logo
আপডেট : 20 May, 2018 23:48
তুমব্রু সীমান্তে ফের উত্তেজনা, আতঙ্কে রোহিঙ্গারা
সুজাউদ্দিন রুবেল, তুমব্রু সীমান্ত থেকে

তুমব্রু সীমান্তে ফের উত্তেজনা, আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রু জিরো পয়েন্টে ফের উত্তেজনা বিরাজ করছে। নোম্যানসল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকাতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি। 

এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। এ অবস্থায়, সীমান্তে টহল কার্যক্রম জোরদার করেছে বিজিবি। 

গত বছরের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রু শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয় ৬ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা। এরপর থেকে শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরাতে সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ, গুলিবর্ষণ, বাংকার নির্মাণ ও অস্ত্র উচিয়ে হুমকি দেয় মিয়ানমার।

সর্বশেষ মার্চের প্রথম সপ্তাহেও বার বার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তে মাইকিং, গুলিবর্ষণ ও সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে রোহিঙ্গাদের সরাতে চেষ্টা চালায় মিয়ানমার। এরপর বাংলাদেশ-মিয়ানমার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

কিন্তু ফের রোববার সকাল থেকে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ ও মাইকিং করে শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরে যেতে ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।

শূন্যরেখায় অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ নিউইয়র্ক মেইলকে বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী শূন্যরেখা থেকে দূরে সরে যেতে আমাদেরকে বার বার হুমকি দিচ্ছে। গত দুই মাস সৈন্য সমাবেশ ও মাইকিং বন্ধ ছিল। কিন্তু ফের আবারও তারা আমাদেরকে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দিচ্ছে।

ইসমাঈল জোহার নামে আরেকজন রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা খুবই আতঙ্কিত। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখন অবধি আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রাতে ঢিল ও মদ্য পান করে গালিগালাজ করছে’।

শূণ্যরেখার ক্যাম্পের ব্লক মাঝি মো. আরিফ নিউইয়র্ক মেইলকে বলেন, ‘মিয়ানমার মাইকিং করে জানিয়েছে, তুমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জায়গাটি মিয়ানমারের মংডু জেলার অন্তর্ভূক্ত। রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলায় এখন দেশটির আইন-শৃংখলা বাহিনী সাধারণ মানুষের চলাচলের উপর কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। তাই মিয়ানমার অভ্যন্তরের শূণ্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার হুমকী দিচ্ছে।’

রোহিঙ্গা নেতা আরিফ আরও বলেন, মাইকিং করে শূণ্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়ার হুমকী দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে মিয়ানমার বাহিনী টহল জোরদার করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি ৩নং ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ নিউইয়র্ক মেইলকে বলেন, ‘সৈন্যদের মহড়ায় আমরা একটুও বিচলিত নই। আমাদের কথা হল, মিয়ানমার বার বার আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে গুলিবর্ষণ, শূণ্যরেখায় টহল, সৈন্য সমাবেশ করছে। তাই এদের একটা শাস্তি দেয়া উচিত, বোঝানো উচিত আমরাও নরম নই।’

বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়ন অধিনায় লে. কর্ণেল মনঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সরে যেতে সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির কোনারপাড়া সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে বিজিপি মাইকিং শুরু করে। গাছের উপর মাইক বেঁধে ঘন্টা-দেড়ক পর পর বিজিপি এ মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশনা প্রচার করছে।

তিনি বলেন, মাইকিং ছাড়াও কোনারপাড়া সীমান্তের শূণ্যরেখার বিপরীতে মিয়ানমার অভ্যন্তরে বিজিপি সৈন্যদের টহল জোরদার করতে দেখা গেছে। তাই বিজিবিও সীমান্তজুড়ে নজরদারী বাড়ানোর পাশাপাশি টহল জোরদার করেছে বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তা মনঞ্জুরুল হাসান খান।

বর্তমানে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় সাড়ে ৪ হাজার এবং কক্সবাজারের উখিয়ার ও টেকনাফ অবস্থান করছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। 

 

নিউইয়র্ক মেইল/কক্সবাজার/২০ মে ২০১৮/এসআর/এইচএম