logo
আপডেট : 14 April, 2018 02:18
বিপর্যয়ের শেষ প্রান্তে গাজা, আজ ফের বিক্ষোভ
মেইল রিপোর্ট

বিপর্যয়ের শেষ প্রান্তে গাজা, আজ ফের বিক্ষোভ

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনিকে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

গাজা উপত্যকার ইসরাইলি সীমান্তে নিজেদের বসতভিটায় ফিরে যাওয়ার অধিকারের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের তৃতীয় দফায় আজ শুক্রবার বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে।

গত ৩০ মার্চ শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ৩৩ জনকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন আরও অগণিত ফিলিস্তিনি।

প্রথম দুই শুক্রবারে গাজা উপত্যকার পাঁচটি স্থানে ঘরে ফেরার অধিকার দাবিতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যেটিকে তারা নাম দিয়েছেন 'গ্রেট মার্চ অফ রিটার্ন' বা 'ঘরে ফেরার মহান পদযাত্রা'।

প্রতিবাদকারীদের অধিকাংশই শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। স্বল্প কিছুসংখ্যককে সীমান্ত বেড়ার কাছে গিয়ে পাথর ছুড়তে দেখা গেছে। কেউ কেউ টায়ার জ্বালিয়ে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী তৈরি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।-খবর এএফপির।

প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভিযোগ, তারা সহিংসতাকে আড়াল করতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। ২০০৮ সালের পর হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ হয়েছে।

সীমান্ত বেড়ার ক্ষতি কিংবা অনুপ্রবেশ সহ্য করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। ইহুদি রাষ্ট্রটি দাবি করেছে, বিক্ষোভকারীরা বেড়া ভেঙে অনুপ্রবেশ করতে চাইছে।

ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের জবাবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বিমান ব্যাপক হামলা ও গোলাবর্ষণ করছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করে স্নাইপাররা তাজা গুলি ব্যবহার করে যাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যেটার ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বিক্ষোভ চলাকালে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ফিলিস্তিনিরা বলেন, সেনাদের জীবনের জন্য হুমকি না হলেও তারা নিরপরাধ মানুষগুলোকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করছে।

গ্রেট মার্চের আয়োজনকারীদের দাবি, এ বিক্ষোভের সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই। সবাই স্বাধীন ও স্বেচ্ছায় এতে অংশগ্রহণ করছেন।

ইসরাইল বলেছে, তারা ৩০ মার্চের বিক্ষোভে ১৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যাদের অধিকাংশ জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য।

হামাসের সশস্ত্র শাখা দাবি করেছে, প্রথম দিনের বিক্ষোভে তাদের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। যারা জনগণের পাশাপাশি থেকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

ইসলামিক জিহাদ আন্দোলন বলেছে, নিহতদের মধ্যে তাদের এক সদস্য রয়েছেন।

গত শুক্রবারে এক আলোচচিত্র সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরাইল। যখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়, তখন তিনি প্রেস লেখা সুরক্ষা জ্যাকেট পরেছিলেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুয়েতেরেস এই হতাহতের ঘটনায় একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরাইল সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে দম্ভভরে বলেছে, তাদের এই সরাসরি গুলি করার নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

অবৈধ রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগডোর লিবারম্যান রোববার বলেন, গাজা উপত্যকার ২০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে কোনো নিরপরাধ মানুষ নেই। তারা সবাই অপরাধী।

১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বসতভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তারা পূর্বপুরুষদের সেই ভিটামাটিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করছেন।

জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে তাদের এই দাবিকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কখনও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

প্রায় অর্ধকোটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী অধিকৃত পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা ও ইসরাইলের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন।

তাদের বসতবাড়িতে তারা ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করছেন। এমনকি যেসব ঘরবাড়ি থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছিল, সেগুলোর চাবি এখনও তাদের হাতে রয়েছে।

আগামী ১৫ মে পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবেন। এ সময়ের মধ্যে ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে।

জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া ফিলিস্তিনিরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

১৫ মে দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা নাকবা বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করেন। কারণ ১৯৪৮ সালের এই দিনে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

এক দশক ধরে ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকায় বিপর্যয় নেমে এসেছে।

নিরাপত্তার অজুহাতে গাজার সঙ্গে নিজের সীমান্তটুকুও বন্ধ করে দিয়েছে মিসর।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসকে ঠেকাতে গিয়ে উপত্যকাটির নিরীহ মানুষের ওপর বিভিন্ন সময় প্রতিহিংসমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

এতে সেখানের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে, ৪০ শতাংশ যুবককে বেকারত্বের কবলে পড়তে হয়েছে। তার এখন বিপর্যয়ের শেষ প্রান্তে রয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেয়ায় আমরা প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি। এখানে আমাদের খোয়ানোর কিছু নেই। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না।