logo
আপডেট : 23 February, 2018 21:59
ঢাকায় ধুলাদূষণে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব, বাড়ছে মানসিক রোগী
ঢাকা অফিস

ঢাকায় ধুলাদূষণে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব, বাড়ছে মানসিক রোগী

ঢাকার একটি রাজপথের দুপুরবেলার চিত্র।

ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। অভিজাত কিংবা সাধারণ এলাকা, সবখানেই মারাত্মক ধুলোয় সবাই দিশেহারা। সারা বছর যেমন-তেমন, শীত এলেই বাতাসে ধুলোর মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ।

প্রায় পৌঁনে দুইকোটি মানুষের ঢাকা শহর । এর বাইরে প্রতিদিন অন্তত তিন লাখেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করে এই শহরে। কিন্তু রাজধানীর বাতাস দিনকে দিন ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। দূষণের মাত্রা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। আর শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর একটিতে পরিণত হয় ঢাকা। এ সময়ে বায়ুদূষণের মাত্রা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে বেড়ে যায় ১৩ থেকে ১৬ গুণ। ফলে রাজধানীবাসীর বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক বিষণ্ণতা। এজন্য নগরীর অতিরিক্ত জনসংখ্যা, গাড়ির ধীরগতি, কারখানা আর এর আশপাশে ছড়িয়ে থাকা ইট ভাটাকেই দায়ী করছেন পরিবেশ গবেষকরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা বলছে, দেশের মোট আয়তনের মধ্যে ঢাকার আয়তন মাত্র ১ শতাংশ, অথচ এখানে বসবাস করছে, মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মানুষ। ২০১৪ সালে প্রতি ঘন মিটার বাতাসে যেখানে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড ছিল, ৩৩৯ মাইক্রোগ্রাম, তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৮ মাইক্রোগ্রামে। গেল এক দশকেই ঢাকার বাতাসের বিষাক্ত কার্বন বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ।

গবেষকরা বলছেন, শীতের এ শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বাতাসে ধুলোর সাথে উড়ছে, মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর সব রাসায়নিক পদার্থ। যা বয়ে আনছে অ্যাজমা, ফুসফুস, ক্যান্সারের মতো জটিল সব রোগ।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ু দূষণের মানদণ্ড পিএম ২.৫ মাইক্রোন অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে সহনীয় মাত্রা ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু ঢাকার বাতাসে আছে তারও কয়েকগুণ বেশি, অর্থাৎ ২৭৫ মাইক্রোগ্রাম। একই সঙ্গে বাতাসে বেড়েছে কার্বনডাইঅক্সাউড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন যৌগসহ অন্যান্য ক্ষতিকর কণার উপস্থিতিও।

জাতীয় বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালের তথ্য মতে, বছরের অন্যসময় শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর আসা-যাওয়া শ’ খানেক হলেও ধুলো ওড়ার এই শীত মৌসুমে তা চার থেকে পাঁচগুণ বেড়ে যায়।

জাতীয় বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান খান জানান, মানব শরীরের শ্বাসতন্ত্র, চোখ ও ত্বক সরাসরি বাতাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বায়ুদূষণের কারণে এগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্যদিকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) গবেষণায় জানা গেছে, কেবলমাত্র ধুলোর কারণে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ, পানি বা সময় অপচয় হয় তার আর্থিক মূল্য তিন থেকে দশ হাজার টাকার সমান। সংস্থাটির গবেষণা আরো বলছে, রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ এর আশপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটের ভাটাগুলো। শতাংশের হিসেবে যার পরিমাণ ৫৮ ভাগ। এছাড়াও গাড়ির ধোঁয়া ১৪ শতাংশ, পথের ধুলা ১৮ শতাংশ আর বাকি ১০ শতাংশের জন্য দায়ী কলকারখানা। শতাংশের হিসেবে ঢাকায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটের ভাটাগুলো যার পরিমাণ ৫৮ ভাগ। এছাড়াও গাড়ির ধোঁয়া ১৪ শতাংশ, পথের ধুলা ১৮ শতাংশ আর বাকি ১০ শতাংশের জন্য দায়ী কলকারখানা।

পবার সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, বায়ুদূষণের কারণে একটি পরিবারে ঘর পরিষ্কার, কাপড় ধোয়ার মতো দৈনন্দিন কাজ অনেক বেড়ে যায়। এতে একদিকে যেমন অর্থের অপচয়, অন্যদিকে তেমনি পরিবেশেরও অনেক ক্ষতি হয়।

এদিকে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দূষিত নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ২৩তম। ইউএনডিপির তথ্য বলছে, ঢাকার আশপাশে যত ইটের ভাটা রয়েছে তা থেকে প্রতিবছর ২,৫০০ টন পার্টিকুলেটেড মেটার, ১৫৫০ টন সালফার ডাই অক্সাইড, ২৫ হাজার টন কার্বন মনোক্সাইড, ৬০০ টন ব্ল্যাক কার্বনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান মিশছে, ঢাকার বাতাসে।

ঢাকার বাতাস ঠিক রাখতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তো বটেই, সচেতন হতে হবে খোদ ঢাকাবাসীকেও। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আতিক রহমান বলেন, ঢাকার বাতাস ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সরদার আতিক বলেন, বায়ু দূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। মানুষ অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, হাইপারটেনশন, এমনকি ডায়াবেটিসসহ, লিভার-কিডনির নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।  পাশাপাশি মানসিক হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভুগছে রাজধানীবাসী। ফলে দিনকে দিন মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে মেগাসিটি ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশ্লেষকেরা।

 

 

 

নিউইয়র্ক মেইল/বাংলাদেশ/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এইচএম