logo
আপডেট : 27 February, 2018 13:25
বাংলাদেশে ভ্রমন
দেখতে পারেন হাওরের থৈথৈ পানি, যেন সাগরের ঢেউ
মেইল ট্রাভেল ডেস্ক

দেখতে পারেন হাওরের থৈথৈ পানি, যেন সাগরের ঢেউ

বাংলাদেশ পানিপ্রধান দেশ। এদেশে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল আর হাওর-বাঁওড়। বর্ষাকালে এসব বিল-হাওর পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। এদের প্রকৃত রূপ দেখতে হলে যেতে হবে বর্ষাকালে।

 

চারদিকে থৈথৈ পানি, সাগরের মতো ঢেউ আর দূরে দূরে ছোট ছোট হাওর দ্বীপ এসবই মুগ্ধ করবে মনকে। হাওর হলো এমন একটি বিস্তীর্ণ এলাকা, যেখানে বৃষ্টি মৌসুমে থৈথৈ জলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, সমুদ্রের মতো ঢেউ থাকে। আবার শীতকালে শুকিয়ে খোলা প্রান্তর হয়ে যায়। কোথাও ফসল চাষ করা হয়, কোথায় গবাদিপশু চড়ে বেড়ায়। বাংলাদেশে অনেক হাওর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হাকালুকি হাওর ও টাঙ্গুয়ার হাওর। বর্ষার মৌসুমে বেড়িয়ে আসতে পারেন হাওর দুটি থেকে।

 

হাকালুকি

হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। ২৩৮টি বিল ও নদী মিলে তৈরি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার একরের এ হাওর। বর্ষাকালে একে হাওর না বলে সমুদ্র বলা যায় অনায়াসে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ হাওরে নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্ষায় থৈথৈ পানিতে নিমগ্ন হাওরের জেগে থাকা উঁচু স্থানগুলোতে অনেক পাখি আশ্রয় নেয়। আর শীতের সময়ে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি মেলা বসায় হাওরের বুকে।

হাকালুকি নামকরণ নিয়ে কিছু কথা প্রচলিত আছে। জানা যায়, অনেক বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় এমনভাবে লুকি দেয় বা লুকিয়ে যায় যে, কালক্রমে ওই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি’, ধীরে ধীরে তা ‘হাকালুকি’-তে পরিণত হয়। আবার অনেকে এ মতের বিরোধিতা করেন। তাঁদের মতে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচণ্ড এক ভ‚মিকম্পে ‘আকা’ নামে এক রাজা ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি’ বা হাকালুকি। এখানে আরো কিছু মত প্রচলিত আছে, তবে একটিও পুরোপুরি তথ্যভিত্তিক নয়।

 

কীভাবে যাবেন: হাকালুকি যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উপবন এক্সপ্রেস উঠে যাওয়া। নামতে হবে মাইজগাঁও স্টেশনে। এটি সিলেটের ঠিক আগের স্টেশন। ভাড়া নেবে ৩৪০ টাকা। মাইজগাঁও থেকে দুটি উপায়ে যাওয়া যায় হাকালুকি।

ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার হয়ে মাইজগাঁও নামার পর গাছপালা ঘেরা একটা রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার। সকালবেলা হাঁটতে ভালোই লাগবে। আবার একটু অপেক্ষা করলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাবেন। তাতে করে ১০ মিনিটে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার। বাজারে নেমেই নৌকাঘাটে চলে আসুন। এখান থেকে নৌকা দরদাম করে উঠে পড়ুন সারা দিনের জন্য।

বড় গ্রুপ হলে (১০-১৫ জন) বড় ছইওয়ালা ট্রলার দিন। দিনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে তিন-চার হাজার টাকা, সাথে নিন কিছু খাবার এবং পানি। কারণ হাওরে কোনো দোকানপাট পাবেন না। এবার নৌকায় উঠে কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়ান। কুশিয়ারা পারি দিতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগবে।

 

