ঘুরে বেড়াতে চায় না, পৃথিবীর নিখুঁত বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য অবলোকন করতে চায় না- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। ভ্রমণে যাওয়ার আগে এবং পরে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক ভ্রমণ সম্পর্কিত কিছু টিপস-
১. ট্যুরে সারাদিন কী করবেন, তা আগেই একটি পরিকল্পনা করুন। এতে সারাদিনে সময় কিছু বাঁচবে, সব রকম পরিস্থিতির জন্যও আপনি মোটামুটি প্রস্তুত থাকবেন।
২. ট্যুরে ঠিক কত টাকা খরচ করবেন, সে ব্যাপারটি আগে থেকেই ঠিক করে নিন। তারপর বাজেট অনুসারে খরচ করুন। মানে রাখবেন, এ ক্ষেত্রে বেহিসাবি হলে আপনার সামনে হাজির হতে পারে নানা ঝুট-ঝামেলা থেকে শুরু করে বড় ধরনের দুর্যোগ।
৩. হোটেলে থাকলে হোটেল ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচের খোঁজ নিয়ে রাখুন আগে থেকেই। আর ক্যাম্প করলে সেটির উপযোগিতা ও নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়ে নিন।
৪. ট্যুরে সব কিছু যে সুষ্ঠু, সুন্দর হবে- এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। না চাইলেও সামনে পড়তে পারে অনাকাক্সিক্ষত নানা ঝামেলা। সেগুলো কীভাবে সামলাবেন, তার প্রাথমিক প্রস্তুতি আে থেকে নিয়ে রাখাই ভালো।
৫. কী কী খাবেন আর কোন সময়ে ঘুমাবেন- আপাতদৃষ্টিতে এ বিষয়গুলো অনেকেই গুরুত্ব না দিলেও এগুলো কিন্তু জীবনের অপরিহার্য অংশ। তাই এ সংক্রান্ত একটি তালিকা আগে থেকেই ঠিক করে নিন।
৬. টুরিস্ট রেস্টুরেন্টগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। যেখানে বেড়াতে গিয়েছেন সেখানে আশপাশে ঘুরে, স্থানীয় বসবাসকারীরা যেখানে খায় সেখানে খাওয়া-দাওয়া সারবেন। খরচটা কমবে উল্লেখযোগ্যভাবে।
৭. একদম ভ্রমণ মৌসুমে না গিয়ে একটু কম ট্যুরিস্টের সমাগম হয়, এমন সময়ে ভ্রমণে যান। গ্রীষ্মের ছুটি বা বছর শেষের শীতের বন্ধের সময়টি ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত মৌসুম বলে বিবেচনা করা হয়। একদম এ সময় না গিয়ে এর কাছাকাছি কোন সময়ে যেতে পারেন। তবে ভ্রমণ স্থানে অফ-সিজনে যাওয়াটা একদমই উচিত নয়।
৮. ঘুরতে গিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়া থেকে কোনো দর্শনীয় স্থানে পিকনিক করতে পারেন। এতে আপনি স্থানীয় সংস্কৃতি, রীতিনীতি খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করতে পারবেন।
৯. একটা শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের জন্য বাসই সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। ভ্রমণের স্থান সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে ট্যাক্সি বা রেন্ট-এ-কারে অনেক সময় অনেক অযাচিত অবস্থায় পড়তে হতে পারে।
১০. হেঁটে যাওয়া বাদ দিয়ে বাসে যাতায়াতই সবচেয়ে সাশ্রয়ী। আপনি যদি কোনো স্থানে ভ্রমণে গিয়ে রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন এবং নিজেই সে গাড়ি চালান, তাহলে একটু ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন থেকে ড্রাইভ করুন।
১১. কোথায় গাড়ি পার্ক করছেন এ ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকুন, কেননা চোরেরা ট্যুরিস্টের গাড়ি বুঝতে পারলে চুরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
১২. একটি দেশে ঘুরতে গিয়ে তার এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াতের সময় কোন পরিবহন ব্যবহার করবেন সে ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজখবর নিন।
১৩. পানির একটি বোতল সাথে রাখুন। রেস্টুরেন্ট বা হোটেল থেকে এই বোতলে পানি রিফিল করে নিন। তা না হলে আপনাকে পানি কিনে খেতে হবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, পানির বোতলের খরচ বাদ গেলেই দেখবেন আপনার একটা ভালো পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হয়েছে, যা আপনি শপিংয়ে ব্যয় করতে পারবেন।
১৪. অনেক ছোটখাটো, কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা ভ্রমণকালে নিতে ভুলে যাই। তা হতে পারে টুথব্রাশ, পেস্ট, শেভিং ক্রিম বা রেজার। কখনোবা ফোনের চার্জার। এ ক্ষেত্রে তা কেনার জন্য আপনাকে বাইরে যেতে হবে না। হোটেলেই এসব সামগ্রী অনেক পরিমাণে থাকে। হোটেল থেকেই আপনি নামমাত্র মূল্যে প্রয়োজনীয় এরকম সামগ্রী কিনে নিতে পারেন।
১৫. আপনি যদি গ্রীষ্মে কোথাও ভ্রমণ করেন বা উষ্ণ আবহাওয়ায় কোথাও ঘুরতে যান, তাহলে এমন কোনো হোটেলে উঠুন যেখানে গরম-ঠাণ্ডা উভয় পানির ব্যবস্থা না, শুধু ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থাই আছে।
১৬. কোনো দেশে ঘুরতে গেলে কম সময়ে সাশ্রয়ীভাবে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা উপায় হলো, চেষ্টা করুন ওই দেশি কোনো উৎসব বা ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ করতে। যেমন- ইন্ডিয়ার হোলি, ব্রাজিলের রিও ফেস্টিভাল, ইউএসএতে ক্রিস্টমাস ইত্যাদি।
১৭. যদি আপনি ভ্রমণের খরচটা বাঁচানোর সাথে সাথে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চান, তাহলে ভ্রমণকারী গ্রæপে বা বন্ধুরা দলবদ্ধ হয়ে ভ্রমণে যেতে পারেন।
১৮. এক শহর থেকে আরেক শহর বা দূরের পথ যদি আপনি ট্রেন বা গাড়িতে করে যান, তাহলে তা অবশ্যই রাতে করুন। এতে আপনার রাতে থাকার হোটেলের খরচও বেঁচে যাবে, আবার আপনি একটু অভ্যস্ত হয়ে গেলে গাড়িতেই ঘুমিয়ে নিতে পারবেন। তবে নিজের ব্যাগ ও মূল্যবান জিনিসপত্র সামলে রাখবেন।
১৯. অবশ্যই কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে ওয়েবসাইটে এবং ট্যুর গাইডবুক থেকে সে স্থান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। ট্যুরিজম ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সেখান সম্পর্কিত হোটেল বা এয়ারলাইনসে কী কী অফার চলছে, তা জেনে নিন এবং দাম তুলনা করে নিন।
২০. সবশেষে যে বিষয়টি কোনোভাবেই ভুললে চলবে না, তা হলো ফার্স্টএইড বক্স। জামা-কাপড়ের সাথে একটি ছোট পাউচে জ্বর, পেট খারাপ, অ্যাসিডিটি, বমি, মাথা ধরার ওষুধ নিয়ে নিন। আরো নিন ব্যান্ড এইড, অ্যান্টিসেপটিক, পরিমাণমতো তুলো ও গজ। এগুলো সাথে থাকলে অনেক বড় বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।