সিরিয়া যুদ্ধ হঠাৎ নাটকীয় মোড় নিয়েছে। রণক্ষেত্রে এখন মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ভ‚পাতিত করার হুঙ্কার তুলেছে রাশিয়া। এভাবে চলছে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকির খেলা।
সিরিয়ায় সামরিক হামলার বিপদ সম্পর্কে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। দু’দিন আগেই সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সামরিক আস্তানায় হামলার হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক এ পদক্ষেপে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তার মিত্র দেশগুলোও। ইতিমধ্যে সিরিয়ায় আগ্রাসন চালানোর জন্য মন্ত্রিসভার সমর্থন আদায় করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে।
দৌমায় সন্দেহভাজন রাসায়নিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনের বিমান হামলা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে বলেও শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্র দূত ভেসেলি নেবেনজিয়া সিরিয়ায় হামলা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তের অগ্রাধিকার হচ্ছে যুদ্ধের বিপদকে প্রতিহত করা।’ সিরিয়ার পরিস্থিতিকে ‘খুবই বিপজ্জনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে নেবেনজিয়া আন্তর্জাতিক শান্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলার জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করেছেন।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নেবেনজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কোনো সম্ভাবনাকে বাদ দিচ্ছি না।’ সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর উপস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ ‘বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে’ বলেও মন্তব্য তার।
এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জেরাসিমভ সিরিয়ায় হামলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘রুশ স্থাপনা ও সেনাদল হুমকির মুখে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভ‚পাতিত করা হবে। যেসব স্থাপনা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হবে, সেগুলোও গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।’ পশ্চিমা দেশগুলোর সম্ভাব্য হামলার শঙ্কায় রাশিয়ার অনুরোধে শুক্রবারও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে সিরিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান, সরঞ্জামসহ বিমান ঘাঁটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক হামলার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ওই পদক্ষেপ নিয়েছিল। আসাদ ভবিষ্যতে যাতে আর তার নিজের জনগণের ওপর রাসায়নিক হামলা না চালান, সেই বার্তা দেয়াই ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লক্ষ্য। এক বছরের মাথায় ফের আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক হামলার অভিযোগ উঠেছে।
হোয়াইট হাউস জানায়, দৌমায় সন্দেহভাজন রাসায়নিক হামলার কি ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো যায়, তা খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। রাসায়নিক অস্ত্র নিরোধ আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপনস (ওপিসিডব্লিউ) জানিয়েছে, দৌমায় বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা তা অনুসন্ধানে তাদের বিশেষজ্ঞরা সিরিয়ায় যাচ্ছে। শনিবার থেকে ওই বিশেষজ্ঞ দল কাজ শুরু করবে।
এদিকে, সিরিয়ার হামলার পক্ষে মত দিয়েছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে জানান, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ভবিষ্যৎ ব্যবহার ঠেকাতে বাশার আল-আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তার সরকার একমত। এ বিষয়ে মিত্রদেশগুলোর যে কোনো পদক্ষেপে ভ‚মিকা রাখবে যুক্তরাজ্য। ইস্টার উপলক্ষে ছুটির কারণে যুক্তরাজ্যে সংসদ অধিবেশন এখন বন্ধ। সোমবার থেকে শুরু হবে অধিবেশন। এ ছুটির মধ্যেই সিরিয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিদের জরুরি তলব করেন তেরেসা।
তবে বিরোধী দল লেবার পার্টি ও সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন এমপি সিরিয়ায় হামলার বিষয়ে সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ‘আরও বোমা হামলার অর্থ হবে আরও মানুষ হত্যা। যুদ্ধের প্রসার মানুষের জীবন বাঁচাবে না। এটা আরও মানুষের জীবন কেড়ে নেবে। চলমান সংঘাতকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবে।’ যুদ্ধবিরোধী করবিন আরও বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। সবশেষ বিকল্প হিসেবেই শুধু হামলার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।’ ইরাক ও লিবিয়া আক্রমণের অভিজ্ঞতা স্মরণে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
২০১৩ সালেও সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাস হামলার ঘটনা ঘটে। তখন মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সিরিয়া হামলায় যোগ দিতে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সংসদে প্রস্তাব তুলেছিলেন। এমপিদের ভোটে সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। ওই অভিজ্ঞতা থেকে তেরেসা এবার পার্লামেন্টের অনুমোদন না চেয়েই হামলায় যোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।