পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে মে দিবস পালন করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১ মে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে বেসরকারিভাবে পালিত হয়।
তবে যে দেশের শ্রমিকদের রক্তের বিনিময়ে এই দিনটি অর্জিত হলো সেই যুক্তরাষ্ট্রে ও তাদের প্রতিবেশী দেশ কানাডায় দিবসটি সরকারিভাবে পালন করা হয় না।
সোভিয়েত রাষ্ট্র, চীন, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সেসব দেশে এমনকি এ উপলক্ষে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে।
ভারতে মে দিবসের সূচনা বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। ১৯২৩ সালের ১ মে, মাদ্রাজের সমুদ্রসৈকতে শ্রমিক নেতা সিঙ্গারাভেলু চেটিয়ারের সভাপতিত্বে ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয়েছিল। সেই সভা থেকেই এই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল
এ ছাড়া ভারতের মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে বিশেষ মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়। আসামে এই দিনের জন্য বিশেষ সংগীত রয়েছে। তারা সেটি গেয়ে গেয়ে দিনটি পালন করেন।
তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রাণকেন্দ্র কলকাতায় ১৯২৭ সালে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়। দেশ বিভাগের পূর্বে নারায়ণগঞ্জে মে দিবস পালিত হয় ১৯৪ ৮ সালে।
১৯৫৩ সালে পল্টনে মে দিবসের জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। তবে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশের শ্রমিকরা প্রথমবারের মতো বিপুল উৎসাহ নিয়ে মে দিবস পালন করে।
আদমজীতে ৩০ হাজার শ্রমিক লাল পতাকা নিয়ে সভা সমাবেশ মিছিলে অংশ নেয়। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির পূর্ব পর্যন্ত মে দিবস বেশ বড় আকারে সমাবেশের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হতে থাকে।
আমেরিকা ও কানাডাতে সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা। হে মার্কেটের হত্যাকান্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যে কোনো আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
সোভিয়েত ইউনিয়নে জাঁকজমকপূর্ণভাবে মে দিবস পালিত হয়। তারা সেদিন আগুন জ্বালিয়ে শিকাগো শহরে নিহতদের স্মরণ করে।
চীন ও কিউবা রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি উদযাপন করে। এদিন তারা সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। বের করে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
বলিভিয়ায় ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন শ্রমিকদের সম্মানে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ব্রাজিলে শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটিতে ছুটি থাকে। এদিন ঐতিহ্যগতভাবে অধিকাংশ পেশাদার বিভাগের নূন্যতম বেতনকাঠামো পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ফলে শ্রমিকদের দিনটি আনন্দের।
নেপালে সরকারি ছুটি থাকে। এদিন নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বড় শ্রমিক সমাবেশ ও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পর্যটক ছাড়া অন্যান্য যানবাহনও বন্ধ থাকে।
জাপানে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে দিনটি পালিত হয়। এদিন জাপানের রাজধানী টোকিওতে শ্রমিকরা পদযাত্রা ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
জার্মানিতে জাতীয় ছুটি হিসেবে দিনটি পালিত হয়। এদিন বার্লিনে শ্রমিকদের বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন মেলার আয়োজন করে থাকে।
হাঙ্গেরিতে সরকারিভাবে দিবসটি পালন করা হয়। এদিন তারা বিশেষ নাচ পরিবেশন করে দিনটিকে আলাদা মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে।
ইউরোপজুড়েই মে দিবসে থাকে সরকারি ছুটি। তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দিনটি পালন করে। এ জন্য বিশেষ নাচ-গানের ব্যবস্থাও রয়েছে। বড় বড় শহরে অনুষ্ঠিত হয় শ্রমিক সমাবেশ। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এ দিনটি উপলক্ষে বিশেষ বোনাস দেয়ার রীতিও চালু রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় মে দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে মে ট্রি বা গাছ। একটি বৃক্ষ আকৃতির উঁচু বস্তুকে ঘিরে তারা নাচ-গানের আয়োজন করে।
১৮৮৬ সালে ১ মে এই শ্রমিক আন্দোলনের চ‚ড়ান্ত পরিণতি হয়। সেদিন দৈনিক আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে।
ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা সাধারণত মে দিবস নামে অভিহিত প্রতি বছর ১ মে তারিখে সারা বিশ্বে উদযাপিত হয়।