রাস্তায় হঠাৎ গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল বিকল হয়েছে? নষ্ট হলে অসহায় হয়ে বসে থাকা কিংবা ঠেলে বা অন্য গাড়ি দিয়ে টেনে মেরামত কারখানা বা দোকানে নেয়ার দিক ফুরলো এবার।
এমন সমস্যা থেকে উদ্ধারে এলো বিশেষ এক সেবা ‘যান্ত্রিক’ (http://zantrik.com) অ্যাপ। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত নিয়ে এসেছে ‘রোডসাইড হেল্প’ সার্ভিস। অর্থাৎ এই অ্যাপে যোগাযোগ করলে আপনাকে গাড়ি নিয়ে যেতে হবে না মেরামতের জন্য। মেরামতের কর্মীরা আপনার স্থানে এসেই কাজ করে দেবে।
স্মার্টফোনেই সহজেই যুক্ত হওয়া যাবে ‘যান্ত্রিক এর সঙ্গে। তবে এ জন্য একজন গ্রাহককে অবশ্যই ‘যান্ত্রিক এর সদস্য হতে হবে।
সেবাটি নিয়ে এসেছেন আল-ফারুক শুভ নামে এক সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের মার্চে রাস্তায় তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তার যে ভোগান্তি হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এই ধরনের সেবা দেয়ার কথা চিন্তা করেন। এরপর নিজস্ব সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট টিম নিয়ে খেটেখুটে বানান সফটওয়্যার। যোগাযোগ করেন গাড়ি ও মোটরসাইকেল মেকানিকদের সঙ্গে। চুক্তি হয় তাদের সঙ্গে। এরই মধ্যে সেবাটি চালু হয়েছে।
যান্ত্রিক এরই মধ্যে দেশব্যাপী ৭০০টিরও বেশি গাড়ি মেরামতের দোকান ও ওয়ার্কশপের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এই সংখ্যা।
কেবল ঢাকা নয়, দেশের প্রায় সব জেলাতেই মহাসড়কে সেবাটি পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলা শহর পর্যন্ত এই সেবা সম্প্রসারিত হবে।
এ জন্য গাড়ির জন্য বছরে দুই হাজার ৯৯৫ টাকা (মাসে ২৫০ টাকারও কম), অন্যদিকে মোটরসাইকেলের জন্য বছরে এক হাজার ৪৯৫ টাকা (মাসে ১২৫ টাকারও কম) ফি লাগবে। আর গাড়ি মেরামতের খরচ আলাদা।
তবে যে টাকা সদস্য ফি হিসেবে দিতে হবে, তার চেয়ে বেশি টাকা ছাড় পাওয়া যাবে। কারণ, যে কোন মেরামতে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে সারা বছরব্যাপী।
গাড়ি মেরামত ছাড়াও ঢাকার ভেতরে গাড়ির ধোয়া, পালিশ ও অন্য কোনো জরুরি সমস্যায় ‘যান্ত্রিক অ্যাপ থেকে হোম সার্ভিস পাওয়া যাবে। সার্ভিস পাওয়া যাবে হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রিক্যাল ও স্যানিটারি সমস্যায়ও।
এরই মধ্যে সেবাটি চালু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি জানিয়ে যান্ত্রিক এর প্রধান নির্বাহী শুভ বলেন, ‘বর্তমানে আমরা সীমিত পরিসরে কাজ করছি। সবকিছু গুছিয়ে এনে খুব শিগগির বড় পরিসরে উদ্বোধন করা হবে দেশের প্রথম ‘রোডসাইড হেল্প’ সার্ভিস প্রদানকারী অ্যাপ যান্ত্রিক।
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানার জন্য রয়েছে ‘যান্ত্রিক’ এর নিজস্ব ওয়েবসাইটঃ http://zantrik.com. অথবা কল সেন্টারে কথা বলে বিস্তারিত জানতে পারবেন গ্রাহকরা, যার নম্বর ০৯৬-০৬-৪০৪০৪০।
যেভাবে দেয়া হবে সেবা
স্মার্টফোনে ‘যান্ত্রিক’ অ্যাপটি ইনস্টল করা থাকলে ঝটপট সাহায্যের জন্য অনুরোধ পাঠানো যাবে। আর সাহায্যের অনুরোধ পাঠানোর সাথে সাথে গ্রাহকের অবস্থান জিপিএস এ নির্ণয় করা হবে। এরপর গ্রাহকের নিকটবর্তী অবস্থানে ‘যান্ত্রিক’ এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ওয়ার্কশপ থেকে টেকনিশিয়ানকে দ্রুততার সাথে পাঠানো হবে গ্রাহকের অবস্থানে।
‘যান্ত্রিক’ অ্যাপ এ অনুরোধ পাঠানোর আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে এই ‘রোডসাইড হেল্প’ পাওয়া যাবে। গ্রাহক সংখ্যা বাড়লে এটি ১৫ মিনিটে নামিয়ে আনার চেষ্টা হবে।
যান্ত্রিক এর প্রধান নির্বাহী জানান, গ্রাহক অনুরোধ পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমার সাপোর্ট সেন্টারের এডমিন প্যানেলে ম্যাপে তার অবস্থান দেখা যাবে। তখন তার সবচেয়ে কাছে সার্ভিস পার্টনার (ওয়ার্কশপ) এর সাথে গ্রাহকের যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হবে।
কেন সদস্য হতে হবে?
