logo
আপডেট : 6 March, 2018 23:25
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা : হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাচ্ছেন মেলানিয়া ?
বিশেষ প্রতিনিধি

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা : হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাচ্ছেন মেলানিয়া ?

আলোচিত এক পর্নো তারকার সাথে অবৈধ সম্পর্কের তথ্য ফাঁস হওয়ায় বেজায় চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মডেল স্ত্রী মেলানিয়া। প্রথমে এ নিয়ে মুখ না খুললেও অবশেষে সেই পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার স্টর্মির আইনজীবী এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলায় তিনি তিনি দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক বছর আগে   মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। ওই মামলার নথিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের জন্য যখন লড়াই করছিলেন তখন কয়েকজন নারী তাদের সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ করতে চাইলে ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেন তাতে হস্তক্ষেপ করেন। স্টর্মির দাবি, তার সঙ্গে ট্রাম্পের যৌনসম্পর্ক গোপন রাখার বিষয়ে কোনো ধরনের চুক্তি না হওয়াতে সেটি অকার্যকর। ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেন তাকে চুপ রাখতে প্রচেষ্টা চালান। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারিও প্রচেষ্টা চালানো হয়। মামলার নথি বলছে, ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ স্টেফ্যানি ক্লিফোর্ডকে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেন ক্লিফোর্ডের বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলসে মিথ্যা সালিশি শুরু করেন। কোনো ধরনের প্রক্রিয়া না মেনেই সেটি করেন কোহেন। ক্লিফোর্ডকে নোটিশও দেওয়া হয়নি। 

প্রথমে পাত্তা না দিলেও বিষয়টি নিয়ে মামলা হওয়ায় স্বামীর লাম্পট্যের দায় নিতে চাইছেন না মেলানিয়া। তাই এবার নাকি হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাচ্ছেন মেলানিয়া। এমন গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে আমেরিকার বাতাসে। আর ছড়াবেই না কেন-একাধিক পর্নো তারকার সাথে অবৈধ সম্পর্কের গোপন কথা ফাঁস হবার পর থেকে ট্রাম্পকে আর বেশি একটা পাত্তা দিচ্ছেন সাবেক এই মডেল স্ত্রী। ট্রাম্পের ফ্লোরিডা সফরে সঙ্গে না যাওয়া এবং অন্য কয়েকটি সফরে বিমান থেকে নামার সময় হাত ধরতে গেলে ট্রাম্পের হাত সরিয়ে দেয়া, জনসম্মুখে আগের মতো কথা না বলা, সব সময় মুখ গোমড়া করে রাখা, মেলানিয়ার একা অবকাশ যাপনে যাওয়ার ঘটনা গুজবের ডালপালা বেশি ছড়িয়েছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নিজেই এবিষয় নিয়ে সন্ধেয় আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ডিনারের সময়ে নিজের দাম্পত্যজীবনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কৌতুকে মেতে উঠেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিখ্যাত সব সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের সামনে  ট্রাম্প বেশ হাস্যচ্ছলেই বলেন, এরই মধ্যে অনেকগুলো লোক হোয়াইট হাউজ ছেড়ে চলে গেছে। সত্যি বলতে আমি বিশৃঙ্খলাই পছন্দ করি। এটি আসলেই মজার ব্যাপার। আমি ভাবছি এরপর কে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাচ্ছে ? স্টিভ মিলার (ট্রাম্পের উপদেষ্টা) নাাকি মেলানিয়া ?'
মজা করে বললেও ট্রাম্পের এই কথায় মানুষের সন্ধেহ আরো বাড়ছে স্লোভেনিয়ার সাবেক সুপারমডেলকে নিয়ে।পর্নো তারকা স্টর্মি ডানিয়েলস এর সাথে ট্রাম্পের অবৈধ  সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সেই সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছেন ট্রাম্পের আইনজীবী নিজেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন নিজেই স্বীকার করেছেন-নির্বাচনের আগে ওই পর্নো তারকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ওই পর্নো তারকা যাতে মুখ না খোলেন সেজন্য তার মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার ডলার। এসব তথ্য নিয়ে ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা। মাইকেল কোহেন প্রথম দিকে এসব খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও অবশেষে তিনি স্বীকার করেছেন অর্থ পরিশোধের বিষয়টি।

আইনজীবী বলেছেন, পর্নো তারকা স্টর্মি ডানিয়েলসকে তিনিই ব্যাংক মারফত ওই অর্থ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সেই অর্থ তাকে পরিশোধ করছেন না ট্রাম্প। ২০১৬ সালের অক্টোবরে কিভাবে ওই অর্থ হাতবদল হয়েছিল- সে বিষয়ে আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে । স্টর্মি ডানিয়েলসকে  আইনজীবী কোহেন ব্যাংক ব্যবহার করে ওই অর্থ পরিশোধ করেছিলেন। এরপর ডানিয়েলস চুপ মেরে যান।  ওই অর্থ যে ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল এক বছর পরে তা খতিয়ে দেখছে ব্যাংকটি। ওই পর্নো তারকাকে নিজের তহবিল থেকে যে অর্থ দিয়েছিলেন মাইকেল কোহেন তা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য দু’দফা ডেডলাইন মিস করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্প এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, তার নাগাল পাওয়া কঠিন ছিল মাইকেল কোহেনের জন্য। অবশেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ১২ দিন আগে ২৭ শে অক্টোবর তিনি অর্থ বুঝে পান। এসব কথা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন একটি সূত্র। ওই সূত্র আরো বলেছেন, অর্থ দেয়ার পর স্টর্মি ডানিয়েলসের প্রতিনিধিকে দূরে চলে যেতে হুমকি দেয়া হয়।  

সম্প্রতি এই পর্নো তারকাসহ আরো কয়েকজন পর্নো তারকা এবং বিভন্ন সেলিব্রেটিদের সাথে ট্রাম্পের অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আমেরিকাসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছেন মেলানিয়া। আগে প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট স্বামীর পক্ষ নিলেও এখন এ বিষয়টি এড়িয়ে চলছেন তিনি। এড়িয়ে চলছেন ট্রাম্পকেও। 

সর্বশেষ মঙ্গলবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই পর্নো তারকা মামলা করার পর থেকে নাকি মেলানিয়া মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। আপাতত হোয়াইট হাউজ ছাড়তে চাইছেন। ঘনিষ্ঠজনদের নাকি এমনই বলেছেন ফার্ষ্টলেডি।