রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিরিয়ায় বেসামরিক লোকজন ও সামরিক স্থাপনায় শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট, যার অধিকাংশই মাঝপথে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তবে এ হামলা প্রতিরোধে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় ছিল। রাজধানী দামেস্ক থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সিরিয়ার আল দুমায়ের সামরিক বিমানবন্দরে ১২টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তার সবকটিই ধ্বংস করে দিয়েছে। খবর আরটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও বিবিসি অনলাইনের।
ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সঙ্গে মিলে তারা সিরিয়ার তিনটি জায়গায় হামলা চালিয়েছেন। হামলার আগে রাশিয়াকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ফ্রান্সের বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধবিমান পাঠানো হয়েছে। এ অভিযানে ভূমধ্যসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র সমৃদ্ধ রণতরী ব্যবহার করা হয়েছে।
ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচির প্রধান গবেষণা কেন্দ্র ও দুটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন স্থল হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। সিরিয়া সরকারের মিত্র রাশিয়া এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়ে কেবল সিরীয় সরকারের স্থাপনায় হামলা চালনো হচ্ছে বলে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-ইয়েভস লি ড্রিয়ান দাবি করেছেন। তিনি বলেন, সিরীয় মিত্রদের ওপর কোনো আঘাত হানা হচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এই যৌথ হামলাকে স্বাগত জানিয়ে এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের ভীতিকর দৃশ্যের বিরুদ্ধে বিশ্ব আজ ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে যখন বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে এই হামলা পরিচালিত হয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান মারিয়া জাখারোভা পাশ্চাত্যের সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা করে বলেছেন, হোয়াইট হাউস বলেছে যে তারা গণমাধ্যমের তথ্য থেকে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার কথা জেনেছে। এখন যা ঘটতে যাচ্ছে, তার পরিণতি নিয়ে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমের বোঝাপড়া থাকা উচিত।
তিনি সিরিয়ার এখনকার পরিস্থিতিকে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন। তখন ইরাকের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদনের অভিযোগ আনা হয়েছিল, যা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই যৌথ হামলার নিন্দা জানিয়েছে সিরিয়া সরকারের মিত্র ইরান। দেশটি বলেছে, রাসায়নিক ব্যবহারের সঠিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই পশ্চিমা দেশগুলো হামলা চালিয়েছে। কাজেই এই হামলার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিণতির দায় বহন করতে হবে ওয়াশিংটনকে।
শনিবারের হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেন, আগের বছরের চেয়ে এই হামলা ছিল আরও মারাত্মক। এই মুহূর্তে আমাদের আর কোনো হামলার পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, আমরা এবার মাত্র একবার হামলা চালিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে তাদের শক্তিশালী বার্তা দিতে পেরেছি। পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তারা যদি ভবিষ্যতে আরও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তবে সেখানে আবারও হামলা চালানো হবে।
নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্যের চালানো যৌথ এ হামলা ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে সিরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম। একে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন হিসেবেও অভিহিত করেছে তারা। ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আসাদবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে আসা রাশিয়া হামলার পাল্টা জবাব দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে।
জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত অ্যানাটমি অ্যান্টন বলেছেন, মস্কো সতর্ক করছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতির ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে না।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তাদের বিমান বাহিনী দামেস্কের দক্ষিণে কিসওয়া এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন হামলায় ব্যবহৃত ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিন বেসামরিক নাগরিকের আহত হওয়ারও খবর দিয়েছে তারা। দামেস্কের এক অধিবাসী বলেন, সরকারি বাহিনীকে তিনি অন্তত ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী গোলা ছুড়তে দেখেছেন। সেগুলো আকাশে পাক খাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল তারা লক্ষ্যবস্তুকে অনুসরণ করছে। আমি কোনো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেখেনি, তবে কাছাকাছি এলাকায় সামান্য ধ্বংসস্তূপ দেখেছি।
গত বছর মার্কিন বাহিনী তাদের দুটো ডেস্ট্রয়ার থেকে সিরিয়ার খান শেইখুন বিমানঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, যা দেশটির সরকারি বাহিনীর ক্রিয়াশীল বিমানের অন্তত এক পঞ্চমাংশের ভয়াবহ ক্ষতি করেছিলে বলে সেসময় দাবি করেছিল পেন্টাগন।
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সিরিয়া ও তাদের মিত্রবাহিনীগুলো বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ঘৌটায় সেনা অভিযান শুরু করে। তাদের আক্রমণে বেশিরভাগ বিদ্রোহীগোষ্ঠী পিছু হটে সেখান থেকে অন্য এলাকায় চলে গেছে।
এ মাসের শুরুতে বিভিন্ন আন্তর্জতিক সংবাদমাধ্যম সিরিয়ায় উদ্ধার ও চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত কয়েকটি দাতব্য সংস্থার বরাত দিয়ে দৌমায় রাসায়নিক হামলার খবর প্রকাশ করে। বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সেখানে ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানায়, লক্ষণ দেখে বিষয়টি বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলা বলেই মনে হয়েছে।