হঠাৎ করেই বেজে উঠল ঋতজার ফোন। অসময়ে ফোনের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে অনুরাগ বলে উঠল- কে এমন অসময়ে ফোন করছে বলোতো, একটা তো ছুটির দিন সেটাও ফোনের জ্বালায়, উফফ!
আমি দেখছি, বলে ফোন নিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল ঋতজা। স্ক্রিনে দেখল অচেনা নম্বর উঠেছে। একটু বিরক্ত হয়ে বলল- হ্যালো।
ওপারে দীর্ঘ বিরতির পরে ভারী কন্ঠস্বরে বলে উঠল- শুভ জন্মদিন সোনা।
অবাক হয়েও একটু সামলে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল- কে বলছেন?
আবার নীরবতা।
এবার একটু জোরেই- হ্যালো, কে বলছেন? কেটে গেল লাইন।
ঘরে ফিরে আসতেই অনুরাগ জানতে চাইল কে ফোন করেছিল? এত সকালে কি কথা হচ্ছিল এতক্ষণ? ঋতজা বলল- ফোন কেটে গেল।
ছুটির দিন মানেও ব্যস্ততা কম থাকেনা ঋতজার, পছন্দমত জলখাবার তৈরী থেকে শুরু করে ঘর গোছানো সমস্ত কাজ তোলা থাকে। সাড়ে আটটা বাজতেই এসে গেল রান্নার লোক। সন্ধ্যা ওকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসল ঋতজা। অনুরাগ তখনও পেপার পড়ছে। মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি কে ফোন করেছিল, জন্মদিন সেটাই বা কি করে জানল!
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল তবুও ওকে একবারও শুভেচ্ছা জানালো না অনুরাগ। সে কি এতটাই অপ্রয়োজনীয় এত উদাসীনতা মাঝে মাঝে বিদ্রোহী করে তোলে ঋতজাকে ক্রমশঃ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল তবুও অনুরাগের কিছু মনে পড়ল না। সন্ধ্যায় মাসি যখন ডাল ভাত ভাজা গলদা চিংড়ি ও মাংসের বাটির পাশে চুপিচুপি পায়েস এনে রাখল তখনও কিছু বুঝল না অনুরাগ। একটা সময় পরে নিজেই বিরক্ত হয়ে গা ঝাড়া দিল ঋতজা। নিজেকে একটু শাসন করে বলল, কেন এত ভাবছে? কেন এত এক্সপেক্টেশন জীবন ও সম্পর্কের কাছে? ধুসর একটা পাটভাঙা শাড়ি পরে চুলে আলগা খোঁপা করল সে। পছন্দের সুগন্ধি মেখে দাঁড়ালো অনুরাগের সামনে। কিছু বলার আগেই বেজে উঠল ডোরবেল।
হৈ হৈ করে ঘরে ঢুকল আকিব, নেহা, আরজু, মিসাবা ও বলবীর। সকলে একসাথে ঋতজাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। ঋতজা দেখল ওরা খাবার ও শ্যাম্পেন নিয়ে এসেছে। অনুরাগের চোখে চোরাহাসি। সে বলে- কি কেমন লাগল সারপ্রাইজ ম্যাডাম? সব বন্ধুরা কেক সাজিয়ে ঋতজাকে দিয়ে কেক কাটিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করল। অজান্তে যেন পৌঁছে গেল কলেজের ফেলে আসা দিনগুলোতে।
বেশ জমেছে আড্ডা এমন সময় অনুরাগ বলে উঠল আজকাল ম্যাডামের অনেক ফ্যানফলোয়ার আছে, ভোর থেকেই ফোন।
আরজু অবাক হবার ভান করে বলল- তাই বুঝি, তো ঋতজা কি বলল? অনুরাগ মুচকি হেসে বলে- ও তো বলল লাইন কেটে গেছে। আরজু বলে- কেন ওকে তো শুভেচ্ছা জানালো। একথা শোনার পরে লাফ দিয়ে উঠল ঋতজা। গুমগুমিয়ে কিল দিয়ে আরজুকে বলল- ওরে শয়তান ওটা তুই? আমিতো পুরো চমকে গেছিলাম, শালা!
হাসি গান আড্ডা মজায় জমে উঠল আড্ডা এবং নতুন করে শুরু হল অনুরাগ ঋতজার দাম্পত্য জীবন।।।।