসে। দেশ এবং দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগ এর ব্যাপারে প্রশিক্ষিত হয়ে, দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিক এ চিকিৎসা সেবা দিতে পারে।

ডা. এ. এন. এম. নাজমুল হাসান খানের কাছে তার গবেষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নানারকম ক্যানসার আছে। আমি পৃর্বে  রক্তের সেল ও চামড়ার ক্যানসার নিয়ে  প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণা করছি।

গত পাঁচ বছর ধরে আমি যুক্ত আছি ওভারিয়ান ক্যানসার সম্পর্কিত কাজের সাথে। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি এবং এর কোন চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। এ রোগে মৃত্যুর প্রধান কারণ, রোগিরা চূড়ান্ত পর্যায়ে ডাক্তারের নিকট আসেন। রোগ নির্ণয় বিলম্বিত হওয়ায়, চিকিৎসা ও অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন স্ক্রিনিং টুলস, কিন্তু সেটা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সেই টুলস ডেভেলপ করা আমার কাজ। এছাড়া, ওভারিয়ান ক্যানসার নিরাময়ে ইমিউনোথেরাপি’র কাজটিও আমি বর্তমানে করে যাচ্ছি।

দেশ নিয়ে কি ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদেশের অনেক রোগীই ক্যানসারে বিনাচিকিৎসায় বা অপচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। অথচ সচেতনায় ক্যানসার এড়ানো সম্ভব, আবার প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত হলে তা চিকিৎসায় সহজেই নিরাময় করা যায়। ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে এদেশে অনেকেরই ধারণা নেই। তাই সরকারী বা বেসরকারীভাবে সেন্টার ফর পার্সনালাইজড মেডিসিন এবং ইমুনোথেরাপি চালু করাও আমার অন্যতম লক্ষ্য। যাতে উন্নত বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সঠিক ক্যান্সার চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। নিউইয়র্ক এর টেকনলোজিকে বাংলাদেশে সমন্বয়ের মাধ্যমে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জিত হবে বলে আমি মনে করি। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগির মৃত্যুর অন্যতম কারণ পার্শ্বপ্রতিক্রয়া। সুতরাং এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে প্রচলিত থেরাপি – সার্জারি, ক্যামো থেরাপি, রেডিও থেরাপি- থেকে বেরিয়ে এসে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।আমি চাই এ দেশের মানুষ ক্যানসারের আধুনিক ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুক। এ দেশের মানুষের মধ্য থেকে ক্যানসার ভীতি দূর হোক।

উপরে