যান্ত্রিক এর প্রধান নির্বাহী শুভ বলছেন ‘রোডসাইড হেল্প’ অন্যান্য সেবার মতো নয়, যেখানে টেকনিশিয়ান তার সুবিধা অনুযায়ী গ্রাহক সেবার জন্য আসেন। এই সেবাটি দিতে হয় একটি জরুরি পরিস্থিতিতে। তখন টেকনিশিয়ানরা কোন কাজে যত ব্যস্তই থাকুক, সে কাজ থামিয়ে ‘রোডসাইড হেল্প’ এর কাজে তাদের পাঠানো হয়। কাজেই, এটি একটি ‘অগ্রাধিকার সেবা’। ‘মেম্বারদের বাইরে এ সেবা দিতে গেলে অনেকগুলো অনিশ্চয়তা থাকে, যে কারণে সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে এই এই সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়।’
দ্বিতীয়ত, এই সার্ভিসটি দেবার জন্য সারা দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক করতে হয়েছে বিপুল বিনিয়োগ করে। এর রক্ষণাবেক্ষণেও খরচ আছে প্রতি মাসে। তাছাড়া সফটওয়্যার ওয়েবসাইট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ও মেইনটেন্যান্স ছাড়াও কাস্টমার সাপোর্ট টিম, অফিস, মার্কেটিং, সবকিছুর খরচ মেম্বারশিপ ফি থেকেই নির্বাহ করা হয়। আবার কাজ না থাকলেও টেকনিশিয়ানদের একটি নির্দিষ্ট অংক মাসে অবশ্যই দিতে হয়।
তৃতীয়ত, বিশ্বের যেসব দেশে এই ধরনের সেবা আছে সেসব দেশেও শুধুমাত্র সদস্যদেরকেই এই সুবিধা দেয়া হয়, যদিও সেসব দেশে এই সেবা অনেক বেশি খরচের।
সদস্য ফি কীভাবে পরিশোধ করা যাবে?
অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড এ, কিংবা বিকাশ অথবা ব্যাংক হিসাবে একাউন্ট এ পরিশোধ করা যাবে মেম্বারশিপ ফি।
খরচ কেমন?
প্রতিবার সেবা নিতে মাসুল (সার্ভিস চার্জ) ৪৯৫ টাকা থেকে শুরু। কিন্তু সমস্যার ধরণ অনুযায়ী এই অংক বেশি হতে পারে। কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে গ্রাহক তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে সেখানেও যান্ত্রিক তার নিজস্ব হিসাব থেকে শর্ত সাপেক্ষে টাকা পরিশোধ করবে। পরে গ্রাহকের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।
যেভাবে এই চিন্তা মাথায় এলো
ঢাকাটাইমসকে ‘যান্ত্রিক’ এর প্রধান নির্বাহী এম এম আল ফারুক শুভ বলেন, ‘২০১৭ সালের মার্চের এক ভর দুপুরে নিজেই গাড়ি চালিয়ে গুলশান থেকে উত্তরায় ফিরছিলাম। হঠাৎ মাঝ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। উপায় কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না কী করব?। ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ফোন করলাম এক পরিচিত টেকনিশিয়ানকে। তিনিও ব্যস্ত থাকায় আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।’
“অনেক সময় পার হবার পর এক ভদ্রলোক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে সেই যাত্রায় রক্ষা পাই। কিন্তু মাথা থেকে সেই ভোগান্তির কথা ঝেড়ে ফেলতে পারলাম না। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পড়ালেখা শেষ করে তখন আমি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করি। নিজেরই প্রতিষ্ঠান ‘স্মার্ট অ্যাসপেক্টস’ তখন নানা ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করতো বিদেশি ক্লায়েন্টদের জন্য। এবার নিজেদের জন্যই সফটওয়্যার বানানোর কাজে হাত দিলাম। একটি দল গড়ে তুললাম। সেই দলটিই উদ্ভাবনী এই ধারণাকে পোক্ত করতে কাজ করেছে।’
শুভ বলেন, ‘যান্ত্রিকের সেবা সবার দ্বারে পৌঁছে দিতে এডমনি প্যানলে কাজ করে চলেছে একটি দল। যারা সফটওয়্যার, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং কাস্টমার সাপোর্টের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে আরেকটি দল কাজ করে যাচ্ছে মার্কেটিংয়ে। তবে কাজের গতির সঙ্গে ধীরে ধীরে দলও বড় হচ্ছে।’
‘যান্ত্রিক’ অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে নিচের ঠিকানা থেকে:
http://zantrik.com/app (অ্যানড্রয়েড)
http://zantrik.com/ios (আইফোন)
http://zantrik.com (ওয়েবসাইট)
সূত্র: ঢাকাটাইমস