হাইকোর্টের জামিন আদেশের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার কারামুক্তি-প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। কিন্তু এরইমধ্যে হাইকোর্টের সে জামিন আদেশ আপিল বিভাগে স্থগিত হওয়ায় এই মুক্তি-প্রক্রিয়া আপাতত থেমে গেছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
এরআগে বিচারিক আদালতের নথি পাওয়ার পর গত ১১ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা চারদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ছুটে বেড়িয়েছেন হাইকোর্ট থেকে চেম্বার জজ আদালত। সবশেষে আপিল বিভাগেও।এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৪ মার্চ) ছিল খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ স্থগিত চাওয়া রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপিল আবেদন শুনানির নির্ধারিত দিন।এ দিন আপিল বিভাগ শুনানির শুরুতেই দুদকের শুনানি নিয়ে তাদের হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সিপি (লিভ টু আপিল বা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে নির্দেশ দেন। তখন দুদকের আইনজীবী সিপি ফাইল করতে আগামী রবিবার বা সোমবার পর্যন্ত সময় আবেদন করেন। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রাখার আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিপি ফাইল করতে আগামী রবিবার (১৮ মার্চ পর্যন্ত) দুদককে সময় দেওয়াসহ ওইদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রাখেন।
তবে আসামীপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য না শুনে এ স্থগিতাদেশ দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া আইনজীবীরা। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আসামিপক্ষের বক্তব্য না শুনে এভাবে একতরফা আদেশ দেওয়ার ঘটনা সর্বোচ্চ আদালতে নজিরবিহীন ঘটনা।’
আপিল বিভাগের এই আদেশের পর বুধবার দুপুরে (১৪ মার্চ) চেম্বার বিচারপতির কাছেও আপিল বিভাগের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এসময় তার আইনজীবীদের আবেদন অ্যাফিডেবিট আকারে জমা দিতে নির্দেশ দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পরে আবেদনটি জমা দিলে চেম্বার বিচারপতি আগামী রোববার (১৮ মার্চ) দুদকের লিভ টু আপিলের সঙ্গে জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চাওয়া আবেদনেরও শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।
ওইদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই উভয় আবেদনের (দুদক ও আসামীপক্ষের) ওপর শুনানি হবে। এরফলে এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার জামিনে বেরিয়ে আসার সব প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশের পর খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা জানতে চেয়ে কথা হয় খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ১৩ মার্চ খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ সংশ্লিষ্ট আদালতে পৌঁছেছে। এরপর সেখানে জামিননামায় স্বাক্ষর করা হবে। সেই জামিননামা হাতে পাওয়ার পর বিচারিক আদালত সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি রিলিজ অর্ডার পাঠাবেন। তারপর খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। কিন্তু আপিল বিভাগ হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করায় জামিনের এই প্রক্রিয়াটি পরবর্তী আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত স্থগিতই থাকবে।’
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশের পর জামিনের সব প্রক্রিয়া থেমে থাকবে। তবে আমরা এই আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছি। রবিবার (১৮ মার্চ) সে আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তাদের আদেশ প্রত্যাহার করবে বলে আশা করছি। ফলে সেদিন থেকে খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়াটি আবার সচল হবে। তিনি জামিনে মুক্ত হবেন।’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লায় দায়ের করা নাশকতার মামলার জামিন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘কুমিল্লার মামলায়ও খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি সেখানের আদালতেও তিনি জামিন পাবেন।’