শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘সমাজ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিষ্ঠুর হয়েছে যা কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সাথে যায় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘সমাজ তার জবাবদিহিতা হারিয়েছে বলে দীর্ঘসময় পার হলেও ত্বকি, তনুসহ এসব হত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না।’
বৃহস্পতিবার ‘তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৫ বছর’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ওই আলোচনাসভার আয়োজন করে।
বেঁচে থাকলে ত্বকির বয়স হতো ২২। কিন্তু সে চিরকালের জন্য কৈশোরের এই ছবিতেই আটকে আছে। সমাজের নিষ্ঠুরতা যে কেবল ত্বকিকে বাঁচতে দেয়নি, তা নয়, বরং ত্বকী হত্যার পাঁচ বছর পরে এসেও তার বাবাকে পূত্র হত্যার বিচার চেয়ে ব্যানারে লিখতে হয়েছে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার পাঁচ বছর।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা অথচ সেটা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, সমাজে প্রতিনিয়ত যে অপরাধ হচ্ছে ত্বকী হত্যা তার একটি প্রমাণ।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘একাত্তরে যুদ্ধ করে স্বাধীন হলাম কিন্তু আমরা দেখলাম এ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তি আসেনি। কেননা রাষ্ট্র আগের মতোই রয়ে গেছে। কেবল আগের মতো না তার আয়তনে ছোট হয়েছে কিন্তু তার চরিত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ত্বকী হত্যার মামলার ক্ষেত্রেও দেখি জবাবদিহিতা নেই। সবাই জানে কারা হত্যা করেছে।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে যেভাবে নারী গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে সেরকম ইতিহাস আমাদের নেই। বাংলাদেশে এখন শিশু ধর্ষণ হচ্ছে। ধর্ষণ করে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। এই যে বর্বরতা। এই বর্বরতার একটি অংশ হচ্ছে এই ত্বকীর হত্যা।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মতে বর্তমানে এমন এক সময় চলছে যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ত্বকীর মতো যে খুনগুলো হয়েছে সে খুনের হত্যাকারীদের বিচার ছাড়া আমরা অন্য কোনো কথা শুনতে চাই না। আপনারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা বন্ধ করেন। মাফিয়াদের পাশে দাঁড়ানো বন্ধ করেন। জনগণকে বোকা বানানো আর সম্ভব হবে না।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বি, সদস্য সচিব হালিম আজাদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন।