পুলিৎজারকে বলা হয় সাংবাদিকদের অস্কার পুরস্কার। রয়টার্সের মোট সাতজন আলোকচিত্রী রোহিঙ্গাদের নানা মুহূর্তের ছবির জন্য দলগতভাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন। এ মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের মোঃ পনির হোসেন। এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে তিনি সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচাইতে সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার পেলেন।
৪০ দিন বয়সী মৃত সন্তানের অসাড় দেহটি বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন এক নারী। বারবার তার মুখে চুমু খাচ্ছেন আর বিলাপ করে কাঁদছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে নৌকায় করে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকাডুবিতে সন্তানের মৃত্যু হয়। হৃদয়বিদারক এই মুহূর্তটির ছবি তুলেন মোহাম্মদ পনির হোসেন।
তিনি তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ঐদিন সাথে আরেক ফটোগ্রাফারকে নিয়ে শাহপরীর দ্বিপে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। তাদের সিএনজি চালক খবর দিলো একটা নৌকাডুবি হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার হেটে সেখানে পৌঁছান।
পনির হোসেন বলেন, "ছবিগুলো যখন তুলি তখন আমি আমার আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। কিন্তু হোটেলে ফিরে এডিট করতে গিয়ে ল্যাপটপে যখন ছবিগুলোকে দেখলাম তখন আর আমার পক্ষে আবেগ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মানুষের কষ্ট কতরকম এটা রোহিঙ্গা ইস্যু যদি কাভার না করতাম তাহলে সম্ভবত আমি বিষয়টা বুঝতাম না।"
পনির হোসেন বলেন, "মানুষ যখন কোন দুর্দশায় পরে বা কোন সংকট তৈরি হয় তখনই আমাদের মতো ফটোসাংবাদিকদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়। যেমন রোগী না থাকলে ডাক্তারের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ নেই, আমাদের জন্যেও বিষয়টা একই রকম।"
তিনি আরো বলেন, "এই ছবিগুলো তুলতে গিয়ে আমি নিজে যতই কাদার মধ্যে হাটি, রোদে পুড়ি বা পানিতে সাতার কাটি, দিন শেষে যখন একটা ভালো ছবি হয় তখন আর সেই ক্লান্তির কথা মনে থাকে না।"