চীনের কোটি ডলারের বাণিজ্যিক প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’কে চ্যালেঞ্জ জানাতে বিকল্প বাণিজ্যিক রুট তৈরির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বিষয়টি জানিয়েছে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, নতুন এই পরিকল্পনা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার সময় আসেনি। অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টার্নবুলের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এই আলোচনা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচ্যসূচিতে টার্নবুল এসব বিষয় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এটাকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের ‘পাল্টা পদক্ষেপ’ না বলে ‘বিকল্প’ বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
চীনের মূল সিল্ক রোডের অস্তিত্ব ছিল প্রায় দুই হাজার বছর আগে। এটা ছিল বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। এর মধ্য দিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিনিময় হয়েছে। ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ চীনের প্রাচীন সমুদ্র ও সড়কপথের সিল্ক রোড পুনরুদ্ধারের প্রয়াস। যে রাস্তা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল। চীনের দাবি অনুযায়ী, নতুন ‘সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট’ও একই কাজ করবে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টার্নবুলের মুখপাত্র, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রী স্টিভেন সিওবো কেউই এই বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউই বলছেন না যে চীনের এই অবকাঠামো গড়ে তোলা উচিত নয়। আমরা বরং একটি বিকল্প পথ করতে চাই। হয়তো চীন ওয়ান বেল্টের আওতায় একটি বন্দর তৈরি করবে। আমাদের বিকল্প পথ সেই বন্দরে গিয়েই যুক্ত হবে। বাণিজ্যের সুযোগ পাবে অন্য দেশগুলোও।’
জাপানের মন্ত্রিসভার প্রধান সচিব ইউশিদে সুগাকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত নিয়মিতই এই বিষয়ে কথা বলে আসছে। তবে এটা কোনোভাবেই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডকে টেক্কা দেওয়ার জন্য নয় বলেও জানান তিনি।
২০১৩ সালে প্রথম ‘বেল্ট অ্যান্ড রোডে’র কথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর বাণিজ্য সম্প্রসারণে এই উদ্যোগ বলে দাবি করেন তিনি। এরপর থেকে অনেকবারই এই প্রকল্পের কথা বলে আসছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি আবারও এই পথ নিয়ে আলোচনায় বসেছে। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা। এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে এই রুট প্রয়োজন বলে দাবি তাদের।
নিউইয়র্ক মেইল/অস্ট্রেলিয়া/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এইচএম