বিজয় কি-বোর্ডের আদলে ২০০৪ সালে প্রণীত জাতীয় কি-বোর্ডের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কম্পিউটারের বাংলা বর্ণমালা ও চিহ্নসমূহের এএসসিআইআই (ASCII) মান পরিবর্তন করে বিজয়ের মানে তৈরি করা হয়েছে।
জাতীয় কি-বোর্ডকে আধুনিকায়ন করার এই উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।
বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত জাতীয় কি-বোর্ডকে আধুনিক করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে ‘তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রমিতকরণ-সংক্রান্ত কমিটি’। এবছরের ২৮ জানুয়ারি ওই কমিটির এক সভায় বিজয়ের আদলে তিনটি মানের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে ছিল- বাংলা বর্ণমালা ও চিহ্নের কোডসেট বিডিএস ১৫২০:২০১১ (BDS 1520:2011) হালনাগাদ, বাংলা কম্পিউটার কি-বোর্ড এর মান বিডিএস ১৭৩৮:২০০৪ (BDS 1738:2004) এর আধুনিকায়ন এবং বাংলা বর্ণমালা ও চিহ্নসমূহের বিএসসিআইআই (BSCII) উন্নয়ন।
কমিটির অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর জানান, বর্তমান জাতীয় কি-বোর্ডের সঙ্গে প্রস্তাবিত কি-বোর্ডে তেমন পার্থক্য নেই। শুধু কয়েকটি ‘কি’ (বাটন) যোগ করা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে এই কি-বোর্ড চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নতুন কি-বোর্ড ও মান পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনে (বিএসটিআই) পাঠানো হলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তা অনুমোদিত (BDS 1738:2018) হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক সাজ্জাদুল বারী।
এই কি-বোর্ড নিয়ে কমিটির অন্যতম সদস্য ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনসুর মুসা বলেন, এটি হবে একটি জনবান্ধব জাতীয় কি-বোর্ড। এটি সম্পাদনার ক্ষেত্রে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত কি-বোর্ডগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে সবার মতামত নিয়েই সময়োপযোগী একটি কি-বোর্ড করা হয়েছে।
এর আগে ২০০৩ সালে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা ব্যবহার প্রমিতকরণ করে এর স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করার জন্য ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন গবেষণা ও যাচাই বাছাই করে ওই কমিটি ২০০৪ সালে জাতীয় কি-বোর্ড (BDS 1738:2004) এবং এএসসিআইআই (ASCII) প্রণয়ন করে। কমিটির সুপারিশ পরবর্তী সময়ে বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
এদিকে বিজয় কি-বোর্ডের লে-আউট এবং বিজয় সফটওয়্যারের এএসসিআইআই (ASCII) চার্ট ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিজয় সফটওয়্যারের প্রণেতা এবং বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে চিঠি দেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকার।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় বাংলা কি-বোর্ড সংক্রান্ত খসড়া মানটি বিজয় কি-বোর্ডের প্রচলিত লে-আউটের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণভাবে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। একইভাবে বাংলা বর্ণমালা ও চিহ্ন লেখার জন্য প্রণীত খসড়া মানটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিজয় বাংলা সফটওয়্যারে ব্যবহৃত এএসসিআইআই (ASCII) চার্ট অনুসরণ করা হয়েছে।
চিঠির উত্তরে ১১ ফেব্রুয়ারি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমার মেধাসম্পদকে জাতীয় মান হিসেবে গ্রহণ করায় আমার কোনো আপত্তি নাই।’
তবে বিজয় কি-বোর্ড, বিজয় বাংলা আসকি কোড ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত ও প্যাটেন্টকৃত দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই মেধাসম্পদ ব্যবহার করার জন্য মেধাসম্পদের মালিক নিম্নস্বাক্ষরকারীর (মোস্তাফা জব্বার) কাছ থেকে লিখিত লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। লাইসেন্স গ্রহণ সাপেক্ষে আমি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে আমার উদ্ভাবিত, কপিরাইট ও প্যাটন্টকৃত মেধাসম্পদ ব্যবহার করতে দিতে সম্মত রয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে বিজয় সফটওয়্যারের প্রণেতা এবং বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এর আগে বিজয় কি-বোর্ড নকল করে একটি জাতীয় কি-বোর্ড তৈরি করা হয়েছিল। সেটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এবার স্বীকৃতি দিয়ে আমার মেধাসম্পদ ব্যবহার করে বিজয় কি-বোর্ডের আদলে জাতীয় কি-বোর্ডের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রমিতকরণ সংক্রান্ত কমিটির এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজটি হয়েছে।
জাতীয় কি-বোর্ডের আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এর সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, পৃথিবীতে এ ধরনের কাজগুলো সবসময় ‘আপডেট’ করা হয়। যাতে আর্কাইভ ঠিক থাকে। অর্থাৎ নতুন কিছু থাকলে সেটি যোগ করা হয় মাত্র। কিন্তু এখানে বিদ্যমান মানকেই পরিবর্তন করে ফেলা হচ্ছে। ফলে নতুন পদ্ধতিতে পুরনো বই-পত্র, দলিল আর কাজে লাগানো যাবে না। নতুন করে অনেক কিছু করতে হবে।
জাতীয় কি-বোর্ড ব্যবহারকারী হিসেবে মুনির হাসান বলেন, আমি কম্পিউটারে জাতীয় কি-বোর্ড ব্যবহার করে বাংলা লিখি। যার মাধ্যমে আমার ৫টি বই বেরিয়েছে। আমার মতো অনেকেই এই কি-বোর্ড ব্যবহার করছেন। বর্তমান জাতীয় কি-বোর্ড ও এর মান পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করলে আমার মতো ব্যবহারকারীরা সমস্যায় পড়বেন।