মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয় নেতা কিম জং উনের মধ্যকার শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে হিসেব কষছেন কূটনীতিবিদ, বিশ্লেষক, রাষ্ট্র ও সরকার-প্রধানরা।
ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যকার এই ঐতিহাসিক বৈঠকের প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও বাস্তবতা নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন বিশ্বের বাঘা-বাঘা গণমাধ্যমগুলোও।
ট্রাম্প-কিমের আলো কেড়ে নেয়া মুহুর্ত
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এই বৈঠকের সুফল বাতাস বইতে পারে। হোয়াইট হাউস এটিকে শান্তি-প্রচেষ্টায় ট্রাম্পের অবদান হিসেবেই তুলে ধরবে। এছাড়া সিঙ্গাপুরের বৈঠকের ব্যস্ততার ভিড়ে ট্রাম্প প্রচারণা শিবিরে রুশ সংযোগ বিষয়ক তদন্ত কর্মকর্তা রবার্ট মুলার খুব একটা সুযোগ করে উঠতে পারবেন না।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে লাইমলাইটে ছিলেন কিম জং উন। আতিথেয়তা থেকে সম্মান কিংবা মর্যাদা কোন ক্ষেত্রেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে ঘাটতি ছিল না। ভেসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসায়। এককথায় সেলিব্রেটির তকমা জুটে গেছে কিমের সঙ্গে।
ট্রাম্প কি দিলেন, কি নিলেন?
সম্মেলনে দুই নেতার মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আবহ, পারস্পরিক উষ্ণতা নজর কেড়েছে গণমাধ্যমে। যদি এই বৈঠকের প্রক্রিয়া কোরিয় উপদ্বীপে পরমাণু উত্তেজনা বন্ধ করতে পারে তবে এটি ইতিহাসের সেরা একটি কূটনৈতিক অর্জন হয়ে থাকবে। এবং ট্রাম্পও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার যথাযোগ্য বাস্তবায়নের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়ে যেতে পারেন। তবে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক ম্যাক্স বোট বলেন, ‘কিছু সময় অতিবাহিত ছাড়া কোন কিছু নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কারণ ট্রাম্পের নিজের অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার অনেক উদাহরণ আছে।’
এছাড়া যৌথ ঘোষণায় উত্তর কোরিয়া সম্পূর্ণ পরীক্ষিত ও স্থায়ী ভাবে পরমাণু অস্ত্র বর্জন করবে এমন কোন কথা বলা হয় নি। সম্মেলনে উত্তর কোরিয়া কোরিয় উপদ্বীপকে পরমাণুনিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার কথা বলেছিল মাত্র, এখানে কোন নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় নি।
‘পরমাণুনিরস্ত্রীকরণ’ ব্যাখ্যা
দুইদেশ ‘পরমাণুনিরস্ত্রীকরণ’ এর কথা বললেও এর ব্যাখ্যা কিংবা স্পষ্টতা কোন পক্ষই ব্যক্ত করে নি। যুক্তরাষ্ট্র ব্যাখ্যা দিয়েছে, পিয়ংইয়ংকে অবশ্যই পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান হল, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণুঅস্ত্রের সুরক্ষা সরিয়ে নেয়া। ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’র নির্বাহী প্রধান দারিয়েল কিমবেল বলেন, অপ্রত্যাশিতভাবে, দুই পক্ষই শান্তি এবং কোরিয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণরুপে নিরস্ত্রীকরণের কোন ব্যাখ্যা দেয় নি।
ট্রাম্প বলেছেন কিম তাকে জানিয়েছেন যে তিনি প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র ইঞ্জিন পরিক্ষাগার ধ্বংস করেছেন কিন্তু এই পদক্ষেপের তাৎপর্য এবং এটি কিভাবে যাচাই করা হবে তা স্পষ্ট নয়।
কোরিয় উপদ্বীপে মার্কিন সৈন্য
সম্মেলনে সিউল থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার এবং দক্ষিন কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধের বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিকে কিমের জন্য অপ্রত্যাশিত উপহার হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ট্রাম্পের এই প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। তবে এটিকে স্বাগত জানিয়েছে চীন।
‘একনায়কতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকার’
এই বৈঠকে ট্রাম্পকে কিমের প্রশংসায় মেতে থাকতে দেখা গিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের ওপর জারি করা বিধি-নিষেধ, গণমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি আরোপ ও মার্কিন নাগরিকদের বন্দির প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এই প্রশংসা ভালভাবে নেয়নি মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।
তবে বিশেষ মিত্র কানাডার সঙ্গে তুমুল উত্তেজনার এই সময়ে ট্রাম্পের মুখে কিম, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশংসাকে যুক্তরাষ্ট্রের চিরচরিত পররাষ্ট্রনীতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ভবিষ্যত বলবে কথা?
সিঙ্গাপুরের সম্মেলনে, ট্রাম্প বলেছেন উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র বর্জন করতে প্রস্তুত। অন্যদিকে কিম বেছে নিয়েছেন কৌশলগত পছন্দ। পিয়ংইয়ং পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন ও তৈরির কার্যক্রম বন্ধ করেছে কি না তার কোন প্রমাণ নেই। আলোচনা প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করবে কি করবে না তা পিয়ংইয়ংয়ের ওপরই নির্ভর করছে।