স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে প্রতিবছর দরিদ্র হচ্ছে ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ
চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ কোটি ১৪ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও)।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট পূরণে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি সংস্থাটির দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের ১১ টি দেশ নিয়ে ‘হালনাগাদ ২০১৯’ প্রতিবেদনে বলা হয়, সেবা পরিস্থিতি ও আর্থিক সুরক্ষা দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১ টি দেশের মধ্যে শুধু পূর্ব তিমুরের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো।
স্বাস্থ্যের জন্য রাষ্ট্রীয় আর্থিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে দাবি করে সংস্থাটি বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বলতে প্রত্যেক নাগরিক প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন সেবা পাবে। আর্থিক অসমার্থ্যরে কারণে কেউ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না। আবার সেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে কেউ নি:স্ব হবে না বা তার অবস্থান দারিদ্রসীমার নিচে যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জিডিপির মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ খরচ করে স্বাস্থ্য খাতে। আর চিকিৎসাসহ স্বাস্থ্যসেবা খাতে যত খরচ হয় তার ৭২ শতাংশ যায় ব্যক্তির পকেট থেকে। বাকি ২৮ শতাংশ খরচ করে সরকার, এনজিও ও দাতা সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চিকিৎসার ব্যায়ভার মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নি¤œমানের আর্থিক সুরক্ষার ইঙ্গিত দেয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষকে ‘আকস্মিক স্বাস্থ্য ব্যয়ের’ চাপ সামলাতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একটি পরিবার তার মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ ব্যয় করে শুধু স্বাস্থ্যের পেছনে। অগ্রাধিকার ঠিক করে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে মত দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৬টি সূচকের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যাখ্যা করে বলে বাংলাদেশ ৫৪ শতাংশ সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছে। সূচকগুলো হচ্ছে : পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভধারণ ও প্রসবসেবা, শিশুদের টিকা, নিউমোনিয়ার চিকিৎসা, যক্ষ্মার চিকিৎসা, এইচআইভি/ এইডসের রোগীদের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল প্রাপ্তি, মশারি বিতরণ, মৌলিক পয়োনিষ্কাশন সুযোগ, খালি পেটে রক্তে শকর্রার মাত্রা, রক্তচাপ, জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্তকরণ পরীক্ষা, ধূমপায়ীর হার, হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা, অত্যাবশ্যক ওষুধপ্রাপ্তির সুযোগ এবং স্বাস্থ্যনিরাপত্তা।
সূচকের মান ০ থেকে ১০০ শতাংশ হিসাবে ধরা হয়েছে। ১০০ শতাংশের অর্থ হচ্ছে, সব সেবা পূর্ণমাত্রায় সব মানুষকে দেওয়া। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ১০০ তে ১০০ পেয়েছে মশারি বিতরণ সূচকে। তিন পার্বত্য জেলাসহ ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩টি জেলায় মশারি বিতরণ কর্মসূচি আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার। জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্তকরণ সূচকে ‘০’ পেয়েছে।