ভোটের বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি দেশের ৪৭তম এবং আওয়ামী লীগের সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের পঞ্চম এবং শেষ বাজেট।
নতুন এ বাজেটের আকার প্রায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৭ জুন) দুপুর দেড় টার দিকে অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। দুপুর সাড়ে বারোটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী অনুমতি নিয়ে প্রথমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পেশ করেন। এরপর ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন।
এরআগে দুপুর সাড়ে বারোটার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ১২তম বাজেট এটি। এর মধ্য দিয়ে টানা দশবার বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্য ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তীত, আড়াই লাখ টাকা। কর্পোরেট কর কমছে ২.৫ শতাংশ।
বাজেটে দাম বাড়বে:
আমদানি করা চাল, মধু, কফি, গ্রিন টি, চকলেট,অনলাইন ভিত্তিক পণ্য, ব্র্যান্ডের পোশাক, সিগারেট-বিড়ি, স্যানিটারি সিরামিক পন্য, বাল্ব, প্লাস্টিক ব্যাগ, ১১০০ ফুট পর্যন্ত ফ্লাটের দাম, আসবাবপত্র পলিথিন, এনার্জি ড্রিংস, প্রসাধনী সামগ্রীর।
এছাড়া দাম কমবে:
দেশে তৈরি গুঁড়ো দুধ মোবাইল ফোন ও মোটর সাইকেলের, কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ও হাইব্রিড গাড়ি টায়ার টিউব, মৎস, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাদ্যপণ্য।
নতুন এ বাজেটে কৃষি জমিসহ সব ধরনের ভূমি রেজিস্ট্রেশনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ডে কেয়ার হোম, প্রতিবন্ধিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের ওপর কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এবার বাজেটে নতুন করে কোনও করারোপ করা হচ্ছে না। এ বছরের এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে সার্বজনীন পেনশন (সবার জন্য পেনশন) পদ্ধতির একটি রূপরেখা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া অনেক বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি (সরকারি বেতনের অংশ) করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে বর্তমান সরকার। তাই বাজেটে নতুন করে আরও এক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। এ জন্য বাড়তি পাঁচশ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকছে। এবারের বাজেটে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে নজর দেওয়া হচ্ছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বাড়িঘরসহ অবকাঠামো তৈরিতে বাজেটে ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে।
নতুন বাজেটে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ও বিদ্যমান সকল সুবিধার পাশাপাশি বাড়তি হিসেবে যোগ হবে বৈশাখী এবং বিজয় দিবস ভাতা। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে নতুন বাজেটে। বর্তমানে ৬৮ লাখ গরিব মানুষ বয়স্ক, বিধবাসহ নানা ধরনের মাসিক ভাতা পান। নির্বাচন সামনে রেখে ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে। নতুন এই বাজেটে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে ইসিআর মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নতুন বাজেটে এতো সব উন্নয়ন ও জনবান্ধব কর্মকান্ডে অনেকটা উচ্ছসিত সরকার। ক্ষমতাসীনদের মতে এই বাজেট হবে গরিব-দু:খীদের উন্নয়ন তথা সারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বাজেট।