logo
আপডেট : 10 May, 2018 01:26
মহাকাশ বিজয়ের পথে বাংলাদেশ
ঢাকা অফিস

মহাকাশ বিজয়ের পথে বাংলাদেশ

ফ্যালকন-৯ এ চড়ে যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ স্থানীয় সময় মধ্যরাতে কক্ষপথের উদ্দেশে উড়তে পারে। ইতোমধ্যে তার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় ১০ মে বিকেল ৪টা ১২ মিনিট থেকে ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ এর উৎক্ষেপণ হবে।

বাংলাদেশ সময় তখন শুক্রবার রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিট।

এ উপলক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো শহরে পৌঁছেছে।

ফ্লোরিডায় স্পেস এক্সের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবে এ প্রতিনিধি দলটি। এছাড়া সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আগামী ১০ মে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হবে ইনশাআল্লাহ। সকলের দোয়া কামনা করি।

এদিকে এই উৎক্ষেপণ দেখার জন্য আগ্রহীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে কেনেডি স্পেস সেন্টার। সংস্থাটি বলছে, আগ্রহীরা লঞ্চ প্যাড থেকে প্রায় ৩ দশমিক ৯ মাইল দূরে অ্যাপোলো বা স্যাটার্ন ভি সেন্টার এবং প্রায় সাড়ে ৭ মাইল দূরে কেনেডি স্পেস সেন্টারের মূল ভিজিটর কমপ্লেক্স থেকে এই উৎক্ষেপণ দেখার সুযোগ পাবেন।

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন  (বিটিভি) দেশের সব মানুষকে এই উৎক্ষেপণ দেখারও সুযোগ করে দিচ্ছে।

বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, আইপিটিভির মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর উৎক্ষেপণ দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) প্রযুক্তিগত সহায়তায় বিটিভি অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে ফেসবুকসহ বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে উৎক্ষেপণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

স্পেস-এক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এই স্যাটেলাইটকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করবে। এতে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্যালকনের ব্লক-৫ সংস্করণ।

স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য প্রথমে ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হলেও হারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়।

এরপর ৪ মে উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়। কিন্তু এপ্রিলের শেষে এক অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, উৎক্ষেপণ পিছিয়ে গেছে অন্তত ৭ মে পর্যন্ত। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় সেই তারিখ আবার পিছিয়ে এখন ১০ মে সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ জানান, ১০ মে সম্ভাব্য তারিখ ধরে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে আবহাওয়া এবং কারিগরি বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, এটি উৎক্ষেপণের পর মাস দুয়েক পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফলতা পাওয়ার পর তা ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাবে।

ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের কাছ থেকে কেনা হলেও এটি পরিচালিত হবে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে। এর জন্য মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দলকে প্রশিক্ষিত করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে মূল তত্ত্বাবধানে প্রথম তিন বছর সহায়তা করবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি।

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্যাটেলাইট প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট নির্ভর বাণিজ্য সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ সরকার। আশা করা হচ্ছে এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের।