হোয়াটসঅ্যাপ প্রধান জ্যান কৌম জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফরমটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, প্রযুক্তির জগতের বাইরের জিনিস উপভোগ করার জন্য তিনি কিছুটা সময় নিচ্ছেন।
তবে সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায় ভিন্ন কথা। কোমের সাথে হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্র্যাটেজি নিয়ে প্যারেন্ট কোম্পানি ফেসবুকের দ্বন্দ্ব হওয়াই পদত্যাগের কারণ বলে উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমটি।
কোম অভিযোগ করেন, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে নেয়া হচ্ছে এবং হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপশনের মান দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে।
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে কোম বলেন, প্রায় এক দশক আগে ব্রায়ানের সঙ্গে মিলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেরা কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ছিল তাদের এ যাত্রা। এখান থেকে তাঁর সরে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন।
কোম আরও বলেন, ‘আগের চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ টিম এখন অনেক শক্তিশালী এবং এটি দারুণ কাজ করে যাবে। তবে আমি হোয়াটসঅ্যাপের বাইরে থেকে এর জন্য শুভকামনা করে যাব।’
বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ব্রায়ান অ্যাক্টন ও ইউক্রেনের অভিবাসী কউম ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করে ২০১৪ সালে তা ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে ফেসবুকের কাছে বিক্রি করেন। হোয়াটসঅ্যাপ তৈরির আগে ইয়াহুতে কাজ করেন ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জ্যান কউম।
এতদিন হোয়াটসঅ্যাপের হয়ে তথ্য সুরক্ষা ও কাজের স্বাধীনতা ফেসবুকের কাছ থেকে পাচ্ছিলেন তাঁরা। ফেসবুকের কাছে বিক্রি হওয়ার আগে তথ্য সুরক্ষার শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন।
গত নভেম্বর মাসে অ্যাক্টন হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে যান এবং এরপর থেকে ফেসবুকের নানা সমালোচনা করে থাকেন। গত মার্চ মাসে তিনি হ্যাশট্যাগ ডিলিটফেসবুক নামের একটি কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। ফেসবুক থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁসের ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই কর্মসূচি শুরু করেন, যা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ওই সময় থেকেই ফেসবুক স্বীকার করে, তাদের ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।
হোয়াটসঅ্যাপকে বাণিজ্যিকীকরণের বিপক্ষে ছিলেন কোম ও অ্যাক্টন। অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না।
কোম সরে দাঁড়ানোর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। কোমের পোস্টে জাকারবার্গ মন্তব্য করে বলেছেন, এনক্রিপশন নিয়ে কোম তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন, তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। কেন্দ্রীয় সিস্টেমের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে এ নীতি বজায় থাকবে।
বর্তমানে ১৫০ কোটির বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মেসেজিং সেবা এটি। তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের ধারণা, হোয়াটসঅ্যাপ সহপ্রতিষ্ঠাতার এ পদত্যাগ ফেসবুকের জন্য আরও একটি বড় ধাক্কা।