logo
আপডেট : 19 March, 2018 02:18
নজরদারির এক অভিনব পন্থা ‘সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম’
মেইল ডেস্ক

নজরদারির এক অভিনব পন্থা ‘সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম’

কখনো কি ভেবেছেন যে, চুরি করার আগে চোর সনাক্ত করা যাবে? যেখানে অপরাধীর ওপর নজরদারী করতে কতনা দারোয়ান, গুপ্তচর, গোয়েন্দা, পুলিশ ও সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়। আছে আরও কত না আয়োজন। তার পরও মানুষ অপরাধীর কাছে অসহায় কারণ তারা তাদের সুযোগ মতই অপরাধ করে । চোরতো কখনো পুলিশকে বা মালিককে জানিয়ে চুরি করেনা। তবে কি এবার মানুষের ব্রেনের ওপর নজরদারী করা হবে?

অবাক হলেও সত্য যে, দেশের নাগরিকদের ওপর নজরদারী করতে ‘সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম’ (এসসিএস) নামে অভিনব এক পদ্ধতি চালু করছে চীন। এ পদ্ধতিতে প্রশাসনকে অপরাধী ধরতে অপরাধ সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। নাগরিকদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে শ্রেণিবিন্যাসও করা হবে এই পদ্ধতিতে। নাগরিকদের শতভাগ নিরাপত্তা দিতে সরকার পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে সরকারি কর্মকর্তারা।

তবে কী সেই প্রযুক্তি! যার মাধ্যমে তারা তাদের নাগরিকদের চোখে চোখে রাখতে পারবে? যদিও ফোন ট্রেকিং, ভয়েস ট্রেকিং ও অবস্থান ট্রেকিংয়ের প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই পুরনো হয়েগেছে। তাহলে কিভাবে তারা অপরাধ করার আগেই অপরাধী সনাক্ত করতে পারবে। হ্যাঁ, চীন এমনই একটি অভিনব পদ্ধতি চালু করছে যাতে মানুষের চিন্তাকে অনুসরণ করা যাবে। সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম নামের নতুন প্রকল্পের আওতায় তারা তাদের নাগরিকদের পূর্ণাঙ্গ তথ্যের ওপর একটি সমৃদ্ধ তথ্য ভা-ার তৈরি করবে। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের খুঁটিনাটি সমস্ত তথ্য জমা থাকবে যা প্রয়োজন মত ব্যবহার করা হবে। নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের ভা-ার নিয়মিত আপডেট করা হবে ও এর ভিত্তিতে জনগণের শ্রেণিবিন্যাসও করা হবে । এই শ্রেণিবিন্যাসের ওপরই নির্ভর করবে তার জীবনমান কেমন হবে, সে সরকার থেকে কতটুকু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে আর সরকারের কি কি অধিকার সে ভোগ করতে পারবে। শ্রেণিবিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে আগামী মে থেকেই বিমান ও ট্রেনের টিকেট ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু হবে বলে জানিয়েছে চীনের ‘ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট এ- রিফর্মেশন কমিশন’।

সম্প্রতি তারা এক ধরণের গ্লাসের ব্যবহার শুরু করেছে যার মাধ্যমে কারো সামনে দাঁড়িয়ে তার পরিচয় বলে দেয়া যাবে। সে কোন অপরাধে অপরাধী কিনা বা তার নামে কোন অভিযোগ আছে কিনা তাও নিশ্চিত করবে। এই চশমাটি তারা গাড়ির নম্বর প্লেট জালিয়াতি ধরতে, ভূয়া পরিচয় পত্র সনাক্তকরতে ও নাগরিকদের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেতে ব্যবহার করছে। এটি যেকোন অপরাধী সনাক্ত করতে ও সন্দেহভাজন মানুষদের পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে বেশ সহযোগিতা করছে। শুধু কি তাই? প্রশাসন এটি বাস, ট্রেন ও বিমানে ভ্রমনকারী ভুয়া যাত্রী সনাক্ত করতেও ব্যবহার করছে। যা তাদের সকল যাত্রীদের মধ্যে যেমন স্বচ্ছতা নিয়ে আসছে আবার অন্য দিকে নাগরিকদের মাঝে যথেষ্ট ভিতিরও সঞ্চার করছে।

সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেমে সরকার তাদের নাগরিকের প্রদত্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নাগরিকদের চলা-ফেরা, বন্ধুত্ব ও শত্রুতার উপরও নজর রাখতে পারবে এমনকি ফেসবুকে লাইক-কমেন্টও চোখ রাখা হবে। কে কাকে অনুসরণ করছে কার আলোচনা পছন্দ করছে বা কার মতাদর্শে গড়ে উঠছে তাও অনুসরণ করা হবে এ পদ্ধতিতে। অন্যের সাথে যোগাযোগের ধরণ ও যোগাযোগকারী ব্যক্তির তথ্যের ওপর নজরদারি করে তার সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছে প্রশাসন। যার ওপর ভিত্তি করে অপরাধের মাত্রা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যাবে বলে আশা করছে সরকার। ভাবতে পারেন? যে মানুষটি সকালে অপরাধ করার নিয়তে রাতে ঘুমিয়েছে সে সকালে নিজেকে ঠিক কারাগারে বা পুলিশের কাস্টডিতে আবিষ্কার করবে। তার রাতের যোগাযোগ ও কথা বার্তা যা সে অন্যের সাথে শেয়ার করেছে তাই তাকে পুলিশ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।

এপদ্ধতিতে আরো ধরা পড়বে মানুষের সন্ত্রাসী আচরণ, তার অপরাধমূলক কথা, কাজ ও ভুল তথ্য ছড়ানোর মত অপরাধও। এমনকি বাদ যাবে না নাগরিকরা প্রাত্যহিক জীবনে কি কি ক্রয় করছে এবং কোনভাবে অর্থের অপব্যবহার করছে কিনা তার ওপর নজরদারিও। প্রকল্পটি ২০১৪সালের জুনে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ কাজ শেষে হতে ২০২০সাল লেগে যেতে পারে বলে সরকারি দফতর থেকে জানানো হয়েছে।

শুধু কি চীন? শুনে হয়তো অবাক হবেন, পৃথিবীর আরো কত জায়গায় এমন নজরদারি করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৪সালে তার নির্বাচনী অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য রাজনৈতিক ডাটা কোম্পানী ‘ক্যামব্রিজ এনালিটিকা’কে ভাড়া করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫কোটি নাগরিকের ফেসবুক একাউন্ট থেকে তথ্য চুরি করেছিল বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ্এর মাধ্যমে কে কাকে ভোট দিচ্ছে তা তারা আগাম জানতে পেরেছিল বলে সম্প্রতি কোম্পানীটির সাবেক একজন কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার ওয়াইলি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের নাগরিকদের তথ্যের ভিত্তিতে গত বছর প্রায় ৬.১৫মিলিয়ন নাগরিকের ওপর বিমান ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। যারা তাদের সামাজিক অপরাধের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছিল।

সূত্র: দ্য ভার্জ, উইয়ার্ড