logo
আপডেট : 31 March, 2018 01:30
জরিপে একাত্তরের গণহত্যার নতুন তথ্য
মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হয়েছিল ১৭৫২
ঢাকা অফিস

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হয়েছিল ১৭৫২

সম্প্রতি এক জরিপে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর সংঘটিত গণহত্যার নতুন তথ্য এসেছে। ১০ জেলার এক জরিপে মিলেছে এক হাজার ৭৫২টি গণহত্যার তথ্য।

শুক্রবার বাংলা একাডেমিতে এক সেমিনারে ‘১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট’র করা জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

জরিপের তথ্য তুলে ধরে ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বিভিন্ন বইয়ে সারাদেশে গণহত্যার সর্বোচ্চ সংখ্যা পাওয়া যায় ৯০৫টি। কিন্তু জরিপে ১০ জেলাতেই এক হাজার ৭৫২টি গণহত্যার ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। আর গণহত্যার স্থানের সঙ্গে বধ্যভূমি ও গণকবর মিলিয়ে ১০ জেলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ১০৭টি। দশ জেলায় সংখ্যা যদি হয় ২ হাজার ১০৭টি, তাহলে ৬৪ জেলায় সে সংখ্যা কত দাঁড়াতে পারে? শহীদের সংখ্যা কি ৩০ লাখে সীমাবদ্ধ থাকে?’

১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের এই জরিপ চালানো হয়েছে খুলনা, রাজশাহী, নীলফামারী, বগুড়া, নাটোর, কুড়িগ্রাম, পাবনা, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ ও ভোলা জেলায়।

মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘জরিপে গণহত্যার সঙ্গে বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিত করার কাজও করা হচ্ছে। আগের বইপত্রগুলোতে খুলনার গণহত্যাকে ক্রিসেন্ট জুট মিল হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের যুক্তি হচ্ছে, সেখানে তো একদিন গণহত্যা চালানো হয়নি। প্রায় প্রতিদিন হয়েছে। সুতরাং প্রতিবার হত্যাকেই আলাদা হিসেবে ধরেছি আমরা।’

এই হিসেবে সেখানে যুদ্ধের ২৬০ দিনে গণহত্যার সংখ্যা একটি না ধরে ১০০টি ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জরিপে দশ জেলার মধ্যে গণহত্যার সবচেয়ে বেশি ঘটনা পাওয়া গেছে খুলনায়; সেখানে ১ হাজার ১৫৫টি গণহত্যা, ২৭টি বধ্যভূমি, ৭টি গণকবর এবং ৩২টি নির্যাতন কেন্দ্রের তথ্য পাওয়া গেছে।

আগের গবেষণাগুলোতে নীলফামারীতে ৫-৬টি জায়গায় গণহত্যার কথা বলা হলেও এবারের জরিপে উত্তরের এ জেলায় গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫টিতে।

এছাড়া রাজশাহীতে ১৮টির জায়গায় ২৬২টি, বগুড়ায় ১৪টির জায়গায় ১৩৯টি, নাটোরে নয়টির জায়গায় ১২৬টি, কুড়িগ্রামে সাতটির জায়গায় ৮৪টি, পাবনায় ২১টির জায়গায় ১২৬টি এবং সাতক্ষীরায় সাতটির জায়গায় ৪১টি গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের তথ্য এসেছে এই জরিপে। নারায়ণগঞ্জ ও ভোলায় এই সংখ্যা পাওয়া গেছে যথাক্রমে ২৮৮ ও ৭৪টি করে।

এ জরিপের উপর ভিত্তি করে ১০ জেলার নামে আলাদা করে ‘গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ’ নামে ১০টি বই প্রকাশ করেছে ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধি বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির দ্রুত ‘গণহত্যা অস্বীকার আইন’ প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতি রোধে এখনও আইন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা তা দাবি করে আসছি, কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটছে না। আইন কমিশন একটি খসড়া তৈরি করে দিয়েছে অনেক আগে। সেটা এখনও পাস করা হয়নি।’

‘গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সেমিনারের প্রথম অধিবেশনে অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও শিল্পী হাশেম খান।

পরে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক এবং খুলনায় ১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী কাজল আব্দুল্লাহ।