মেইল রিপোর্ট :
মিয়ানমার থেকে যেভাবে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে, তার বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন হেগের ওই আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ফাতোও বেনসৌউদা। তিনি এ বিষয়ে একটি রুল চেয়ে গত সোমবার আইসিসিতে আবেদন করেছেন।
আইসিসি এই বিচারের এখতিয়ার রাখে বলে রুল পাওয়া গেলে রোহিঙ্গা বিতাড়নের ঘটনার তদন্ত করার পথ তৈরি হবে ফাতোও বেনসৌউদার সামনে; অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক দেশ ত্যাগে বাধ্য করা, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় মিয়ামনারকে বিচারের মুখোমুখি করার পথ খুলবে।
আবেদনে ফাতোও বেনসৌউদা বলেছেন, জোর করে কোনো দেশের বাসিন্দাদের আন্তর্জাতিক সীমানার বাইরে ঠেলে দেওয়া সব দিক থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পড়ে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার একে জাতিগত নিধন অভিযানের উদাহরণ বলে বর্ণনা করেছেন এবং মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত একে গণহত্যার সব চিহ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আওতায় পড়লে কৌঁসুলির দপ্তর তদন্ত করে অভিযোগ আনতে পারে।
ফাতোও বেনসৌউদা আবেদনে বলেন, ‘এটি বিমূর্ত কোনো প্রশ্ন নয়, এই আদালত ওই ঘটনার তদন্ত এবং সম্ভব হলে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে কি না, তা সরাসরি জানতে চাচ্ছি। যদিও এখানে আদালতের আওতা নিয়ে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এই আদালতের সদস্য, কিন্তু মিয়ানমার সদস্য নয়। কিন্তু এর পরও আদালত বিষয়টিকে আওতাভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে; যেহেতু আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে অপরাধটি ঘটছে এবং আদালতের সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড তার শিকার হচ্ছে।’
অবশ্য আন্তর্জাতিক আইনে দেশত্যাগে বাধ্য করার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে যে অস্পষ্টতা রয়েছে এবং এ বিষয়ে বিচার করার ক্ষেত্রে আইসিসির যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাও স্বীকার করেছেন আদালতটির প্রধান কৌঁসুলি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, লুটপাট, অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ করেছে। জাতিসংঘ একে বর্ণনা করে আসছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।
এর আগে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতীকী বিচারের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হলেও ফাতোও বেনসৌউদাই প্রথম বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তোলার চেষ্টা করলেন। তিনি এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে এ ব্যাপারে তাঁর যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরতে পারেন। সেই শুনানিতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষ ও আগ্রহীদেরও রাখতে বলেছেন কৌঁসুলি বেনসৌউদা।
তাঁর এই অনুরোধ বিবেচনা করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য আদালতের বিচারক অ্যান্টনি কেসিয়া এমবে মিনদুয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিভাবে এই রুলের ব্যাপারে কাজ শুরু করা যায়, সে বিষয়ে এই বিচারক সিদ্ধান্ত জানাবেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।