গিলাছড়া বাজার হয়ে: কুশিয়ারা নদীর ৪০ মিনিট সেভ করতে মাইজগাঁও থেকে সরাসারি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে চলে আসতে পারেন গিলাছড়া বাজারে। এখান থেকেই হাওর শুরু। তবে সমস্যা হলো এখানে বড় নৌকা পাওয়া যায় না। নৌকা আনতে হবে সেই ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার থেকেই।

 

যা দেখতে পাবেন: পুরো হাওরই দেখার মতো। সমুদ্রের মতো বিশাল ঢেউ, চারদিকে পানি আর পানি। অনেক দূরে দূরে গ্রাম। চলে যেতে পারেন এমনি কোনো গ্রামে। সারা দুপুর কাটিয়ে বিকেলে ফিরে আসতে পারেন।

 

টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলায়। এ হাওর প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। টাঙ্গুয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভ‚মি। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি নয় কুড়ি কান্দা আর ছয় কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। এটি রামসার সাইটের অন্তর্ভুক্ত। এ হাওরে মেঘালয় পাহাড় শ্রেণি থেকে ৩০টির বেশি ঝরনা এসে মিশেছে।

টাঙ্গুয়ার হাওর বিভিন্ন পাখির নিরাপদ আবাসভূমি। বাংলাদেশি জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিও আবাস গড়ে এই হাওরে। এতে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। পরিযায়ী পাখির মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এই হাওরে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস ইত্যাদি পাখি থাকে। এ ছাড়া রয়েছে ২০০ প্রজাতির মাছ, যার মধ্যে মহাশোলের খুব নামডাক। শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে কমে গেলে এখানকার প্রায় ২৪টি বিলেরপাডর (স্থানীয় ভাষায় কান্দা) জেগে উঠলে শুধু কান্দার ভেতরের অংশেই আদি বিল থাকে, আর শুকিয়ে যাওয়া অংশে স্থানীয় কৃষকরা রবিশস্য ও বোরো ধানের আবাদ করে।

 

কীভাবে যাবেন: টাঙ্গুয়া যেতে হলে সবার আগে যেতে হবে সুনামগঞ্জ। যদি হাকালুকি থেকে যান, তবে মাইজগাঁও থেকে সিএনজি অটোতে করে প্রথমে যেতে হবে সিলেট। এর পর বাসে করে দুঘণ্টায় সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জের বৈঠাখালী ব্রিজ থেকে লেগুনা ও মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে ৩৫ কিলোমিটার দূরের তাহিরপুর। মোটরসাইকেল ভাড়া নেবে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তাহিরপুর থেকেই টাঙ্গুয়ার হাওর শুরু। আর ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী পরিবহনের বাসে করে সুনামগঞ্জ যাবেন। ভাড়া ৫০০ টাকা।

তাহিরপুর নেমে একটা নৌকা ভাড়া নিন সারাদিনের জন্য। ভাড়া পড়বে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা (সাইজ অনুযায়ী)। এর পর সারাদিন হাওরে ঘুরুন, গোসল করুন, বাগনি বর্ডার ও বারিক্কা টিলা যান এবং ফিরে আসুন। এ ছাড়া যেতে পারেন টেকেরঘাট পরিত্যক্ত চুনাপাথর প্রকল্পে। সবচেয়ে ভালো হয় হাওরে কোথাও রাত কাটান। রাত কাটানোর জন্য তাহিরপুরে একটি গেস্টহাউস রয়েছে। আগে যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে যাওয়া ভালো। এ ছাড়া তীরের কাছাকাছি কোথায় নৌকা রেখে তাতেও রাত কাটাতে পারেন।

 

সতর্কতা

হাওর ট্রিপে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন। আর একটা কথা হাওরে প্রচুর বজ্রপাত হয়। তাই বজ্রপাত শুরু হলে ভুলেও নৌকার ছাদে থাকবেন না। নৌকার ছৈয়ের নিচে অবস্থান নিন।

 

 

 

 

নিউইয়র্ক মেইল/বাংলাদেশ/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এইচএম