logo
আপডেট : 14 June, 2018 20:41
বাংলাদেশে নির্বাচন: বিএনপির রাজনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশে নির্বাচন: বিএনপির রাজনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: সবকিছু ঠিক থাকলে আর মাত্র কয়েক মাস পরই নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে নির্বাচনের ডামাঢোল এখনও বাজেনি। কবে বাজবে তারও নিশ্চয়তা নেই। এমনকি অতীতের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর সংশয়। এর মুল কারণ প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি।

নির্বাচনের আগে সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক দল বরাবরই উৎফুল্লের মধ্যে থাকে। কারন ক্ষমতার প্রভাবে প্রশাসনিক সব সুযোগ-সুবিধা তারা পায়। ঠিক তার উল্টো চিত্র থাকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির দলে। নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরোধীতার মুল জায়গাটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। বিএনপি বরাবরই বলে আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন চায়। তানাহলে অংশ নেবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তাদের এ দাবি বারবারই প্রত্যাখান করেছে, এখনও করছে। তাদের বক্তব্য নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ি। অর্থাৎ সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচনের সময় একটা সহায়ক সরকার থাকবে। তারা নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করবে। ওই সরকারের হাতে সুপ্রীম কোন ক্ষমতা থাকবে না। নির্বাচনের এই মুল দাবি থেকে এখন অনেকটাই সরে এসেছে বিএনপি। তারা সরকারের অনড় মনোভাবের কথা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। প্রথমদিকে বিষয়টি নিয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা করেছিলো বিএনপি। আপাতত সেই উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। এখন দলটি মূলত ব্যস্ত তাদের চেয়ারপারসনের মুক্তি নিয়ে। বিষয়টি আইনী জটিলতায় থাকায় খুব বেশি এগোতে পারছে না ইস্যুটি নিয়ে। এর আগে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করতে চেয়েছিলো দলটি। লন্ডন থেকে দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন। কিন্তু সরকার ও আওয়ামী লীগের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায। অর্থাৎ একেকটি ইস্যু বিএনপির সামনে আসে আর আওয়ামী লীগের তোপে তা কর্পুরের মতো উড়ে যায়। কোন ইস্যুকেই বিএনপি এখন পর্যন্ত একমাত্র ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। যদিও দলটি বিশ্বাস করে তাদের রয়েছে বিশাল জনসমর্থন। কিন্তু সেটাকে এ পর্যন্ত কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অতীতে বারবার বলা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি আসছে। গত কয়েকটি ঈদের আগে বলা হয়েছে, ঈদের পর কঠোর আন্দোলন। কিন্তু কয়েকটি ঈদ পার হলেও সেই আন্দোলনের দেখা আর মেলেনি। অব্যশ বিএনপি নেতারা এখন বলছেন,সময়মতো সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। এ নিয়ে অবশ্য কথা বলতে ছাড়েননি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি এখনও মাঝে মাঝে বলেন, বিএনপি প্রায় বলে আন্দোলনের কথা। কিন্তু সেটা তারা করে দেখাতে পারেনি। কারণ জনগন তাদের সঙ্গে নেই। উল্টো নেতারা কর্মসূচি ডেকে নিজেরা এসি রুমে বসে আয়েশ করেন। মুলত বিএনপির আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণেই এ ধরনের বক্তব্য শুনতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। এসব প্রেক্ষিতে এখন প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির রাজনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে। সহজ হিসাব করলে দেখা যায়, দলটির চেয়ারপারসন আছেন কারাগারে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন প্রবাসি। এই দুই জনের অনুপস্থিতিতে আসলে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতৃত্ব টালমাটাল। প্রায় শত মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে বিএনপির মহাসচিব রয়েছেন নেতৃত্ব পর্যায়ে। তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আছেন বেশ কয়েকজন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাদেরও প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। কারাগারে থাকায় আপাতত রাজনীতি নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শলাপরামর্শের সুযোগ নেই দলটির নেতাদের । তাই আপাতত তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়েই চলছে বিএনপি। দলটির বেশ কয়েক নেতার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলে জানা গেছে, আন্দোরনের জন্য জনসাধারণকে সংগঠিত করতে পারছেন না তারা। কারণ শীর্ষ নেতাদের মধ্যেই রয়েছে নানা গ্রুপিং। এটা অনেক আগে থেকেই বলে জানান তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েক নেতা জানান, নেতৃত্ব পর্যায়ে সংগঠিত পরিস্থিতি না থাকায় দলটির নেতৃত্ব টালমাটাল। কারন অদৃশ্য দুই ভাবে বিভক্ত বিএনপি। একটা গ্রুপ আছেন যারা খালেদা জিয়াকে অনুসরন করেন। তার নেতৃত্বকে ধারণ করেন। আরেকটি পক্ষ রয়েছে তারেক রহমানের অনুসারি। বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা বিএনপির চেয়ারপারসনকে অনুসসরন করছেন। আবার তরুন নেতারা তারেক রহমানকে। কর্মসূচি নিয়েও রয়েছে দলটির মধ্যে নানা বিরোধ। তারেক রহামনের নির্দেশে একেকটি ইস্যু নিয়ে নিয়মিত প্রেস কনফারেন্স করছেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে তাকে বিএনপি অফিসের আবাসিক নেতা হিসেবে সমালোচনা করা হচ্ছে। রিজভীর বেশিরভাগ প্রেস কনফারেন্স সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবহিত থাকেন না বলে জানান বিএনপির কয়েক নেতা। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার দলীয় ফোরামে বিতর্কও হয়েছে। সবমিলিয়ে দলীয় অন্ত:কলহের কারণে সংগঠিত আন্দোলনে যেতে পারছে না বিএনপি। এ কারনে তাদের রাজনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলে জানান বিএনপির নেতারা। গত কয়েক বছর বড় ধরনের কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। নিজেদের রাজনৈতিক দৈন্যদশার সঙ্গে সরকারের কঠোর বিরোধীতায় তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আবার স্বত:স্ফুর্তভাবে দলের নেতা-কর্মীরা রাস্তায়ও নামতে পারেনি। জেলর-জুলুমের ভয়ে তারা এ পর্যন্ত পিছুটান দিয়ে রয়েছে।

অতীতে বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সরাসরি অংশ নিয়েছে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। নিষিদ্ধ ঘোষনার প্রক্রিয়ায় থাকায় দলটি এখন প্রকাশ্যে আর কোন কর্মসূচি পালন করতে পারে না। এমনকি তাদের দলের নেতা-কমীদের তালিকা ধরে দমিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ ও সরকার। তাই রাজনৈতিকভাবে সম্পুর্ন ব্যাকফুটে রয়েছে জামায়াত শিবির। নির্বাচনের আগে তাদেও মাথাচাড়া দিযে ওঠা আপাতত দুষ্কর। এ কারনে বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আরও বেশি। কারণ জামায়াত-শিবির তাদের আন্দোলনে যোগ দিলে তা বেগবান হয় না হলে হয় না। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রচারনা চালানো হয়েছে। তাদের বক্তব্য আন্দোলনে জামায়াত বিহীন বিএনপি নখদন্তহীন বাঘ ছাড়া কিছুই নয়। এদিকে সম্প্রতি প্রতিবেশি দেশ ভারত সফর করেছে আওয়াম লীগের প্রভাবশালি কয়েক নেতা। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সফরে যাওয়ার আগে প্রেস কনফারেন্স করে তা প্রকাশ করা হয়। আবার সফর শেষেও প্রেস কনফারেন্স করে জানানো হয়। তাই বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি জলঘোলা করতে পারেনি বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী পক্ষ। অপরদিকে তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির কয়েক সিনিয়র নেতা সম্প্রতি ভারত সফর শেষ করেছেন। তারা ভারতের বিজেপিসহ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। কিন্তু বাংলাদেশের গনমাধ্যমকে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানাননি বিএনপির নেতারা। এতে সন্দেহ আর সমালোচনার নানা ডালপালা ছড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতেই পারে। তবে এসব জানানো প্রয়োজন। তানাহলে নানা ধরনের বিতর্ক জন্ম নেয়। আর ভারত সফর নিয়ে বিএনপি সেই ভুলটাই করেছে। এসব কারনে আজ বিএনপির রাজনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।