প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনমানের উন্নয়নে সরকারের একটি অভিনব পদক্ষেপ হলো 'ডিজিটাল আইল্যান্ড'। আশা করা হচ্ছে, এ প্রকল্পর মাধ্যমে হতদরিদ্রদের ভাগ্য খুলে যাবে।
এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলবিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
জয় জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য দ্বীপাঞ্চলেও তা করা হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের নিবন্ধটি প্রকাশ করা হলো:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত মহেশখালী একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। এখানে তিন লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। প্রত্যন্ত ও ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় দেশের দরিদ্রতম মানুষ বসবাস করে, যাদের চিকিৎসাসেবার সুযোগ মেলে না সব সময়। এখানকার শিক্ষার হারও দেশের গড় হারের চেয়ে কম।
তবে এটিই বাংলাদেশের প্রথম 'ডিজিটাল আইল্যান্ড'। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসেই এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মহেশখালী মূল জনপদ থেকে ১৪ মাইল দূরে। সেখান থেকেই ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে আনা হয়েছে ইন্টারনেট। সেখানকার স্কুলেও এখন এই সুবিধা রয়েছে। শিশুরা প্রথমবারের মতো বিশ্ব দেখছে ইন্টারনেটে। উচ্চগতির ওয়েব ভিডিওর মাধ্যমে এখন মূল জনপদের শিক্ষকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারছে শিক্ষার্থীরা।
মহেশখালীতে স্বাস্থ্যসেবাও উন্নত হয়েছে। এই ডিজিটাল দ্বীপে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিকে আলট্রাসনিক ডিভাইস যুক্ত করা হয়েছে। আরও সুবিধা আসছে। এতে করে এখান হাসপাতালগুলোর রোগীদের রিপোর্ট দেখতে পারবেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
মহেশখালী সব সময় লবণ তৈরি ও মাছ ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। তবে উদ্যোক্তারা মূল জনপদে গিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ কম পান। ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পের আওতায় সরকার সেখানে একটি ই-কমার্স কেন্দ্র খুলেছে, যেখানে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাবেন।
খুব শিগগিরই সেখানে সমুদ্রবন্দর ও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। অনলাইনের মাধ্যমেই বাসিন্দারা এখন চাকরির জন্য নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারে। এর ফলে তারা ভালো বেতনে চাকরি পাবেন এবং এখানকার অর্থনীতিই পাল্টে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মহেশখালী আমাদের সম্পদ, তবে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। কারণ এটা বিচ্ছিন্ন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, এই ডিজিটাল দ্বীপের সাফল্যের মডেল বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত অন্যান্য দ্বীপেও প্রয়োগ করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার যে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে তার একটি হচ্ছে এই ডিজিটাল আইল্যান্ড।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে পাঁচ হাজার ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্রও। প্রতি আড়াই মাইলের মধ্যেই একটি করে কেন্দ্র রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষকদের জন্যও একটি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অংশ নিয়েছেন প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার শিক্ষক। এতে করে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারছেন। এতে উন্নত হচ্ছে শিক্ষার মান।
বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটাতে এরই মধ্যে ফোরজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি আনা হয়েছে। বাংলাদেশে যখন মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের হার খুব দ্রুত বাড়ছে তখনই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। ২০১২ সালে তিন কোটি ১০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করত। আর এখন সেই সংখ্যা প্রায় আট কোটি, যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৫০ লাখ। ২০১২ সালে যা ছিল আট কোটি ৭০ লাখ।
এই অগ্রগতির কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এখন সহজ হবে। এমন সমন্বিত ডিজিটাল প্রচেষ্টার কারণে অপফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটও গত বছর বাংলাদেশে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখেছে। বিশ্বব্যাপী অনলাইন কর্মী সরবরাহে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। ভারতের পরই এদেশের অবস্থান। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিক্রয় ও বিপণনে সহায়তা এবং মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি।
মহেশখালীর শিশুদের জন্য এসব অভিনব প্রচেষ্টার মানে হচ্ছে স্কুল এখন আরও অনেক বেশি আনন্দের।
নিউইয়র্ক মেইল/বাংলাদেশ/১০ মার্চ ২০১৮/এইচএম