মনে করুন, ফেসবুক ব্যবহার করতে করতে আপনার হাঁচি চলে এল। বলে উঠলেন, ইস! এই ওষুধটা হলে কতই না ভালো হত। সাথে সাথে চলে এল সেই ওষুধটির বিজ্ঞাপন। কি, অবাক হলেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফেসবুক আপনার ফোনের স্পিকারের মাধ্যমে আপনাকে নজরদারি করছে কিনা, এই রকম কিছু কন্সপিরেসি থিওরি নিয়ে কথা বলেছেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পারসোনাল টেক কলামিস্ট জোয়ানা স্টার্ন।
আসলে বিষয়টি সত্য নয়। ফেসবুক আপনার মাইক্রোফোন অথবা আপনি ফেসবুকে কী দেখছেন সেটার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন দেয় না।
ফেসবুকের সাবেক কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণেই এটি চাইলেও করা সম্ভব নয়। তবে এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে যে আপনি নতুন একটি কর্মক্ষেত্রে গেলেন, আপনি হয়তো আপনার নতুন সহকর্মীদের ফেসবুক একাউন্ট সম্পর্কে জানেনও না, খুঁজতেও যাননি। কিন্তু ফেসবুক খুললে ঠিকই দেখবেন সাজেশনে আপনার নতুন সহকর্মীদের চেহারা ভেসে উঠেছে। অথবা ফেসবুকের বিজ্ঞাপনদাতারা আপনি অনলাইনে থাকুন কিংবা অফলাইনে, মাঝে মাঝে মনে হবে তারা আপনাকে অনুসরণ করছে।
আপনি হয়তো কোন সুপার শপ থেকে কোনো জিনিস ক্রয় করলেন, এখন ফেসবুক কীভাবে জানল আপনার সেই পারচেজ হিস্টরির কথা। আপনি যদি কোন লয়াল্টি কার্ড ব্যবহার করে কোন জিনিস ক্রয় করে থাকেন তাহলে আপনার সেই তথ্যটি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার প্রয়োজন মত পণ্যের বিজ্ঞাপন আপনার নিউজ ফিডে দেখাতে পারে।
আর সেটি করার জন্য কাজ করে থার্ড পার্টি ডাটা কালেক্টররা। থার্ড পার্টি ডাটা কালেক্টরদের কাছে সেই তথ্য কিনে থাকেন বিখ্যাত ব্রান্ডগুলো। ব্রান্ডগুলো সেই তথ্য তাদের ফেসবুক টুল ব্যবহার করে অফলাইন ডাটা মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে টার্গেট করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। এবং এভাবেই বিজ্ঞাপন আপনার নিউজ ফিডে চলে আসে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, লোকেশন হিস্টরি। ফেসবুকসহ অন্যান্য অ্যাপগুলো আসলে এক অর্থে আপনাকে অনুসরণ করে। কীভাবে করে? এটা করতে ফেসবুক নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে। আপনার ইন্টারনেটের আইপি এড্রেস ও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে আপনার লোকেশন হিস্টরি ফেসবুক জেনে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা আপনার অনুমতি নিয়েই আপনার লোকেশন হিস্টরি জেনে থাকে।
আপনি প্রায়ই দেখবেন কোন নতুন অ্যাপ খোলার জন্য কিংবা ফেসবুকের বিভিন্ন গেম খেলার জন্য আপনার ফেসবুকের ব্যক্তিগত তথ্যাদি জানতে চাওয়া হয়। আপনি কিন্তু সবসময়ই ‘এলাউ’ বাটনে চাপ দিয়ে থাকেন। এভাবে ও আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি ও লোকেশন হিস্টরি চলে যায় থার্ড পার্টি অ্যাপস ও গেমসগুলোর কাছে।
সর্বশেষ বিষয়টি হচ্ছে ইউজার অ্যাকটিভিটি। আপনি প্রায়ই ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয় বিষয়ে পড়েন, ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপসে ঢুকে থাকেন। আপনার সেই ইউজার হিস্টরি দেখেও ফেসবুক আপনার জন্য বিজ্ঞাপন বাছাই করে থাকে। এ সম্পর্কে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলে, আমরা আমাদের টার্গেটিং টুলকে এমনভাবে সাজিয়েছি যাতে বিজ্ঞাপনদাতারা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ করতে না পারেন। ব্যবহারকারীরা যেরকম বিজ্ঞাপন দেখতে চান সেরকম বিজ্ঞাপনই তারা দেখতে পাবেন।
তবে বিজ্ঞাপনের এই নজরদারি এড়াতে আপনি প্রথমে ফেসবুকের সেটিং অপশনে যান। সেখান থেকে ‘অ্যাডস’ এ ক্লিক করুন।
তারপর সেখান থেকে ‘ইন্টারেস্ট বেইজড অ্যাড’ অপশনটি ‘ টার্ন অফ’ করে দিন। অন্যদিকে আইফোন ব্যবহারকারীরা নিজেদের সেটিং অপশনের ‘প্রাইভেসি’ তে গিয়ে অ্যাডভার্টাইজিং অপশনটি ক্লিক করে ‘লিমিট অ্যাড ট্র্যাকিং’ বাটনটি চালু করে দিতে পারেন।
এইসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন থেকে আপনি কিছুটা হলেও দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন।