সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে ছুরি নিয়ে হামলা হয়েছে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর।
শনিবার বিকালে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ফেস্টিভ্যাল চলছিল ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবাল; সেখানেই তার উপর হামলা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিকাল ৫টায় মঞ্চে ওঠার সময় পেছন থেকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মঞ্চের পেছন থেকে এসে এক ছেলে ছুরি মারে গলা, বুক ও মুখের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশসহ অন্যরা তাকে আটক করে।’
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার পর এই তরুণকে ধরে পিটুনি দেয় শিক্ষার্থীরা।
আহত অবস্থায় অধ্যাপক জাফর ইকবালকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সন্ধ্যা ছয়টা ২৭ মিনিটের দিকে তাকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেয়া হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ড. জাফর ইকবালকে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি রয়েছেন। এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে দশটার পর তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (বিমান বাহিনী হেলিকপ্টার) সিলেট ওসমানী বিমান বন্দর থেকে ঢাকার পথে রওয়ানা করে। রাত সাড়ে এগারটার দিকে ঢাকায় পৌঁছায়।
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সার্বক্ষণিক তার খোঁজ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজের ক্যাম্পাসে আক্রান্ত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের মাথায় চারটি আঘাতের ক্ষত পেয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া তার বাঁ হাত ও পিঠ ছুরিকাঘাতের জখম হয়েছে।
ওসমানী মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক জানান, জাফর ইকবালের মাথায় চারটি আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া তার বাঁ হাত ও পিঠে ছুরিকাঘাতের জখম রয়েছে। তার শরীরে ২৫ থেকে ২৬টি সেলাই পড়েছে।
হামলাকারীর নাম ফয়জুল
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল (২৪)। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশের কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা ফয়জুর রহমান। তার মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে।
হামলাকারী যুবককে রাতেই র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে তাকে র্যাব-৯ এর হাতে তুলে দেয়া হয়। হামলাকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের একজন চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপরই জ্ঞান ফিরে আসে তার।
চিকিৎসা শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহম্মেদ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিবাদ সমাবেশ রোববার
বিজ্ঞান লেখক, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বৃহত্তম ফোরাম সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ন্যক্কারজনক এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে সাংস্কৃতিক জোট।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দেশের মুক্তচিন্তার মানুষদের ওপর এমন প্রকাশ্য হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আামার জানা নেই। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল শহিদ মিনারে সমাবেশ করবো। আমাদের দাবি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এমন ঘটনা যেন আর দেশে না ঘটে, আমরা তার নিশ্চয়তা চাই।
গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদ কর্মসূচি বিকালে
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করবে গণজাগরণ মঞ্চও।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে হামলার প্রতিবাদ জানাতে সমবেত হয়ে বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার সম্পূর্ণ দায় সরকারের’।
তিনি বলেন, জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিল সরকার। সুতরাং সরকারের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করেই এই হামলা হয়েছে। তাই এর দায় নিতে হবে সরকারেই। এই হামলার দায় সম্পূর্ণ সরকারের।
তিনি বলেন, কোনো রাজনীতিবিদের ওপর তো হামলা হয় না। শুধু লেখক আর মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের ওপর হামলা হয়। সরকার মনে করে যে এসব হামলাকারীর চেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যারা লেখালেখি করে তাদের ঠেকানো জরুরি।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র আরও বলেন, যতক্ষণ সরকার হামলার ব্যাপারে আন্তরিক অবস্থান না নেবে এবং হামলাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
রোববার বিকেল ৪টায় শাহবাগে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেন তিনি।
এই ঘটনায় এছাড়া প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ, শ্লোগান একাত্তর, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী এবং প্রগতিশীল জোটের নেতাকর্মীরা।
নিউইয়র্ক মেইল/বাংলাদেশ/৪ মার্চ ২০১৮/এইচএম